পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২শ সংখ্য। ] , দ্বারা শুধু—আর একটি নূতন স্বত্বাধিকার—শ্রেষ্ঠতর স্বত্বাধিকার,—পুরাতম স্বত্বাধিকারের উপর চাপাইয়া দেওয়া হয় এই মাত্র। মনে কর, ভারত যেন একটি বিশাল শতরঞ্জের ছক-অসংখ্য চৌকায় বিভক্ত। মনে কর, এই চৌকাগুলি—গ্রাম্য এলাকা ও তন্মধ্যস্থ গ্রাম। গ্রামের এই যে কৌতুহলজনক বিশেষ ধরণের আর্থিক ব্যবস্থা ইহা বুঝিবার পক্ষে উপরে যাহা বলা হইল তাহাই বোধ হয় যথেষ্ট। এই কৃষিভূমিই গ্রামকে স্বাধীন করিয়া রাখিয়াছে। ইহা একটি সৰ্ব্বাঙ্গসম্পূর্ণ ক্ষুদ্র রাজ্য বলিলেই হয়। এই গ্রামসংলগ্ন কৃষিভূমি হইতেই যখন শ্রমজীবীরা জীবিকা লাভ করিতেছে, সকলেরই যথেষ্টপরিমাণে অন্নংস্থান হইতেছে, তখন আর কিসের অভাব } স্পষ্টই দেখা যাইতেছে, কিজহু কৃষিই গ্রামের একমাত্র অবলম্বন । যখন ভারত বিবিধ জাতি ও বংশের দ্বারা প্রথমে অধুসিত, পরে আক্রান্ত ও বিজিত হয়-সেই গোড়ার ইতিহাস আলোচনা করিলে এই ক্ষুদ্র সমাজগুলির জন্মবৃত্তাস্ত জানিবার পক্ষে কতকটা সাহায্য হইতে পারে। মনে কর, একটা অনির্দিষ্ট ভূমিখণ্ড পড়িয়া রহিয়াছে। একদল লোক যাহারা ভাগ্য অন্বেষণে প্রবৃত্ত, একদল লোক যাহারা মূল-বংশ হইতে বিচ্ছিন্ন হইষাছে, হয়ত তাহার মধ্য হইতে একটি পরিবার কিংবা দুইটি পরিবার একত্র মিলিত হইয়া সেই ভূমিখণ্ড অধিকার করিল এবং সেখানে তাহদের কুটার ও দেবতা আনিয়া স্থাপন করিল। এই আদিম পরিবারগুলি, কিংবা সমবেত পরিবারগুলি, জঙ্গলের মধ্যে জমি লইয়া ও তাহা আবাদ করিয়া সেই জমি, প্রচলিত প্রথানুসারে, আপনাদের মধ্যে অংশে-অংশে বণ্টন করিয়া লইল, এবং যে পরিমাণে এই অভিনব মধুচক্রের মধ্যে বংশবৃদ্ধি হইতে লাগিল, সেই পরিমাণে উহার সীমানাও বাড়িয়া যাইতে লাগিল। কিন্তু এমন একটা সময় আসিল যখন এই মধুচক্রে লোক বেশী হইয়া পড়িল এবং সেই সংকীর্ণ স্থানে আর তাহদের সংকুলান হইল না, এবং পাশ্ববৰ্ত্তী উপনিবেশগুলির সীমানাতেও প্রবেশ করিতে সমর্থ হইল না। তখন তাহদের মধ্যে আবার একটা দল, সেই জঙ্গলের মধ্যে পূৰ্ব্ব-গ্রামেরই অনুরূপ আর একটি অভিনব গ্রাম স্থাপনে প্রবৃত্ত হইল। .* সমসামরিক ভারত । O“وول\ গোড়ায়, কর্ষণযোগ্য ভূমির মধ্যস্থলে অবস্থিত একটি বিশাল কৃষিক্ষেত্র, একটি ক্ষুদ্র দল কর্তৃক স্থাপিত ও কৰ্ষিত হয় ; ইহাই গ্রাম ;—ইহা ভিন্ন আর কিছুই নহে ; এবং গোড়ায় যাহা ছিল এখনও তাহাই আছে। পরে উহাতে একদল কারিগর ও ভূত্য সংযোজিত হইল, কিন্তু উহারা গ্রামেরই অধীনে থাকিয়া শুধু চাষাদের অভাব মোচনেই নিয়োজিত হইল। গ্রামের প্রান্তদেশে উহাদিগকে স্থান দেওয়া হইল, এমনকি কেহ কেহ গ্রামের বাহিরেও প্রেরিত হইল ; গ্রাম্যসমাজের কার্য্যপরিচালনায় তাহাদের কোন হাত নাই। গ্রাম—কৃষক পরিবায়দিগেরই নিজস্ব অধিকার ; কেননা, তাহাদেরই পূৰ্ব্বপুরুষগণ ঐ গ্রাম স্থাপন করিয়াছে। এই দুর্ভাগ্য দেশের উপর মধ্যে মধ্যে যে সকল বৈদেশিক আক্রমণ হইয়া গিয়াছে,– এই আদিম গ্ৰাম্য সমাজ সেই সব আক্রমণ আশ্চয্যরূপে প্রতিরোধ করিয়াছে। সেই সকল আক্রমণের ফলে, ভূস্বামীরা স্থানচ্যুত হয় নাই। আমি গ্রাম্যসমাজ, যে গ্রামের সহিত আবদ্ধ ছিল, সেই গ্রামেই তাহারা রহিয়া গেল ; তবে, কখন কখন এইরূপ অদ্ভূত ঘটনাও হইয়াছে যে, শেষাগত কোন একটি ঔপনিবেশিকের দল, কোন একটি গ্রাম দখল করিয়া, সেই গ্রামবাসীদিগকে অধীন রায়ৎক্কপে (দাসরূপে নহে) পরিণত করিয়া, আর একটি নুতন স্বত্বাধিকারের,—উচ্চতর স্বত্বাধিকারের সৃষ্টি করিল। মনে কর একটি তৃতীয় দল আসিয়া গ্রামটিকে অধিকার করিল। পূৰ্ব্বে যাহারা প্রধান ভূস্বামী ছিল, এক্ষণে তাহারাষ্ট আবার রায়ৎপদবীতে নামিয়া আসিল ; এই রায়ৎদিগের অমুক অমুক স্বত্ব, অমুক অমুক অধিকার রহিয়া গেল—পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী রায়তের স্বত্বাদি হইতে তাহার বিচ্যুত হইল না। পক্ষান্তরে, শেষ-আগন্তুকের উপরিতন ভূস্বামী হইয়া দাড়াইল। গ্রামের উপরিতন ভূস্বামী স্বয়ং ভূমির চাস করিতেছে ইহা কাৰ্য্যতঃ প্রায় দেখা যায় না। সে আবার ঐ জমি অন্ত রায়ৎকে বিলি করে; অধিকাংশ স্থলে ভূস্বামীকে তাহারা খাজনা দেয়। রায়তের, এমনকি পেটাও-রায়তেরাও দখলীস্বত্ব ভোগ করে। উহার স্বকীয় পৈতৃক স্বত্ব দান-বিক্রয় করিতেও পারে। হয়ত এই স্বত্বটি শুধু একমুঠ জোয়ারী,—ফসলের কিঞ্চিৎভাগ মাত্র। বোধ