পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

அ8 ক্রম জল বরে লক্ষ দতে হইবে। - আজ কাল সকল শিক্ষণশাস্ত্রবিৎ બહિર્ક এই দুইটি বিধি মানেন। যে প্রণালীতে যত অধিক পরিমাণে এই বিধিগুলি রক্ষিত হয় সেই প্রণালী তত উৎকৃষ্ট । আমরাও এই সকল বিষয়ে লক্ষ্য রাখিয়া অদৈশের প্রচলিত লেখাপড়া শিখানর প্রণালীর বিচার করিতে প্রবৃত্ত হইবে। ইদানীং আমাদের পাঠশাল সমূহে বালকদিগকে প্রথমে বর্ণমালা চিনিতে ও উচ্চারণ করিতে শিখান হয়, তৎপরে বানান করিয়া এক একটি শব্দ উচ্চারণ করিতে শিখান হয় । বানান মুখস্থ করাষ্টবার উপর অধিক আগ্রহ দেখা যায়। দুরূহ শব্দের বানান অভ্যস্ত করাইলার অভিপ্রায়ে ঐক্য, মাণিক্য, জাড্য, প্রভৃতি অনেক জটিল, দুৰ্ব্বোধ, বা শিশুদিগের একেবারেই অবোধ্য শব্দের বানান বার সার আবৃত্তি করান হয়। মুদ্রিত পুস্তক কতকদূর পাঠ করাইবার পর লিখিতে দেওয়া হয়। এইরূপ রীতির কতকগুলি দোষ আছে । নিম্নে তাতাদের উল্লেখ ও বিচার করা যাইতেছে। পাঠারম্ভেই বর্ণমালা পরিচিত ও কণ্ঠস্থ করান যে অস্বা ভাবিক ও দুরূহ তাঙ্গ একটু বিবেচনা করিয়া দেখিলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় । কোমলমতি শিশুদিগের পক্ষে অক্ষরগুলি হিজিবিজি চিহ্ল, বর্ণমালার উচ্চারণ বাগযন্ত্রের ব্যায়াম মাত্র । উভয়ই অবোধ্য বা অর্থশূন্ত, উদ্দেশুইনও প্রয়োজনহীন, সুতরাং নীরস । তাড়নায় অক্ষর পরিচয় ও আবৃত্তি করিতে চেষ্টা করিতে হয় । এরূপ অবস্থায় পাঠ্য বিষয় আয়ত্ত করিতে যে অধিক পরিশ্রম ও সময় ব্যয় হয় তাহার আর আশ্চৰ্য্য কি ? প্রথম হইতেই পাঠে শিশুদিগের বিতৃষ্ণ জন্মে। তাহারা যে লেখাপড়াকে তাহাদের শাসন করিবার ও কষ্ট দিবার ব্যবস্থা বলিয়া মনে করে তাহ নিতান্ত অস্বাভাবিক "বা অন্তায় নহে। ইংরাজী ভাষায় এক বর্ণের বিভিন্ন প্রকার উচ্চারণ এবং ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের এক প্রকার উচ্চারণ থাকাতে শিশুদিগকে লিখিতে পড়িতে শিখান অতি দুরূহ ব্যাপার। ইংরাজী বর্ণমালায় লিখন ও পঠনের বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও অনেক বিলাতী পাঠশালায় স্বাভাবিক উপায়ে শিক্ষা দেওয়া হয়— অর্থাৎ পরিচিত শব্দের লিখন ও পঠন আরম্ভ করা হয় এবং ক্রমশঃ বিশ্লেষণ স্বারা শব্দের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বা অক্ষর পরিচয় করান হয়। . কেহ কেহ ইহাকে চীন দেশীয় প্রণালী বলিয়া প্রবাসী । • *. জিপ কৰি থাকেন তথাপি অনেক পণ্ডিত ও শিক্ষক ৭ম ভাগ। ইহাকে উৎকৃষ্ট প্রণালী বলিয়া স্বীকার করেন। বাঙ্গালায় বর্ণমালা সুবিন্যস্ত থাকায় শব্দ শিক্ষা আরম্ভ করিতে এরূপ . আপত্তি হইতে পারে না । " কেহ হয়ত বলিবেন বাঙ্গালায় বর্ণমালা স্ববিদ্যস্ত থাকাতেই বর্ণমালার শিক্ষা আরম্ভ করা উচিত। কিন্তু বালকগণু লেখা পড়ায় কিছুদূর অগ্রসর ন হইলে তাহাদিগকে বর্ণমালার শৃঙ্খলা ও প্রয়োজন শিক্ষা দেওয়া স্বাভাবিক বা যুক্তিসঙ্গত নহে। যখন শিশু কথা কহিতে শিখে, তখন যদি মা, বাবা, হাত, পা, গরু, প্রভৃতি পরিচিত পদার্থের নাম না শিখাইয়া অ, আ, ক, খ, ইত্যাদি বর্ণের উচ্চারণ করিতে শিখান হয় ও পরে বানান করিয়া বএ আকার ব, বএ আকার বাঁ, বাবা, বলিতে শিখান হয় তাঙ্গ হইলে কতদিনে শিশু কথা কহিতে শিথে বিবেচনা বা চেষ্টা করিয়া দেখিলে বর্তমান পাঠনার রীতি কিরূপ অস্বাভাবিক এবং অযুক্তিসঙ্গত তাহ সহজেই বোধগম্য হইবে । যে প্রণালীতে শিশুরা কথা কহিতে শিখে সেই প্রণালী অনুসারে লিথন ও পঠন শিক্ষা করাই স্বাভাবিক । লিখন ও পঠন কথারই রূপাস্তর মাত্র । শিক্ষাশাস্ত্রের যে দুইটি বিধি উপরে উল্লিখিত হইয়াছে-- অর্থাৎ পরিচিত বিষয় হইতে ক্রমে অপরিচিত বিষয়ের এধং সরল হইতে আরম্ভ করিয়া ক্রমে জটিল বিষয়ের শিক্ষা দেওয়া কৰ্ত্তব্য--প্রচলিত পাঠনার রীতিতে সেই দুইটি বিধিরই অন্তথা হইয় থাকে। পরিচিত শব্দের শিক্ষা না দিয়া অপরিচিত বর্ণমালার শিক্ষা আরম্ভ করা হয়। দ্বিতীয় বিধির অন্যথা হয় কি না সে সম্বন্ধে কিছু মতান্তর হইতে পারে। অনেকেরই ধারণা এই যে প্রথমে অক্ষর পরিচয় করাইয়া এবং অক্ষর যোজনার দ্বারা শব্দ শিখাইয় পরে সম্পূর্ণ বাক্য পাঠ করাইলেই সরল হইতে জটিল বিষয়ের শিক্ষা দেওয়া হয়। এই ধারণাটি ভ্ৰমাত্মক। বাগ্যন্ত্রের অপরিণতি হেতু শিশুরা সৰ্ব্বপ্রথমে সম্পূর্ণ বাক্য উচ্চারণ করিতে পারে না বটে, তথাপি তাহারা সম্পূর্ণ বাক্য প্রয়োগ করিবারই চেষ্টা করে। দা বলিতে দাদা আসিতেছে কি দাদা খেলিতেছে, মা বলিতে মা আসিতেছে বা মা দাড়াইয়া আছে, প্রভৃতি এক একটি সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করিবারই চেষ্ট করে। কিন্তু যখন বাক্যন্ত্র এরূপ পরিণত হয় যে ছোট ছোট কথা