পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোর । } % বরদাসুন্দরী কহিলেন “তুমি কি সুচরিতার বিয়ে দেবে না না কি ?” পরেশ বাবু তাহার স্বাভাবিক শান্ত গম্ভীর ভাবে কিছুক্ষণ পাকা দাড়িতে হাত লাইলেন-- তার পরে মৃদুস্বরে কহিলেন-- “পাত্র কোথায় ?” বরদাসুন্দরী কহিলেন, “কেন, পামুবাবুর সঙ্গে ওর বিবাহের কথা ত ঠিক হয়েই আছে--অন্তত আমরা ত মনে মনে তাই জানি—সুচরিতাও জানে।” পরেশ কহিলেন “পানু বাবুকে রাধারাণীর ঠিক পছন্দ হয় বলে আমার মনে হচ্চে না ।" বরদাসুন্দরী । দেখ, ঐ গুলো আমার ভালো লাগে না । সুচরিতাকে আমার আপন মেয়েদের থেকে কোনো দিন তফাৎ করে দেখিনে কিন্তু তাই বলে একথাও ত বলতে হয় উনিই বা কি এমন অসামান্ত ! পামু বাবুর মত বিদ্বান ধাৰ্ম্মিক লোক যদি ওকে পছন্দ করে থাকে সেটা কি উড়িয়ে দেবার জিনিষ ? তুমি যাই বল আমার লাবণ্যকে ত দেখতে ওর চেয়ে অনেক ভাল কিন্তু আমি তোমাকে বলে দিচ্চি আমরা যাকে পছন্দ করে দেব ও তাকেই বিয়ে করবে, কখনো না” বলবে না। তোমরা যদি স্বচরিতার দেমাক বাড়িয়ে তোল তা হলে ওর পাত্র মেলাই ভার হবে । পরেশ ইহার পরে আর কোনো কথাই বলিলেন না । বরদাসুন্দরীর সঙ্গে তিনি কোনো দিন তর্ক করিতেন না বিশেষত সুচরিতার সম্বন্ধে । সতীশকে জন্মদিয়া যখন সুচরিতার মার মৃত্যু হয় তখন সুচরিতার বয়স সাত। তাহার পিতা রামশরণ হালদার স্ত্রীর মৃত্যুর পরে ব্রাহ্মসমাজে প্রবেশ করেন এবং পাড়ার লোকের অত্যাচারে গেম ছাড়িয়া ঢাকায় আসিয়া আশ্রয় লন। সেখানে পোষ্ট আপিসের কাজে যখন নিযুক্ত ছিলেন তখন পরেশের সঙ্গে তাহার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হয়। সুচরিতা তখন হইতেই পরেশকে ঠিক নিজের পিতার মতই জানিত । রামশরণের মৃত্যু হঠাৎ ঘটিয়াছিল। তাহার টাকা কড়ি যাহা কিছু ছিল তাহা তাহার ছেলে ও মেয়ের নামে দুই ۲۰۰۰۰۰۰۰ به ۰۰، هم ভাগে দান করিয়া তিনি উইলপত্রে পরেশ বাবুকে ব্যবস্থা কুরিবার ভার দিয়াছিলেন। তখন হইতেই সতীশ ও সুচরিতা পরেশের পরিবার ভূক্ত হইয়া গিয়াছিল। • ঘরের বা বাহিরের লোকে সুচরিতার প্রতি বিশেষ স্নেহ বা মনোযোগ করিলে বরদাসুন্দরীর মনে ভাল লাগিত না । অথচ যে কারণেই হউক সুচরিতা সকলের কাছ হইতেই স্নেহ ও শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিত। ধরদাসুন্দরীর মেয়ের তাহার ভালবাসা লইয়া পরস্পরের সঙ্গে ঝগড়া করিত। বিশেষত মেঝমেয়ে ললিতা তাহার ঈর্ষাপরায়ণ প্রণয়ের দ্বারা স্নচরিতাকে দিনরাত্ৰি যেন অঁাকড়িয়া থাকিতে চাহিত। পড়াশুনার খ্যাতিতে র্তাহার মেয়েরা তখনকার কালের সকল বিদুষীকেই ছাড়াইয়া যাইবে বরদাসুন্দরীর মনে এই আকাজ ছিল। সুচরিত র্তাহার মেয়েদের সঙ্গে এক সঙ্গে মানুষ হইয়া এ সম্বন্ধে তাহদের সমান ফললাভ করিবে ইহা তাহার পক্ষে সুথকর ছিল না। সেই জন্ত ইস্কুলে যাইবার সময় সুচরিতার নানাপ্রকার বিঘ্ন ঘটিতে থাকিত । সেই সকল বিদ্রের কারণ অনুমান করিয়া পরেশ সুচরিতার ইস্কুল বন্ধ করিয়া দিয়া তাহাকে নিজেই পড়াইতে আরম্ভ করিলেন। শুধু তাই নয়, সুচরিতা বিশেষভাবে তাহারই যেন সঙ্গিনীর মত হইয়া উঠিল। তিনি তাহার সঙ্গে নানা বিষয়ে আলাপ করিতেন, যেখানে যাইতেন তাহাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইতেন, যখন দূরে থাকিতে বাধ্য হইতেন তখন চিঠিতে বহুতর প্রসঙ্গ উত্থাপন করিয়া বিস্তারিত আলোচনা করিতেন । এমনি করিয়া সুচরিতার মন তাহার বয়স ও অবস্থাকে ছাড়াইয়া অনেকটা পরিণত হইয়া উঠিয়াছিল। তাহার মুখশ্ৰীতে ও আচরণে যে একটি গাম্ভীর্য্যের বিকাশ হইয়াছিল তাহাতে কেহ তাহাকে বালিকা বলিয়া গণ্য করিতে পারিত না ; এবং লাবণ্য যদিচ বয়সে প্রায় তাহার সমান ছিল তবু সকল বিষয়ে স্বচরিতাকে সে আপনার চেয়ে বড় বলিয়াই মনে করিত—-এমন কি, বরদাসুন্দরীও তাহাকে ইচ্ছা করিলেও কোন মতেই তুচ্ছ করিতে পারিতেন না । পাঠকের পূৰ্ব্বেই পরিচয় পাইয়াছেন হারাণ বাবু অত্যন্ত উৎসাহী ব্রাহ্ম ব্রাহ্মসমাজের সকলকাজেই তাহার হাত ছিল ; --তিনি নৈশ স্কুলের শিক্ষক, কাগজের সম্পাদক, স্ত্রীবিদ্যালয়ের