পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১শ সংখ্যা। পাবনা প্রাদেশিক সম্মিলনী উপলক্ষে সভাপতির বক্ততা। তোমরা যে পার এবং যেখানে পার এক একটি গ্রামের ভার গ্রহণ করিয়া সেখানে গিয়া আশ্ৰয় লও। গ্রামগুলিকে ব্যবস্থাবদ্ধ কর। শিক্ষা দাও, কৃষি শিল্প ও গ্রামের ব্যবহারসামগ্ৰীসম্বন্ধে নূতন চেষ্টা প্রবর্তিত কর ; গ্রামবাসীদের বাসস্থান যাহাতে পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর হয় তাহাদের মধ্যে সেই উৎসাহ-সঞ্চার.কর, এবং যাহাতে তাহারা নিজের সমবেত হইয়া গ্রামের সমস্ত কর্তব্য সম্পন্ন করে সেইরূপ .বিধি উদ্ভাবিত কর! এ কৰ্ম্মে খ্যাতির আশা করিয়ো না ; এমন কি, গ্রামবাসীদের নিকট হইতে কৃতজ্ঞতার পরিবর্তে বাধা ও অবিশ্বাস স্বীকার করিতে হইবে । ইহাতে কোনো উত্তেজনা নাই, কোন বিরোধ নাই, কোনো ঘোষণা নাই কেবল ধৈৰ্য্য এবং প্রেম এবং নিভৃতে তপস্তা—মনের মধ্যে কেবল এই একটিমাত্র পণ ষে দেশের মধ্যে সকলের চেয়ে যাহারা দুঃখী তাঁহাদের দুঃখের ভাগ লষ্টয়া সেই তঃখের মূলগত প্রতিকার সাধন করিতে সমস্ত জীবন সমর্পণ করিব । বাংলা দেশের প্রভিনঙ্গল কনফারেন্স যদি বাংলার জেলায় জেলায় এইরূপ প্রাদেশিক সভা স্থাপন করিয়া তাহাকে পোষণ করিয়া তুলিবার ভার গ্রহণ করেন—এবং এই প্রাদেশিক সভাগুলি গ্রামে পল্লীতে আপন ফলবান ও ছায়াপ্রদ শাখা প্রশাখা বিস্তার করিয়া দেন তবেই স্বদেশের প্রতি আমাদের সত্য অধিকার জন্মিবে এবং স্বদেশের সর্বাঙ্গ হইতে নানা ধমনীযোগে জীবনসঞ্চারের বলে কনগ্রেস দেশের স্পন্দমান হৃৎপিণ্ডস্বরূপ মৰ্ম্মপদার্থ হইয়া ভারতবর্ষের বক্ষের মধ্যে বাস করিবে । সভাপতির অভিভাষণে সভার কার্য্যতালিকা অবলম্বন করিয়া আমি কোনো আলোচনা করি নাই। দেশের সমস্ত কাৰ্য্যই যে লক্ষ্য ধরিয়া চলিবে আমি তাহার মূলতত্ত্ব কয়টি নির্দেশ করিয়াছি মাত্র। সে কয়টি এই – প্রথম, বর্তমানকালের প্রকৃতির সহিত আমাদের দেশের অবস্থার সামঞ্জস্ত করিতে না পারিলে আমাদিগকে বিলুপ্ত হইতেই হইবে। বর্তমানের সেই প্রকৃতিটি—জোট বাধা, বৃহবন্ধত, Organization সমস্ত মহৎগুণ থাকিলেও ব্যুহের নিকট কেবলমাত্র সমুহ আজ কিছুতেই টিকিতে পরিবে না। স্কৃতএব গ্রামে গ্রামে আমাদের মধ্যে যে $44 বিশ্লিষ্টত, যে মৃত্যুলক্ষণ দেখা দিয়াছে ব্যবস্থাবদ্ধ করিয়া তাহা ঠেকাইতে হইবে। দ্বিতীয়, আমাদের চেতনা জাতীয় কলেবরের সর্বত্র গিয়া, পৌঁছিতেছে না। সেইজন্ত স্বভাবতই আমাদের সমস্ত চেষ্টা এক জায়গায় পুষ্ট ও অন্য জায়গায় ক্ষীণ হইতেছে। জনসমাজের সহিত শিক্ষিত সমাজের নানাপ্রকারেই বিচ্ছেদ ঘটাতে জাতির ঐক্যবোধ সত্য হইয়া উঠিতেছে না। এই ঐক্যবোধ কোনোমতেই কেবল উপদেশ বা আলোচনার দ্বার সত্য হইতেই পারে না। শিক্ষিত সমাজগণ সমাজের মধ্যে র্তাহাদের কৰ্ম্মচেষ্টাকে প্রসারিত করিলে তবেই আমাদের প্রাণের যোগ আপনিই সৰ্ব্বত্র অবাধে সঞ্চারিত হইতে পারিবে । g সৰ্ব্বসাধারণকে একত্র আকর্ষণ করিয়া একটি বৃহৎ কৰ্ম্মব্যবস্থাকে গড়িয়া তুলিতে হইলে শিক্ষিত সমাজে নিজের মধ্যে বিরোধ করিয়া তাহা কখনো সম্ভবপর হইবে না । মতভেদ আমাদের আছেই, থাকিবেই এবং থাকাই শ্রেয় কিন্তু দূরের কথাকে দূরে রাখিয়া এবং তর্কের বিষয়কে তর্ক সভায় রাখিয়া সমস্ত দেশকে বিনাশ ও বিচ্ছেদের ছাত হইতে রক্ষা করিবার জন্ত সকল মতের লোককেই আজ এখনি একই কন্মের দুর্গমপথে একত্র যাত্রা করিতে হইবে এ সম্বন্ধে মতভেদ থাকিতেই পারে না। যদি থাকে, তবে বুঝিতে হইবে দেশের যে সাংঘাতিক দশা ঘটিয়াছে তাহ আমরা চোখ মেলিয়া দেখিতেছি না অথবা ঐ সাংঘাতিক দশার যেটি সৰ্ব্বাপেক্ষ দুলক্ষণ নৈরাষ্ঠের ঔদাসীন্ত—তাহা আমাদিগকেও দুরারোগ্যরূপে অধিকার করিয়া বসিয়াছে। ভ্রাতৃগণ, জগতের যে সমস্ত বৃহৎ কৰ্ম্মক্ষেত্রে মানবজাতি আপন মহত্তম স্বরূপকে পরম দুঃখ ও ত্যাগের মধ্যে প্রকাশ করিয়া তুলিয়াছে, সেই উদার উন্মুক্ত ভূমিতেই আজ আমাদের চিত্তকে স্থাপিত করিব ;--যে সমস্ত মহাপুরুষ দীর্ঘকালের কঠোরতম সাধনার দ্বারা স্বজাতিকে সিদ্ধির পথে উত্তীর্ণ করিয়া দিয়াছেন তাহাদিগকেই আজ আমাদের মনশ্চক্ষুর সম্মুখে রাখিয়া প্রণাম করিব তাহ হইলেই অস্ত যে মহাসভায় সমগ্র বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা আপন সফলতার জন্য দেশের লোকের মুখের দিকে চাহিয়াছে তাহার কৰ্ম্ম যথার্থ ভাবে সম্পন্ন হইতে পারিবে। নতুবা, সামান্ত কথাটুকুর কলহে গ্রামগুলিকে সত্বর