পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

থাকিবারও কারণ,—যথেষ্ট পাঠশালা নাই। সরকার হইতে যে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়, তাহ সমুদ্রে শিশিরবিন্দু। অর্থের অভাবেই,--শিক্ষকের অভাব,পুস্তকের অভাব,ছাত্রের অভাব। ফলতঃ, সরকারের মন্তব্যলিপি সত্ত্বেও, অনুসন্ধানসমিতি প্রভৃতির ইচ্ছা সত্ত্বেও,—প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষতি করিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও কালেজগুলাই পরিপুষ্ট হইতে লাগিল । লর্ড হালিফ্যাক্সের বিজ্ঞাপিত কাৰ্য্য-তালিকা অনুসারে,— ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দে,—কলিকাতা, মাদ্রাজ, ও বোম্বাই এই তিন প্রধান নগরে, ১৮৪২ খৃষ্টাব্দে লাহোরে, ১৮৮৭ খৃষ্টাব্দে এলাহাবাদে, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এবং এক্ষণে আলীগড়ের মুসলমান কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদবীতে উন্নীত হইবার জন্ত প্রার্থনা করিতেছে। এই লাহোরের বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া, অবশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ধরণে শিক্ষা দেওয়া হয় না। কেবল পরীক্ষা করা, ও পদবী বিতরণ করাই উহাদের কার্য্য। লণ্ডন-বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শে উহারা গঠিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিত সংযুক্ত কালেজ-সমূহে শিক্ষা দেওয়া হয়। ইহার মধ্যে কতকগুলি কালেজ সরকারের স্থাপিত ; কতকগুলি কালেজ হিন্দুদের, কতকগুলি মুসলমানদের, আর কতকগুলি প্রটেষ্টাণ্ট ও ক্যাথলিক খৃষ্টান মিশনারিদের স্থাপিত। কিন্তু এই সকল কলেজে সরকার অর্থ সাহায্য করিয়া থাকেন। সরকার নিজের কলেজে ধৰ্ম্মসম্বন্ধে সম্পূর্ণ ঔদাসীন্ত অবলম্বন করেন, এবং সরকারের আশ্রিত ও সাহায্য প্রদত্ত কালেজ সমুহেও এই নিয়ম প্রতিপালিত হয়। ইহার মধ্যে একটা আশ্চৰ্য্য এই দেখা যায় ;–বোম্বাই ও কলিকাতায় জেসুইটু-পাদ্রির তাহাদের বিদ্যালয়ের জন্ত, সরকার হইতে অর্থসাহায্য ও সেই সঙ্গে ধৰ্ম্মশিক্ষা সম্বন্ধে ঔদাসীন্তের নিয়মটিও গ্রহণ করিয়াছেন; পক্ষান্তরে, কতকগুলি হিন্দু ও মুসলমান কালেজ, ইহার কোনটাই গ্রহণ করে নাই। প্রবেশিক পরীক্ষা দিবার পর, হিন্দু ছাত্রদিগের সম্মুখে কালেজের দ্বার উদঘাটিত হয়। দুইটা ভাষা জানা চাইই-চাই—প্রথম মুখ্য ভাষা ইংরাজি—এবং দ্বিতীয় গৌণ ভাষা, সংস্কৃত, পার্সি, ল্যাটিন, গ্রীক্ কিম্বা ফরাসী। এই সকল ভাষা, শিক্ষার্থীর ইচ্ছাধীন। তাছাড়া, যুরোপের ইতিহাস, ভূগোল प्रिवड। ss বােমাই - ۰۰ - ۰۰۰ - ۰ - ۰ ه های مه= - مه বিজ্ঞানও কতকটা শিখিতে হয়। ল্যাটিন, গ্রীক, ফরাসী-৮ সংস্কৃতের সহিত এক শ্রেণী ভুক্ত - এ ব্যবস্থাটা কেমন বল দেখি ? দুই বৎসরের শেষে, শিক্ষার্থীকে আর একটা পরীক্ষা দিতে হয়, এবং আরও দুই বৎসর পরে বি-এ পরীক্ষা দিতে হয়—(ইহা আমাদেয় Baccalauréat—পরীক্ষার মতো। তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় হইতে, আইন, চিকিৎসা, এঞ্জিনিয়ারিং এই সমস্ত পরীক্ষা সংক্রান্ত উপাধি বিতরিত হয়। Master of Arts—এই উচ্চ পরীক্ষার জন্ত প্রস্তুত হইবার ধৈর্য্য ও সাহস অতি অল্প লোকেরই থাকে। Baines র্তাহার ১৮৯১এর আদমসুমারি বিবরণে বলেন যে, ১৮৮৬-৯১ এই কয়েক বৎসরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় হইতে ৪৮৮৫ বি-এ উপাধি এবং ৩৪৭ এম-এ উপাধি বিতরিত হইয়াছে। তিনি বলেন, লোকসংখ্যার তুলনায় এই সংখ্যা বিন্দুবৎ নগণ্য। তাহার পর যদি দেখা যায়, পরীক্ষেত্তীর্ণ ছাত্রের অধিকাংশই ব্রাহ্মণ, তাহা হইলে ইহাই কি প্রতিপন্ন হয় না যে বিলাতী শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশুই ব্যর্থ হইয়াছে ? বিদ্যাশিক্ষা পূৰ্ব্বেকার মতোই বর্ণ বিশেষেরই একচেটিয়া হইয়া রহিল। অধিকাংশ হিন্দুই সভ্যতাদায়িনী শিক্ষার শুভ ফল, ভোগ করিতে পারিল না। প্রাথমিক শিক্ষার দ্যায় মাধ্যমিক শিক্ষাও সম্পূর্ণরূপে নিষ্ফল হইয়াছে। তাহার কারণ আমি পূৰ্ব্বেষ্ট নির্দেশ করিয়াছি। প্রথমেই এমন একটা ভাষা শিখিতে হয় যাহা শিক্ষার্থীর নিকট সম্পূর্ণরূপে অপরিচিত, যাহা তাহার প্রকৃতি-বিরুদ্ধ, যাহা আয়ত্ত করিবার জন্য, আর সমস্ত বিষয় অপেক্ষ অধিক আয়াস স্বীকার করিতে হয় । আমি পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, এই ইংরাজি শিক্ষা হইতে প্রধানতঃ ব্রাহ্মণেরাই উপকৃত হইয়াছে। শুধু তাহা নহে, হিন্দুজাতির বাহিরে যে সকল জাতি আছে—যাহারা সংখ্যায় বড় কম নহে, সেই মুসলমান জাতি,—যাহারা বুদ্ধিতে বড় কম নহে। সেই পার্সিজাতি-ইহারাও ইংরাজিশিক্ষা হইতে লাভবান হইয়াছে, বোম্বাই নগর যাহাদের উপনিবেশ —যাহারা খুব ধনী ও জ্ঞানী, সেই পার্সিজাতির এই একটা অভিমান আছে যে তাহদের মধ্যে একজনও অনক্ষর নাই—দরিদ্রও নাই। বোম্বায়ের কলেজগুলির যে এরূপ