পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૯૯૭ মহিলাগণ দরবারগুহে সিংহাসনের সম্মুখে উপস্থিত হন । প্রথমতঃ পাটরাণী সমাটকে প্রণাম করিয়া একটা “রুষ্টয়ে” উপগর দেন, তার পর দ্বিতীয় রাণী এবং ক্রমে অন্যান্ত রাজকুমারীগণ একে একে সমাটকে প্ৰণাম করিয়া একটা করিয়া “রক্টয়ে” সমাটকে উপহার দিয়া থাকেন । এই প্রকারে অভিবাদনকার্য সম্পন্ন হইলে পর, বৃদ্ধরাণী, সমাট ও অন্যান্য মহিলাগণ সহ নাট্যাভিনয় দর্শনার্থ গমন করিয়া থাকেন। রাজবংশের রাজকুমারগণের ও অন্যান্স উচ্চপদস্থ ব্যক্তিগণের নাট্যাভিনয় দেখিবার জন্য এক স্বতন্ত্র কক্ষ আছে । রাজপুরীর মহিলাগণের নাট্যাভিনয় দেখিবার জন্যও স্বতন্ত্র বন্দোবস্ত আছে । পুরুষগণ মহিলাগণকে তথা হইতে দেখিতে পায় না। সম্রাট ও বুদ্ধারাণী আসন গ্রহণ করিলে প্রধান অভিনেতাগণ ভূমিষ্ঠ কষ্টয়া প্রণাম করিয়া শুভকামনা জ্ঞাপন পূৰ্ব্বক স্বরচিত পদ্যের আবৃত্তি করিয়া থাকে। এবং সমাট দশহাজার বৎসর যাবৎ জীবিত থাকিবেন এমন আকাঙ্ক্ষা জ্ঞাপন করিয়া থাকে । যে সকল পদ্য রচনা অভিনেতাগণ পাঠ করিয়া থাকে তাতার একটীর ভাবার্থ છારું – “হে মহান স্বৰ্গরাজ্যের নন্দন ! আপনার পূর্বপরুষগণের পুণ্যফলে ও বিচক্ষণতায় এই সামাজ্য সুশাসিত হইয়া, উহা অবশেষে আপনার মহৎ হস্তে আসিয়া পড়িয়াছে। “আপনার পূৰ্ব্বপুরুষগণের পুণ্যফলে আমরা প্রজাসাধারণ মহা সুখে আছি । “আমাদিগের শাসনকর্তা আমাদিগের মঙ্গলের জন্য নানা সদ্যপায় অবলম্বন করিয়া থাকেন। আমরা রাজ্যের আভাস্তরিক ও বাহ্যিক মঙ্গল প্রার্থনা করিতেছি ।” অভিনেতাগণ প্রাচীন কীৰ্ত্তি ও গৌরবের অভিনয় করিয়া থাকে। বড় বড় উৎসবে দ্রিবারাত্রি সমভাবে অভিনয় চলিতে থাকে। অভিনয়কালে বেলা দশ ঘটিকার সময় নাট্যাভিনয়ের স্থানেষ্ট সকলের জলযোগের আয়োজন হষ্টয়৷ থাকে। জন্মোৎসব উপলক্ষে যত খাদ্য পাত্র তথায় উপস্থিত হয় তাহা লাল কাগজ মণ্ডিত এবং তাহার কোনটীর উপর লিখিত থাকে “দীর্ঘজীবন লাভ হউক,” কোনটীর উপর “শাস্তি,” কোনটীর উপর “সুখ,” কোনটীর উপর “সৌভাগ্য,” প্রবাসী । ইত্যাদি । রাজপুরীতে যে সকল সুরা ব্যবহৃত হইয়া থাকে, তাঙ্গ বিলাতী সুরা নহে, চীনদেশী সুরা। তাহা অতি সুগন্ধযুক্ত ও সুস্বাদ্য। তাহার কোন কোন সুরার নাম "গোলাব পুষ্পস্থ শিশিরবিন্দু,” কোনটীর নাম “বুদ্ধ-হস্তনিঃস্তত অমৃতবিন্দু," ইত্যাদি। * উপস্থিত ভদ্রমগুলিকে আর এক প্রকার পানীয় পান করিতে দেওয়া হইয়া থাকে। তাহা বাদাম ঘুটিয়া দুগ্ধের সঙ্গে মিশিত করিয়া প্রস্তুত হইয়া থাকে। মাঞ্চুগণের নিকট এই পানীয় অতি উপাদেয় বলিয়া গণ্য হইয়া থাকে, আমাদিগের দেশেও পঞ্জাব অঞ্চলে এই প্রকার বাদাম ঘুটিয়া পান করিবার প্রথা আছে । আগন্তুক ভদ্রমগুলি বাদাম ঘোটা গরম দুগ্ধপাত্র মুখে তুলিবার কালে সমাটের শুভকামনা জ্ঞাপন করেন (drinking health ) অথবা অন্ত ভাষায় “স্বাস্থ্য পান” করিয়া থাকেন । এষ্ট প্রকার জলযোগ ও আহারাদি সম্পন্ন হইলে গোজাগণ জোড়ায় জোড়ায় এক একথানি পরাত আনিতে থাকে। ঐ সকল পরাতে নানা প্রকারের উপহারদ্রব্য সকল রক্ষিত হইয়া থাকে। সমাট নিজের জন্মদিনে যেমন বহুমূল্য উপহার পাইয়া থাকেন, তাদৃশ সেই দিনে বহুপ্রকার উপহার আগন্তুক ভদ্রলোকগণকে দিয়া থাকেন। রাজপুরীস্থ কারিকরগণ-প্রস্তুত মৃন্ময় পুষ্পধার (Vases), ব্ৰঞ্জধাতুনিৰ্ম্মিত ধূপতি, কনফুসিয়ান ধৰ্ম্মশাস্ত্রোক্ত নানা বচনযুক্ত পট সকল এবং জেডপ্রস্তর নিৰ্ম্মিত “কুইয়ে” ইত্যাদি উল্লেখ যোগ্য। পদমর্যাদানুসারে এই উপহারের কোন তারতম্য লক্ষিত হয় না। প্রত্যেককেই এই জিনিষ এক এক প্রস্ত প্রদত্ত হইয়া থাকে। ধৰ্ম্মকথামৃক্ত পটগুলি পীতবর্ণের পটবশ্বাস্থাদিত আধারে রক্ষিত থাকে । অপরাহ্ল চার ঘটিকার সময় অভিনেতাগণ জঁাকজমকশালী পরিচ্ছদ পরিধান করিয়া আসিয়া সমাটের স্তুতিগান করিতে থাকে, সেই গানে সম্রাটকে “স্বর্গের সন্তান,” “পৃথিবীতে বুদ্ধদেবের প্রতিনিধি,” ইত্যাদি আখ্যায় বর্ণনা করা হইয়া থাকে। ঐ স্তব পাঠের পর এক মিছিল বাহির হয়। মিছিলে পৌরাণিক ধরণের নানা জীবজন্তুর মূৰ্ত্তি, বুদ্ধমূৰ্ত্তি, নাগমূৰ্ব, পরীর মূৰ্ত্তি ইত্যাদি যথাক্রমে বাহির হইয়া থাকে। মিছিলের সঙ্গে প্রকাণ্ড প্রকাগু কৃত্রিম এই সকল উপহারের মধ্যে