পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ッ88 চেয়ে বড় এবং মুল Extremist, কে ? চরমপস্থিত্বের ধৰ্ম্মই এই যে, একদিক চরমে উঠিলে অন্তদিক সেই টানেই আপনি চরমে চড়িয়া যায়। এটা আমাদের নিজের কাহারে দোষে হয় না এটা বিশ্ববিধাতার নিয়মেই ঘটে । বঙ্গবিভাগের জন্ত সমস্ত বাংলাদেশে যেমন বেদন অনুভব করিয়াছে এবং যেমন দারুণ দুঃখভোগের দ্বারা তাহ প্রকাশ করিয়াছে ভারতবর্ষে এমন বোধ হয় আর কখনো হয় নাই । কিন্তু প্রজাদের সেই সত্য বেদনায় রাজপুরুষ যে কেবল উদাসীন তাহা নহে, তিনি ক্রুদ্ধ, খড়গহস্ত । তাহার পরে ভারতশাসনের বর্তমান ভাগ্যবিধাতা, র্যাহারা অভু্যদয়ের সংবাদমাত্রেই ভারতবর্ষের চিত্তচকেণর তাহার সমস্ত তৃষিত চঞ্চু ব্যাদান করিয়া একেবারে আকাশে উড়িয়াছিল—তিনি তাহার সুদূর স্বৰ্গলোক হইতে সংবাদ পাঠাইলেন—যাহা হইয়া গিয়াছে তাহা একেবারেই চূড়ান্ত, তাহার আর অন্যথা হইতে পারে না। এতই বধির ভাবে সমস্ত বাংলাদেশের চিত্তবেদনাকে একেবারে চূড়ান্ত করিয়া দেওয়া ইহাই কি রাজ্যশাসনের চরমপন্থী নহে? ইহার কি একটা প্রতিঘাত নাই ? এবং সে প্রতিঘাত কি নিতান্ত নিৰ্জ্জীবভাবে হইতে পারে ? এই স্বাভাবিক প্রতিঘাত শাস্ত করিবার জন্ত কত্ত্বপক্ষ ত কোনো শান্তনীতি অবলম্বন করিলেন না-- তিনি চরমের দিকেই চড়িতে লাগিলেন। আঘাত করিয়া যে ঢেউ তুলিয়া ছিলেন সেই ঢেউকে নিরস্ত করিবার জন্ত উদ্ধশ্বাসে কেবলি দণ্ডের উপর দণ্ড চালনা করিতে লাগিলেন, তাহাতে তাহারা যে বলিষ্ঠ এ প্রমাণ হইতে পারে কিন্তু স্বভাব ত এই প্রবল রাজাদের প্রজা নহে। আমরা দুৰ্ব্বল হই আর অক্ষম হই বিধাতা আমাদের যে একটা হৃৎপিণ্ড গড়িয়াছিলেন সেটা ত নিতান্তই একটা মৃৎপিণ্ড নহে, আমরাও সহসা আঘাত পাইলে চকিত হইয়া উঠি ; সেটা একটা স্বাভাবিক প্রতিবৃত্তি ক্রিয়া ; যাহাকে ইংরেজিতে বলে reflex action । এটাকে রাজসভায় যদি অবিনয় বলিয়া জ্ঞান করেন তবে আঘাতট সম্বন্ধেও বিবেচনা করিতে হয়। যাহার শক্তি আছে সে অনায়াসেই দুইয়ের পশ্চাতে আরো একটা দুই যোগ করিতে পারে কিন্তু তাহার পরে ফলের ঘরে চার দেখিলেই উন্মত্ত হইয়া উঠা বিধাতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। স্বভাবের নিয়ম যখন কাজ করে তখন, কিছু অসুবিধা প্রবাসী । - - - م. [ ৭ম ভাগ । ঘটিলেও, সেটাকে দেখিয়া বিমর্ষ হইতে পারি না। বিদ্যুতের বেগ লাগাইলে যদি দেখি দুৰ্ব্বল স্নায়ুতেও প্রবল ভাবে সাড় পাওয়া যাইতেছে তবে বড় কষ্টের মধ্যে সেটা আশার কথা । অতএব এদিকে যথন লর্ড কার্জন, মর্লি, ইবেটুসন ; ওখ , পুনিটিভ পুলিস্ ও পুলিসরাজকতা ; নিৰ্ব্বাসন, জেল ও বেত্ৰদণ্ড ; দলন, দমন ও আইনের আত্মবিস্মৃতি ; তথন অপর পক্ষে প্রজাদের মধ্যেও যে ক্রমশই উত্তেজনাবৃদ্ধি হইতেছে, যে উত্তাপটুকু অল্পকাল পূৰ্ব্বে কেবলমাত্র তাহাদের রসনার প্রান্তভাগে দেথাদিয়াছিল তাই যে ক্রমশই গভীব অস্থিমজ্জার অভ্যন্তরে প্রবেশ করিতেছে ; তাহারা যে সৰ্ব্বপ্রকার বিভীষিকার সম্মুপে একেবারে অভিভূত না হইয় অসহিষ্ণু হষ্টয়া উঠিতেছে ইহাতে আমাদের যথেষ্ট অসুবিধা ও অনিষ্টের আশঙ্কা আছে তাহ মানিতেই হইবে কিন্তু সেই সঙ্গে এইটুকু আশার কথা না মনে করিয়া থাকিতে পারি না, যে বহুকালের অবসাদের পরেও স্বভাব বলিয়া একটা । পদার্থ এখনো আমাদের মধ্যে রহিয়া গেছে ; প্রবলভাবে কষ্ট পাইবার ক্ষমতা এথনো আমাদের যায় নাই –এবং জীবন ধৰ্ম্মে যে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার নিয়ম বর্তমান এথনো আমাদের মধ্যে তাহা কাজ করিতেছে । জীবনধৰ্ম্ম কলের জিনিষ নহে, তাহার প্রতি নিৰ্ব্বিচার ব্যবহার করিলে সে হঠাৎ অভাবনীয় রূপে অসুবিধা ঘটাইয়া থাকে কিন্তু তৎসত্ত্বেও নিজেদের জাতীয় কলেবরের মৰ্ম্মস্থানে চরম আঘাত পড়িতে থাকিলে চৰ্ম্মপ্রান্তেও তাহার প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ প্রকাশ না হওয়াই আমাদের পক্ষে মঙ্গল একথা কোন মুখে বলিব ? ' চরমনীতি বলিতেই বুঝায় হলছাড়া নীতি, সুতরাং ইহার গতিটা যে কথন কাহাকে কোথায় লইয়া গিয়া উত্তীর্ণ করিয়া দিবে তাহ পূৰ্ব্ব হইতে কেহ নিশ্চিতরূপে বলিতে পারে না । ইহার বেগকে সৰ্ব্বত্র নিয়মিত করিয়া চলা এই পন্থার পথিকদের পক্ষে একেবারেই অসাধ্য। তাহাকে প্রবর্তন করা সহজ কিন্তু তাহাকে সম্বরণ করা বড় কঠিন। এই কারণেই, আমাদের কর্তৃপক্ষ চরমনীতিতে দম লাগাইলেন তখন র্তাহারা যে এতদূর পর্য্যন্ত যাইবেন তাহ মনেও করেন নাই। আজ ভারতশাসনকাৰ্য্যে পুলিশের সামান্য পাহারাওয়ালা হইতে দ্যায়দণ্ডধারী বিচারক পর্য্যন্ত সকলেরই মধ্যে স্থানে স্থানে যে অসংযম মটিয়া বাছির হই”