পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૪૧૭ মস্জেদ রচনার উপকরণ সংগৃহীত করিয়াছিলেন। সে কথা সমস্ত মুসলমান লিখিত ইতিহাসেই স্পষ্টক্ষিয়ে লিখিত আছে। উপকরণ সংগ্রহ করা বিশেষ আয়াসসাধা ব্যাপার বলিয়া উল্লিখিত হইতে পারে না,—যে কেত লৌহদণ্ডাঘাতে তাহা সম্পন্ন করিতে সমর্থ হইয়াছিল। কিন্তু সেই উপকরণ লইয়া মসজেদ নিৰ্ম্মাণ করিতে রাজের সহায়তা আবশ্যক। তাহার হিন্দু না মুসলমান ? গৌড়ীয় ধ্বংসাবশেষের মধ্যে এখনও যে সকল গঠনপ্রতিভার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহাতে হিন্দু-গঠন-প্রতিভাই সুস্পষ্ট অভিব্যক্ত হইয়া রহিয়াছে। দেখিবামাত্র মনে হয়,—মন্দিরগুলি যেন সহসা মসজেদরূপে যথাসম্ভব আরুতি পরিবর্তন করিয়াছে ! “বড় দরগার” আটালিকার মধ্যে “লক্ষ্মণসেনী দালান” এইরূপে যে কোঁতহলের উদ্রেক করিয়া আসিতেছে, তাহা অার একটি কারণে আরও কৌতুহলপূর্ণ হইয়া রহিয়াছে। এখানে একখানি তালপত্রেব পুরাতন পুস্তক রক্ষিত হইয়া আসিতেছে। নিরক্ষর মুসলমানগণ তাহাকে শাহ জালালের পুস্তক বলিয়া অৰ্চনা করিয়া থাকে,—সহসা কোন হিন্দুকে তাহা স্পশ করিতেও অনুমতি প্রদান করে না। এই পুস্তক কিরূপে এখানে আসিল, কি জন্যই বা শাহ জালালের দ্রবাজাতের সঙ্গে পরম সমাদরে মুরক্ষিত হইতেছে, তাহার কোনও তথ্যাবিষ্কারের সম্ভাবনা নাই । ইলাহিবক্স ইহাকে একখানি "নাগরী” পুস্তক বলিয়া ব্যক্ত করিয়া গিয়াছেন । পুস্তকথানি “নাগরী” নহে, “সংস্কৃত", ইহা সেকালের প্রচলিত অক্ষরে লিখিত। বহু পুরাতন বলিয়৷ তালপত্রগুলি পরস্পরের সহিত এরূপ দৃঢ়সংবদ্ধ হইয়া গিয়াছে যে, খুলিতে গেলে ছিড়িয়া যায়। বিভারিজ সাহেব লিখিয়া গিয়াছেন,—এই গ্রন্থ “হলাযুদ্ধ-বিরচিত” বলিয়া স্বগীয় উমেশচন্দ্র বটব্যাল মহাশয় ব্যক্ত করিয়া গিয়াছেন। একটি শ্লোকের পাঠোদ্ধার সাধিত হইয়াছে। তাহাতে একজন পাল নরপালের পরলোক গমনের কথা লিখিত আছে। এই গ্ৰন্থ একখানি ঐতিহাসিক গ্রন্থ বলিয়া অনুমিত হইয়া আসিতেছে। ইহা কি মহা ধৰ্ম্মাধিকার মহামহোপাধ্যায় হলায়ুধের স্বহস্তলিখিত বঙ্গদেশের পুরাতন ঐতিহাসিক কাহিনী ? শাহ জালাল । শাহ জালালের সম্পূর্ণ নাম “মকৃঢ়ম শাহ জালালুদ্দীন প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ । .مه**"عه *** "مه.sه "* তত্ত্বরিজি”। তিনি একজন ইতিহাস বিখ্যাত সাধু পুরুষ। তাঙ্গর কথা বল্পগ্রন্থে উল্লিখিত হইয়া, অদ্যাপি মুসলমানসমাজে সুপরিচিত হইয়া রহিয়াছে। তাহার জীবনকাহিনী বিবিধ অলৌকিক কাহিনীর আধার। র্তাহার গুরুভক্তি এতদূর প্রবল ছিল যে, তাহার বর্ষীয়ান গুরু মক্কাযাত্রা করিলে, তিনি একটি চুল্লী মস্তকে বহন করিয়া রন্ধন করিতে করিতে অনুগমন করিতেন –বুদ্ধ পথশ্রান্ত হইবামাত্র, তাহাকে খাদ্য দানে সঞ্জীবিত করিয়া তুলিতেন। “বড় দরগার” অভ্যন্তরে এখনও একটি “তন্দুর” দেখিতে পাওয়া যায়। নিরক্ষর মুসলমান বলিয়া থাকে,--শাহ জালাল সেই সুবৃহৎ “তন্দুরকেই” মস্তকে বহন করিয়া গুরুশুশ্রুষা করিতেন ! ইলাহি বক্স ভক্ত মুসলমানের ন্যায় ইহার উল্লেখ করিয়া, সত্যনিষ্ঠ ঐতিহাসিকের দ্যায় লিখিয়া গিয়াছেন,—“ঈশ্বর জানেন, এই কাহিনী কতদূর সত্য ।” এক সময়ে সমুদ্রযাত্রা প্রভাবে বঙ্গদেশের নাম পৃথিবীর নানা দিগেদশে সুপরিচিত হইয়া উঠিয়াছিল। তজ্জন্ত মুসল মানগণ আরবসাগরে ও পারস্তোপসাগরে পোতারোহণ করিয়া বঙ্গদেশে উপনীত হইতেন। এক্টরূপে বক্তিয়ার খিলিজির বহুপূৰ্ব্ব হইতেই বঙ্গদেশে মুসলমানদিগের গতিবিধি প্রবৰ্ত্তিত হইয়াছিল। তখন তাহারা বণিক,— বাণিজ্য লোভে এ দেশে পদার্পণ করিয়া দেশীয় রাজশক্তির অনুগত হইয়াই সৰ্ব্বত্র বিচরণ করিতেন। এ দেশে মুসলমানশাসন প্রবর্তিত হইবার পরে ক্রমে ক্রমে অনেকে এ দেশে আসিয়া বাস করিতে আরম্ভ করেন। শাহ জালাল কোন সময়ে, কোন স্থানে, দেহত্যাগ করিয়াছিলেন, তদবিষয়ে মতভেদের অভাব নাই। কিন্তু তিনি যে সত্য সত্যই পাণ্ডুয়ার “বড় দরগায়” বাস করিতেন, তাহাতে মতভেদ দেখিতে পাওয়া যায় না। ইলাহি বক্স, লিখিয়া গিয়াছেন,— “পারস্যদেশের অন্তর্গত তবৃরিজ নগরে শাহ জালালের জন্ম হয়। তিনি ভারতবর্ষে উপনীত হইয়া কিছুদিন দিল্লীনগরীতেও বাস করিয়াছিলেন। কিন্তু তথায় তাহার শক্রদল তাহাকে লোকসমাজে অপদস্থ করিবার জন্য তাহার বিরুদ্ধে একটি কুৎসিৎ অভিযোগের স্বষ্টি করিয়াছিল। বিচারকালে অভিযোগকারিণী নিজমুখে সকল কথা ব্যক্ত করায়, সাধুপুরুষের চরিত্রগৌরব রক্ষা প্রাপ্ত হইয়াছিল। ইহাতে