পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৪৬, ঝড়ের মত আসিয়া পড়ে, কারণ অসামঞ্জস্তের সংঘাতই তাহাকে জাগাইয়া তোলে। আমাদের দেশে নানা কারণে কিছুকাল হইতেই ইতিহাসের শিক্ষায়, যাতায়াত ও আদানপ্রদানের সুযোগে, এক রাজশাসনের ঐক্যে, সাহিত্যের অভু্যদয়ে, এবং কনগ্রেসের চেষ্টায় আমরা ভিতরে ভিতরে বুছিতেছিলাম যে, আমাদের দেশটা এক, আমরা একই জাতি, সুখে দুঃখে আমাদের এক দশ, এবং পরস্পরকে পরমাত্মীয় বলিয়া না জানিলেও অত্যন্ত কাছে ন টানিলে আমাদের কিছুতে মঙ্গল নাই। বুঝিতেছিলাম বটে কিন্তু এই অথও ঐক্যের মূৰ্ত্তিটি প্রত্যক্ষ সত্যের মত দেখিতে পাইতেছিলাম না- তাহা যেন কেবলই আমাদের চিন্তার বিষয় হইয়াই ছিল। সেই জন্য সমস্ত দেশকে এক বলিয়া নিশ্চয় জানিলে, মানুষ দেশের জন্ত যতটা দিতে পারে, যতটা সহিতে পারে, যতটা করিতে পারে আমরা তাহার কিছুই পারি নাই। এই ভাবেই আরো অনেকদিন চলিত । এমন সময় লর্ড কার্জন যবনিকার উপর এমন এক প্রবল টান মারিলেন, যে, যাহা নেপথ্যে ছিল তাহার আর কোনো আচ্ছাদন রহিল না । বাংলাকে যেমনি দুইখানা করিবার হুকুম হইল অমনি পূৰ্ব্ব হইতে পশ্চিমে একটিমাত্র ধ্বনি জাগিয়া উঠিল— আমরা যে বাঙালী, আমরা যে এক ! বাঙালী কখন যে বাঙালীর এতই কাছে আসিয়া পড়িয়াছে, রক্তের নাড়ি কখন বাংলার সকল অঙ্গকেই এমন করিয়া এক চেতনার বন্ধনে বাধিয়া তুলিয়াছে তাহ ত পুৰ্ব্বে আমরা এমন স্পষ্ট করিয়া বুঝিতে পারি নাই। আমাদের এই আত্মীয়তার সজীব শরীরে বিভাগের বেদন যখন এত অসহ্য হইয়া বাজিল তখন ভাবিয়াছিলাম সকলে মিলিয়া রাজার দ্বারে নালিশ জানাইলেই দয়া পাওয়া যাইবে । কেবলমাত্র নালিশের দ্বারা দয়া আকর্ষণ ছাড়া আর যে আমাদের কোনো গতিই আছে তাহাও আমরা জানিতাম না ।

  • কিন্তু নিরুপায়ের ভরসাস্থল এই পরের অনুগ্রহ যখন চুড়ান্তভাবেই বিমুখ হইল তখন যে ব্যক্তি নিজেকে পঙ্গু জানিয়া বহুকাল অচল হইয়াছিল ঘরে আগুন লাগিতেই নিতান্ত অগত্যা দেখিতে পাইল তাহারো চলৎশক্তি আছে।

প্রবাসী । ['৭ম ভাগ আমরাও একদিন অন্তঃকরণের অত্যন্ত একটা তাড়না দেখিতে পাইলাম অত্যন্ত এই কথাটা আমাদের জোর করিয়া বলিবার শক্তি আছে যে আমরা বিলাতি পণ্যদ্রব্য ব্যবহার করিব না । আমাদের এই আবিষ্কারটি অন্তান্ত সত্য আবিষ্কারেরই দ্যায় প্রথমে একটা সঙ্কীর্ণ উপলক্ষ্যকে অবলম্বন করিয়া আমাদের কাছে উপস্থিত হইয়াছিল। অবশেষে দেখিতে দেখিতে আমরা বুঝিতে পারিলাম উপলক্ষ্যটুকুর অপেক্ষা ইহা অনেক বৃহৎ। এযে শক্তি! এযে সম্পদ! ইহা অন্তকে জদ করিবার নহে ইহা নিজেকে শক্ত করিবার। ইহার আর কোনো প্রয়োজন থাকৃ বা না থাকৃ ইহাকে বক্ষের মধ্যে সত্য বলিয়া অনুভব করাই সকলের চেয়ে বড় প্রয়োজন হইয়া উঠিয়াছে। শক্তির এই অকস্মাৎ অনুভূতিতে আমরা যে একটা মস্ত ভরসার আনন্দ পাইয়াছি সেই আনন্দটুকু না থাকিলে এই বিদেশীবর্জনব্যাপারে আমরা এত অবিরাম দুঃখ কথনই সহিতে পারিতাম না । কেবলমাত্র ক্রোধের এত সহিষ্ণুত নাই। বিশেষতঃ প্রবলের বিরুদ্ধে দুৰ্ব্বলের ক্রোধ কখনই এত জোরের সঙ্গে দাড়াইতে পারে না । সত্য পদার্থকে অনুভব করিবার যে আনন্দ, সেই আনন্দের জোরেই আমরা দুঃখের পর দুঃখ বহন করিয়াও হার মানিতেছি না। ’ পরস্তু যতই দুঃখ পাইতেছি সত্যের পরিচয়ও ততই নিবিড়তর সত্য হইয়া উঠিতেছে। যতই দুঃখ পাইতেছি আমাদের শক্তি গভীরতায় ও ব্যাপ্তিতে ততই বাড়িয়া চলিয়াছে। আমাদের এই বড় দুঃখের ধন ক্রমেই আমাদের হৃদয়ের চিরন্তন সামগ্ৰী হইয়া উঠিতেছে। অগ্নিতে দেশের চিত্তকে বারবার গলাইয়া এই যে ছাপ দেওয়া হইতেছে ইহাত কোনো দিন আর মুছিবে না। এই রাজমোহরের ছাপ আমাদের দুঃখসহার দলিল হইয়া থাকিবে –ছুঃখের জোরে ইহা প্রস্তুত হইয়াছে এবং ইহার জোরেই দুঃখ সহিতে পারিব। সত্য জিনিষ পাইলে তাহার আনন্দ ষে কত জোরে কাজ করে এবার তাহা স্পষ্ট দেখিয়া আশ্চৰ্য্য হইয়া গিয়াছি। কত দিন হইতে জ্ঞানী লোকেরা উপদেশ ধিয়া আসিয়াছেন ষে, হাতের কাজ করিতে ঘৃণা করিয়া, চাকরি করাকেই