পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ن6t6tb জ্যোতিষ ও বীজগণিত প্রসিদ্ধ ছিল। পঞ্জিকা সংস্কার করিয়া যশস্বী হইয়াছিলেন । ওমারকে অনেকে চাৰ্ব্বাকপন্থী মনে করিত। চাৰ্ব্বাকের মত—— খাও দাও মজা কর, কাহারো না ধীরে ধীর, মরা দেহ ছাই হয়ে ফিরে নাহি আসে আর । ওমারের বহু শ্লোক এই ধরণের হইলেও, তিনি কখন নিজে উচ্চ জ্বল ছিলেন না। পারস্তের শুফি সম্প্রদায় সমাজঘৃণ্য দ্রব্য ও ব্যবহার প্রভৃতির অন্তরালে আপনাদের ভক্তি ও গুচিভ গোপন রাখিয়া চলিতেন ; তাহারা ঈশ্বরপ্রেমকে মস্তের সহিত, ঈশ্বরসাযুজ্য সুন্দরী সহবাসের সহিত একাকার করিয়া গিয়াছেন। যাহারা স্থলদশী তাহারা শুফিধৰ্ম্মকে অনাচারী মনে করে । সেইরূপ ওমারও আপনাকে অনাচারের অন্তরালে রাখিয়া সাধনা করিতেন । কথিত আছে যে শুফিগণও ওমারের বিরোধী ছিলেন । ওমার নিতান্ত স্বাধীন চিন্তাশীল ছিলেন, কাজেই কখন কোন সম্প্রদায়েরই সহানুভূতি লাভ করেন নাই। এই নিন্দিত কবিটির প্রাণের মাধুর্য্য আমরা অনুসন্ধান করিয়া দেখিব। প্রথমত আমরা তাহাকে ঘোর অদৃষ্টবাদীরূপে দেখিতে পাই । তিনি বলিতেছেন--- সঞ্চল অঙ্গুলি লেখে, লিখে চলে যায়, ধৰ্ম্ম, বুদ্ধি, বত তব কি সাধা নড়ায় : অনড় অচল মেই অদৃষ্ঠের লেখা শত অশ্রু মুছিবে না এতটুকু রেখা । নাহি কি কোথাও কোন এমন দেবতা মুছে দেয় অদৃষ্টের গোপন বীরত, কিংবা সে গে। অদৃষ্টেরে বাধা করি বলে নুতন ললাটলিপি লিখায় কৌশলে । কখন আবার তাহাকে সৌন্দর্য্যের উপাসক, প্রকৃতি শক্তির বিস্মিত পুজক রূপে দেখিতে পাই। মধ্যাহ্ন মাৰ্ত্তণ্ডের চগুমুৰ্ত্তি ও নিশীথ রজনীর ঘুমন্ত চাদের নীরব হাসি তাহাকে তুল্যরূপে আনন্দ দিতেছে, তিনি সে আনন্দে আত্মহারা। তার পরে তিনি আপনার পরিণত বুদ্ধিতে বুঝিয়াছেন যে তিনি স্বরূপ ছাড়িয়া আভাসে, সত্য ছাড়িয়া ছায়ায় মগ্ন হইয়াছেন। তখন তিনি বলিতেছেন— যৌবনের অহমিকা না হইতে গত ভাবিতাম জীবনের সমস্তা সে যত সকলি বুঝেছি। এবে বৃদ্ধ হয়ে বুঝি জীবন বিগত, হায় শুধু মিছামিছি। কখন কখন তাহাকে বিশ্বদেব দেখিতে দেখিতে নাস্তিক তিনি তৎকালে প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ । রূপেও দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু তাহা ক্ষণিক—ঐ ভাব হৃদয়ের জটিলতা অসমাধানের সংশয় মাত্র, একটি মহাপ্রাণের সত্য-আবিষ্কারের সংশয় মাত্র –হৃদয়ের দৃঢ় প্রত্যয় নহে। একটি সর্জীব চিত্তের সংশয় নানা সময়ে নানা আকার ধারণ করিয়া প্রকাশ পাইয়াছে। র্তাহার বহু কবিতা বহিত: এমন উচ্ছৃঙ্খলতাম, এমন অধাৰ্ম্মিকতাময় য়ে তাহা একজন সমাজদ্রোহী দুরাচারের রচনা বলিয়া মনে হয় ; কিন্তু সেই ছদ্মভাষার ভিতরে, সেই উদ্ভূখলতার অন্তরালে ভাবুক ব্যক্তি গৃঢ় ভগবৎ-প্রেম, শুচিত প্রচ্ছন্ন দেখিতে পাইবেন। Mysticism বা প্রচ্ছন্নতা শুফি ধৰ্ম্মের এক অঙ্গ; যদিও ওমার খায়াম গুফিদিগকেও গালি ও বিদ্রুপ হানিতে কুষ্ঠা বোধ করেন নাই, তথাপি তাহাকে একজন ভক্তপ্রেমপ্রাণ শুফি বলিয়া মনে হয়, তাহার বহু কবিতা প্রমোদগুহে ও মন্দিরে তুল্যরূপে পাঠ করা যায়। উচ্ছৃঙ্খলতার ছদ্ম আবরণের অন্তরালে যে ব্যক্তি খাটি মামুষটির সন্ধান করিয়া লইতে পারেন, তিনি বুঝিবেন যে র্তাহার মদিরা সামান্ত নহে, তাহা ঐশ প্রেমের মত্ততা—জ্ঞানের পাত্রে পীত হইতেছে। এই ঐশ প্রেমে তিনি মত্ত, সংজ্ঞাহীন, নিন্দাযশ-উদাসীন মাতাল। যাহারা শুধু বাহির দেখিয়া বিচার করে, মানুষটির অস্তরের পরিচয় পাইতে চাহে না, তাহারা ওমারকে বৰ্ব্বর, ইন্দ্রিয়দাস, চাৰ্ব্বাকপন্থী মনে করিবে সন্দেহ কি ? যখন পার্থিব প্রেম উন্নত হইয়া ঐশ প্রেমের অভিমুখী হয়, তখন উভয়ের মধ্যে আর পার্থক্য থাকে না । আমি যখন রবিবাবুর এই গানটি প্রথম শুনি,— "তুমি দাড়াও আমার আঁখির আগে যেন তোমার দৃষ্টি হৃদয়ে লাগে 水 sk sk আমার পরাণ পলকে পলকে চোখে চোখে তব দরশ মাগে ? দাড়াও যেখানে বিরহী এ হিয়া তোমারি লাগিয়া একেল জাগে ?” তখন মনে হইয়াছিল ইহা কোনো বিরহী প্রেমিকার ব্যাকুল গাথা । কিন্তু পরে জানিলাম ইহা কবির ব্রহ্মবিরহের ব্যাকুলতা ! আবার— “এস এস ফিরে এস, বঁধু হে ফিরে এস। আমার ক্ষুধিত তৃষিত, তাপিত চিত, নাথ হে ফিরে এস।”