পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১শ সংখ্যা । ] ভিন্ন নহে, উহাতে কৃষ্ণলীলা বর্ণিত। মাধবদেবের হরি নিরাকার, ইহার প্রায়, চৈতন্তের সমসাময়িক। তাছাদের মতাবলম্বিগণ মহাপুরুষিয়া নামে প্রসিদ্ধ। অসময়ে কীৰ্ত্তন নিষিদ্ধ বলিয়া ভজনালয় মাত্র দেখিয়া নিবৃত্ত হইতে হইল । নামঘরে সায়ংকালে প্রতিবাসিগণ উপস্থিত হইলে সাধনা ব্যতীত পল্লীসমাজের অধিবেশন হয়। গৃহস্বামী পান সুপারি প্রদর্শন করিয়া আমাকে সাজিয়া খাটতে কহিলেন। অতিথিকে পান সাজিয়া দিবার নিয়ম নাই । মলওয়ারের মত তাম্বুলে খদির ব্যবহার করা হয় না। সে কালের আগেমিয়া গৃহস্থের পক্ষে কেবল রাজস্ব প্রদানের জন্ত টাকার আবশ্যক হৃষ্টত, সেই কারণে ধান্ত বিক্রয় করিবার প্রয়োজন ছিল। রিলের মৎস্ত, কদলীক্ষারে প্রস্তুত লবণ, তৈলের জন্য স্বকীয় ক্ষেত্রে সর্ষপ, মধুরতা আস্বাদনের জন্য গুড় ও পৃষ্টির উপাদান ডাক্টল এবং গৃহপ্রাঙ্গণে তাবৎ লোকের জাতিনিৰ্ব্বিশেষে বস্ত্র বয়নের যন্ত্র ছিল । গোধন প্রতি গুতে বিরাজ করিয়া দধি দুগ্ধ প্রদান করিত। তুষের আগুন গুচে সৰ্ব্বদা থাকিত, রাত্রিকালে প্রয়োজন হইলে উক্তগতে তৃণ নিক্ষেপ করিয়া ফুৎকার দিলে আলোক উৎপন্ন হুইয়া প্রয়োজনীয় কার্যা সম্পাদনের সঙ্গয়তা করিত, দুগ্ধ উষ্ণ করিয়া পান করিবার পদ্ধতুি অদ্যাপি প্রচলিত হয় নাই। এক্ষণে বাঙ্গালী বঙ্গ ও বাঙ্গালী লবণ বিলক্ষণ প্রচলিত। বিলাতি দ্রব্যজাত বাঙ্গালীদ্বারা আনিত হওয়াতে সেই সকল বস্তুকে বিলাতি না বলিয়া বাঙ্গালী বলা হয়। অধুনা বাঙ্গালীর স্থান মারওয়ারীতে অধিকার করিতেছে । হয়গ্ৰীব যাইতে না পারায় কামাখ্যা হইতে তাড়িত ডাকিনীপল্লী দর্শন ঘটিল না । শ্ৰীক্ষেত্রের দেবদাসী বা কলিকাতার বারাঙ্গনা অপেক্ষা এথানকার মোহিনীদের বশীকরণ বিদ্যায় অধিক জ্ঞান নাই । অপরাহ্নে অশ্বক্রাস্ত শৈলমূলে ব্ৰহ্মপুত্রতীরে অহিফেনসেবী পুরোহিতসমাজে আবিভূত হইয়া কাশীদাস কৃত রামায়ণ শ্রবণ করিতে বসিলাম । উচ্চারণের পার্থক্যে উহা বাঙ্গালা বলিয়া বোধ হইতে লাগিল না । চন্দ্ৰ—সন্দ্র, সৰ্ব্ব — হর্ব, চিড়া—সিরা ও হয় স্থলে হব পঠিত হইতেছে। ধৰ্ম্মাধিকরণে গমনোদেশে আগত কলিতাদিগের কথোপকথন শ্রবণ করিয়া আহোমিয়া ভাষায় উৎকল শব্দ আছে বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। উড়িষ্যা ও আসাম উভয় & কামরূপ । ఆసి দেশ বাঙ্গালার প্রাস্তদেশে অবস্থিত। অতএব ভাষাভেদ ও কেশকৰ্ত্তন সম্বন্ধে এক প্রক্রিয় দ্বারা কাৰ্য হইয়াছে। আগস্তুকের পক্ষে এই রহস্তজনক ব্যাপার এ দেশের বিশেষত্ব বলিয়া বিবেচিত হইবে। পূৰ্ব্ববঙ্গের প্রাচীন বাঙ্গালা কবিতায় দুই একটা উৎকলভাবাপন্ন শব্দ থাকিলেও সেই স্বত্র অবিচ্ছিন্নভাবে বাঙ্গালার মধ্যস্থল রাজসাহী হইতে পশ্চিম সীমান্তে উড়িষ্যা পর্য্যন্ত লইয়া যাওয়া অসম্ভব। বাঙ্গালাভাষার লীলাক্ষেত্র অতি বিস্তৃত, উত্তরে তিব্বতী পূৰ্ব্বে মগ দক্ষিণে সমুদ্র ও পশ্চিমপ্রান্তে দ্রাবিড়ী দ্বারা বেষ্টিত হইয়া প্রত্যন্তপ্রদেশে আহোমিয়া, চটলী, মৈথিলী, মধ্যদেশী হিন্দী ও উৎকলী অবাস্তরভেদে বিভিন্নরূপ ধারণ করিয়াছে। আমরা যাহাকে অবাস্তরভেদ বলি অন্তে তাহাকে মূলস্বরূপ বলিতে পারে। দক্ষিণ পশ্চিমের সাদৃশু উত্তর পূৰ্ব্বে অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে দর্শন করিয়া অতিমাত্র বিস্ময়াপন্ন হইয়াছি । & উচ্চ আসামের অধিবাসীরা নিম্ন আসামের বা কামরূপ প্রদেশের ভাষাকে আহোমিয়া না বলিয়া ঢেকেরি কহে, ইহাতে বঙ্গভাষার সাদৃশু অধিক। যথা, আহোমিয়া— চুটি মুটি কুমটি পেট ফটা নগরে গরগায়ে তারে হে কথা ।* ঢেকেরি, যথা—e যাকে আমি কঁদে করি তারে ভয়স্তি পলাও ররি। " গুরুকে গোসাই কহে । তিনি গ্রামের শাসনকর্তা । তিনি উপস্থিত না থাকিলে এক প্রতিনিধি নিযুক্ত করিয়া দেন। এক গ্রামে যতগুলি গুরুর শিষ্য থাকে তথায় সেই পরিমাণে প্রতিনিধি হইবে । তাহাদিগকে একমত হইয়া বিচার করিতে হয় । পুৰ্ব্বে প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে পুনর্বিচারের জন্য গুরুদেবের নিকট যাইবার নিয়ম ছিল। ইদানীং ইংরাজের বিচারালয়ে যাইবার প্রয়োজন হষ্টয়াছে। ভূমিসংক্রান্ত --- • ট-গে মােট কষ্ট - জিনিষ অর্থাৎ কৌড়ি, পেট. ফটা-পেট ফাট, গরগায়ে-দুর্গসংযুক্ত গ্রামে। তারে হে কথা—তারই সে কথা । : + পলাও ররি-দোঁড়িয়া পলাই। বৃষ্টিকালে জলবাহকের দ্বারা ইহা উক্ত হইয়াছে।