পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১শ সংখ্য _বৈদিক অধ্যায়-বাদ । পারে। শরীরের মধ্যে যদি কোন বস্তুর বিশেষত্ব থাকে তবে তাহ প্রাণবায়ু। যতক্ষণ মানব জীবিত থাকে ততক্ষণই নিঃশ্বাস প্রশ্বাস এবং এই নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের অভাবেই মানবের মৃত্যু ঘটিয়া থাকে। সুতরাং প্রাণই যে জীবনী শক্তি এ বিশ্বাস হওয়া অস্বাভাবিক নহে। ঋগ্বেদে জীবনী শক্তি অর্থেও আত্মা (অর্থাৎ প্রাণ) শব্দের ব্যবঙ্গর পাওয়া যায়। একস্থলে আছে রোগীর বল বিধান করিবার জন্য আমি ওষধি হস্তে ধারণ করিলাম। হিংস্র প্রাণী যেমন বিনষ্ট হয় তেমনি রোগের আত্মা (যক্ষ্মস্ত আত্মা) বিনষ্ট হউক ১০৯৭৷১১। বর্তমান যুগেও আমরা ঈশ্বরকে প্রণের প্রাণ বলিয়া থাকি। কিন্তু প্রাণ শব্দের মৌলিক অর্থ বায়ু। মানব প্রথমে জড়ায় ভাষা ও ভাব লষ্টয়াই ধৰ্ম্মজগতে প্রবেশ করে। জ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জড়ায় ভাষার জড়ীয় ভাব অল্পে অল্পে বিদূরিত হইতে থাকে। কালে ভাব এতই উন্নত হয় যে মানুষ আর তপন বুঝিতে পারে না যে উচ্চভাবপ্রকাশক ভাষা এক সময়ে জড়ায় ভাব প্রকাশ করিত। আত্মা সম্বন্ধেও ইহাই ঘটিয়াছে। সময়ে আত্মার অর্থ ছিল বায়ু, প্রাণ-বায়ু ; এখন ইহার অর্থ চৈতন্ত্য। আত্মা শব্দের ইতিহাস পর্যালোচনা করিলে ইহাই বুঝা যায় যে ইঙ্গ কেবল মানবেষ্ট প্রসজা হষ্টতে পারে যিনি নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের কায্য করেন তাঙ্গরষ্ট আত্মা, কিম্বা তিনিই আত্মা অর্থাৎ আত্মা – জীবাত্মা । ঋগ্বেদে ‘ব্ৰহ্ম’ শব্দের অর্থ মন্ত্র অথবা স্তুতি । ব্রহ্ম শব্দের বহুবচনও (ব্রহ্মণি ব্রহ্মভিঃ ব্রহ্মভ্য: ইত্যাদি) বহুবার ব্যবঙ্গত হইয়াছে। র্যাহারা মন্ত্র রচনা করেন তাহাদের নাম ‘ব্ৰহ্মকৃৎ । বেদের যে অংশে মন্ত্রতত্ত্ব ব্যাখ্যাত হইয়াছে সে অংশের নাম ‘ব্রাহ্মণ’ এবং র্যাহারা মন্ত্র রচনা বা উচ্চারণ করেন র্তাহাদিগকেও "ব্রাহ্মণ’ বলা হয়। ঋষিগণ হৃদয়ের আবেগে দেবগণকে আহবান করিতেন অর্থাৎ মন্ত্র উচ্চারণ করিতেন। ইহাদিগের বিশ্বাস ছিল যে এই প্রার্থনা শুনিয়া দেবগণ র্তাহাদিগের অভিলাষ পূর্ণ করিতেন। কালক্রমে এই বিশ্বাস প্রবল হইতে লাগিল যে মন্ত্রের অসাধারণ ক্ষমতা । মন্ত্রের ক্ষমতায় দেবগণও বৰ্দ্ধিত হষ্টয়া থাকেন (৩১৮,৩৫২ ইত্যাদি)। দেবগণের ইচ্ছা থাকুক বা না تعي، থাকুক মন্ত্র উচ্চারণ করিলে তাহাদিগকে উপাসকের নিকট উপস্থিত হইতেই হইবে। মীমাংসকগণ ইহা অপেক্ষাও গুরুতর কথা বলিয়া থাকেন। তাহাদিগের মতে দেব দেবীর কোন অস্তিত্ব নাই। তবে যে যজ্ঞে মন্ত্র উচ্চারণ করিলে আশ্চর্য্য ফল পাওয়া যায় তাহার একমাত্র কারণ মন্ত্রের ক্ষমতা,—মন্ত্রবলে অসম্ভব সম্ভব হইয়া থাকে। বেদান্তভাষ্যে শঙ্করাচার্য্যকেও স্বীকার করিতে হইয়াছে যে বৈদিক শব্দ প্রভাবেই দেবতাদি স্পষ্ট হয় (বৈদিকাৎ শব্দাৎ দেবাদিকম্ জগৎ প্রভবতি ১।৩।২৮)। পূৰ্ব্বে বিশ্বাস করা হইত দেবগণই কালক্রমে এই বিশ্বাস হইল যে মন্ত্রই দেবগণকে স্ষ্টি করিয়াছে। সুতরাং ব্ৰহ্ম অপেক্ষা অর্থাৎ মন্ত্র অপেক্ষ শ্রেষ্ঠতর বস্তু আর কি হইতে পারে ? এখন আমরা বুঝিতে পারিতেছি কি প্রকারে ব্ৰহ্ম’ শব্দের অর্থ স্থষ্টি স্থিতি প্রলয় কর্তা তইল । এখন প্রশ্ন এই স্তষ্টকর্তা কে ? যদি বল ব্রহ্মই হুষ্টিকর্তৃ তাহা হইলে কোন উত্তরই দেওয়া হইল না । কারণ "ব্রহ্ম স্ষ্টিকৰ্ত্তা’ বলাও যাহা সৃষ্টিকৰ্ত্তাই সৃষ্টিকৰ্ত্তা’ বলাও ঠিক তাহাই । ক – ক, খ=খ, রাম= রাম ইত্যাদি বাক্যে নূতন কোন কথাই বলা হয় না। এখন যেমন অনেক লোকে জিজ্ঞাসা করে “ব্রহ্ম কি আমাকে কি তাহ দেখাইয়া দিতে পার ?”-প্রাচীন কালেও তেমনি অনেক লোক এই প্রকার প্রশ্ন করিত। অনেক ঋষির মনেও এই ধারণা ছিল যে ব্ৰহ্ম বহু বস্তুর মধ্যে একটা বস্তু; এই পরিদৃশুমান জগতের মধ্যে একটী বিশেষ বস্তু এই জগৎ সৃষ্টি করিয়াছে। উপনিষদের যুগে আকাশ, বায়ু চক্ষু, শ্রোত্র, বাকু ইত্যাদি বিভিন্ন বস্তুকে ব্ৰহ্ম বিশেষণে বিশেষিত করা হইয়াছিল। কিন্তু কোন মীমাংসাই চরম সিদ্ধান্ত বলিয়া বিবেচিত হয় নাই । অবশেষে যাজ্ঞবল্ক্য, উদালক, অজাতশত্রু ইত্যাদি মহাপুরুষের মতই বেদান্তের সিদ্ধান্ত বলিয়া গৃহীত হইয়াছে। ইষ্টাদিগের সিদ্ধান্ত এই ‘আত্মাই ব্ৰহ্ম’ অর্থাৎ আত্মাই জগতের মূলাধার, আত্মাই স্বষ্টি স্থিতি প্রলয় কর্তা। পূৰ্ব্বে প্রমাণিত হইয়াছে যে আত্মা এবং মানবাত্মা একই বস্তু। সুতরাং সিদ্ধান্ত এই,—মানবাত্মাই ব্রহ্ম। g কৌষীতকি উপনিষদ । কৌষীতকি ঋষি বলেন-“প্রাণই ব্ৰহ্ম”। মন এই প্রাণ জগতের স্রষ্ট । (సి)