পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশেষ বিবেচনা পূর্বক যুরোপের নিকট হইতে গ্রহণ করিয়াছে ; জাপানে, সাহিত্য ও দর্শন সম্বন্ধে যেরূপ শিক্ষু দেওয়া হয়, সে সম্বন্ধে, অনেক কথা বলা যাইতে পারে ; কিন্তু বিজ্ঞান-শিক্ষা, ও পরীক্ষাগার সম্বন্ধে তাহদের উদ্যম যারপর নাই প্রশংসনীয় । ইংরাজ সরকার, কতকগুলি বিশেষ শিল্প ও বিশেষ ব্যবসায়ের জন্য কতকগুলি বিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছেন— ইহাদের নাম “এঞ্জিনিয়ারিং স্কুন্ত্ৰ”। কলিকাতায় বিদ্যালয়টি আমি দেখিয়াছি। যে অধ্যাপক আমাকে লইয়া সমস্ত দেখাইলেন, তিনি ছাত্রদিগের খুবই প্রশংসা করিলেন; উহার খুব নিপুণ ; “এই দেখ, এই কুঁদিবার যন্ত্রাদি উহার স্বহস্তে প্রস্তুত করিয়াছে।” তিনি আরও বলিলেন ;---“উহাদের মস্তিষ্ক খুব ভাল।” কিন্তু যখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, উহার কি ভরসায় এইসব কাজ শিখিতেছে, উহাদের ভবিষ্যৎ লাভের সম্ভাবনা কিরূপ, তখন তিনি নিরুৎসাহব্যঞ্জক একটা অঙ্গভঙ্গী করিয়া আমাকে বলিলেন ;–—“উহাদের লাভ খুবই কম”। উহাদিগকে মাসিক ৩০৪০ টাকা বেতনের ছোটখাট কাজ দেওয়া হয়। আমি জানি, ইংরাজেরা এই ছুতো করিয়া আক্ষেপ প্রকাশ করেন যে, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল হইতে বিশেষ কোন ཝོ་ཙཱ།. হয় নাই, যেহেতু হাতের কাজে “নেটিভ”দের দুরতিক্রমণীয় বিতৃষ্ণা ! একথা বলিবার যথেষ্ট কারণ আছে । সরকারী পুর্তবিভাগে মোটামোটা বেতনের সমস্ত কৰ্ম্ম ইংরাজদিগের জন্ত সযত্বে রক্ষিত ; র্তাহারা মনে করেন, এই ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের ছাত্ৰগণ ভবিষ্যতে র্তাহাদের প্রতিযোগী হইলেও ইষ্টতে পারে, সেই জন্য উহাদিগকে নিরুৎসাহিত করেন, উহাদিগকে সরাইয়া রাখেন। এইরূপ পদ্ধতি অবলম্বন করিলে, উহাদের মধ্য হইতে, শুধু কতকগুলি নিকৃষ্ট পদবীর মিস্ত্রি ও চলনসই ইঞ্জিনিয়ার পাওয়া যাইবে তাহাতে আশ্চৰ্য্য কি ? ১৯০১ খ্ৰীষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে যখন ব্যবসায়িক শিল্পশিক্ষার অমুকুলে ঘোরতর যুদ্ধ চলিতেছিল, সেই সময়ে আমি ভারতে উপস্থিত ছিলাম। তখন এই সমস্তাটি সম্বন্ধে প্রতি দিন সংবাদপত্রাদিতে প্রবন্ধ বাহির হইতে লাগিল, কংগ্রেসের ইহা একটী আলোচ্য বিষয় হইল, মুনিসিপ্যাল-সভা হইতে যে অভিনন্দন পত্রাদি পঠিত হইত তাহাতে এই বিষয়ের উল্লেখ থাকিত, প্রত্যুত্তরে কর্তৃপক্ষের লোকেরাও এই সম্বন্ধে কিছু বলিতেন। কিন্তু এই উপলক্ষে, সংবাদপত্র-সম্পাদক ও প্রকাশু-বক্তাদিগের সহিত বড়লাটের একটু মন-কষাকষি হয়। বড়লাট, মাদ্রাজ-মু্যনিসিপালিটির সম্মান সম্ভাষণের প্রত্যুত্তবে, ব্যবসায়িকী শিল্পশিক্ষা সম্বন্ধে এই কথা বলিয়াছিলেন যে, “হিন্দু-রসনার উপর উহার একটা অপূৰ্ব্ব মোহিনী শক্তি আছে” ... উপমার কথাটা ছাড়িয়া দেও ; সেই সঙ্গে তিনি একথাও বলিয়াছিলেন যে, সরকার "গুরু গম্ভীর ভাবে” এই বিষয়ে মনোযোগী হইবেন। এই গুরু গম্ভীর ভাবের’ মনোযোগ, কিংবা গুরুতর গম্ভীর ভাবেব’ মনোযোগ, কিংবা যারপরনাই গুরুতম গম্ভীর ভাবের মনেযোগের’ অর্থটা কি ?--অর্থ এষ্ট যে এই সমস্তাটিকে দস্তুরমত একটা অনুসন্ধান-সমিতির হস্তে সমর্পণ করা হইবে। লর্ড কৰ্জন একজন সাম্রাজ্যনৈতিক। তাহার উপরেও একটা জিনিসের “মোহিনী শক্তি” আছে;--উহাতিববং অধিকারের ! ইঙ্গভারতীয় শিক্ষা যে শুধু পাণ্ডিতিক শিক্ষা, ফঁকা শিক্ষা, তাহার প্রমাণ, এখানে কোন ব্যবসায়িক বিদ্যালয় কিংবা শ্রমশিল্পের বিদ্যালয় নাই। আমি পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি রীতিমত বিজ্ঞান-শিক্ষা এখানে আদেী হয় না। ভারতে একটি মাত্র ব্যবসায়িক-শিল্পবিদ্যালয় দেখিতে পাওয়া যায়-- সে শুধু বোম্বায়ে। যে আির্ট স্কুলে’ অর্থাৎ ললিতকলার বিদ্যালয়ে ইংরাজের দেশীয় লোকদিগকে শিক্ষা দেন, তাহাকে আমি এক্ট শ্রেণীর মধ্যে পরিগণিত করি না । আর্ট-স্কুলে, ছাত্রদিগকে বিলাতী আদর্শ-সমুহের নকল করিতে শেখান হয় মাত্র। ডাক্তার উকিল ও কেরাণী তৈয়াবা করিবার জন্তই বিশ্ববিদ্যালয়ে বেণিয়া ও কারিগরের সন্তানদিগকে গ্রহণ করা হয়। ডাক্তার উকীল প্রভৃতির দ্বারা, স্বাধীন জীবিকার পথ আচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছে। একথা সত্য ধ্যানপরায়ণ হিন্দু, আস্তিন গুটীইয়া হাতের কাজে হাত লাগাইতে হেমন রাজি নহে ; আবার বিশ্ববিদ্যালয়ও উৎসাহ দিয়া হিন্দুর এই সব কুসংস্কারকে আরও দৃঢ় করিয়া তুলিতেছে। ভারতবর্ষে অনেক দিন । হইতে এই সংস্কার চলিয়া আসিতেছে যে, হাতের কাজ ও অজ্ঞতা এই দুইটা জিনিস একসঙ্গে যায় ; নিজ অধিকার-স্বত্রেই ব্রাহ্মণ জ্ঞানের অধিকারী ও কারিগর অজ্ঞানের অধিকারী।