পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qob-8 করি, ইহা হইতেই স্বত্ব দরূ-স্বত্বের এতটা জটিলতা উৎপন্ন হষ্টয়াছে ; যেন-তেন-প্রকারেণ এই সকল স্বত্বের সমন্বয় হইয়া থাকে – কিন্তু কোন স্বত্ত্বই একেবারে বর্জিত হয় না । তাহার ফল এই হয়,--ভূমি অসংখ্য প্রকার স্বত্বে আবদ্ধ, ভারাক্রও, এবং অফুরণ অংশে বিভক্ত হইয়া পড়ে। এইরূপ ধরণের কোন সমাজ ---বিবিধ বাধা বন্ধনে আবদ্ধ কতকগুলি জমির চাষ করাই যাহাঁদের একমাত্র কাজ– কখন সমৃদ্ধ হইতে পারে বলিয়া কল্পনা করা যায় না। ইংরাজ শাসনের ব্যবস্থাধীনে, উহাদের দারিদ্র্য আরও ভীষণতর হইয়া উঠিয়াছে। ভূস্বামীর অবস্থাও রায়ত অপেক্ষা বিশেষ কিছু ভাল নহে। ভাল ফসলের বৎসরে, রায়ৎ খাইতে পায় ; কিন্তু যখন গরুর অনাহারে জীর্ণশীর্ণ হইয়া পড়ে --(এই ভীষণ ঘটনা প্রায়ই হইয়া থাকে) তখন রায়ৎ প্রাণ বঁাচাইবার জন্ত, তাহার জমি বন্ধক রাথিয়া ঋণগ্রস্ত হয় । বন্ধকের সুদ-আদি বাড়িতে বাড়িতে, রায়ৎ পরে এতটা ঋণভারাক্রাস্ত হইয়া পড়ে যে, সে আর সামলাইতে পারে না ; জমিটুকু,- কুসীদগ্রাহার হস্তে, ‘চেটী'র হস্তে, নগরে যে বাস করে সেই অনুপস্থিত ভূ স্বামীর হস্তে চলিয়া যায়। এই সৰ্ব্ব-গ্ৰাসী মুদ-খোর মহাজনই গ্রাম্যভারতের কালস্বরূপ ; পূৰ্ব্বেকার সাময়িক দেশাক্রমণকারী অপেক্ষ, ইহারা আরও অনর্থকর, আরও 'নছোড়বনা’ ; ইহাদের লুণ্ঠন আরও প্রণালীবদ্ধ। স্বীয় যন্ত্রাদির প্রতি, স্বীয় কৰ্ম্ম-প্রণালীর প্রতি এই চাষাদের যেরূপ অটল বিশ্বাস তাহ বড়ই অদ্ভুত। কিন্তু এস্থলে আশ্চর্য্যের বিষয় নহে। "কর্ণ-হীন কাঠের লাঙ্গল— যাহা উপরের মাটীতে একটু আঁচড় কাটে, মাত্র-- গভীররূপে ভিতরে প্রবেশ করেন- উহা পৃথিবীর দ্যায় পুরাতন না হউক, গ্রামের উৎপত্তির ন্তায় পুরাতন । এই লাঙ্গলের মত সাদাসিধা আদিমধরণের যন্ত্র আর কিছুই নাই ; কিন্তু আমার বোধ হয়, অধিকাংশ হালকা ও নরম জমির পক্ষে ইহাই যথেষ্ট। কিন্তু যাই হোক সরকার যদি নুতন যন্ত্রাদি প্রবর্তিত করিবার সঙ্কল্প করিয়া থাকেন, তাহ অপেক্ষা উত্তম সঙ্কল্প, আর কিছুষ্ট হইতে পারে না । চাষা যেরূপ প্রথার দাস তাহাতে সেযে আপন হইতে আধুনিক যন্ত্রাদি গ্রহণ করিবে তাঙ্গৰ সম্ভাবনা নাই-ত ছাড়, উছার প্রবাসী । [ १ब छांश । এত দরিদ্র যে ঐ সকল যন্ত্র ক্রয় করিবারও উহাদের সামর্থ্য নাই। গ্রামের বাহিরে যে সকল নিরীহ সুন্দর গরুগুলি দেখিলাম, উতরাই উহাদের কাজের সহকারী ; উহাদের দিয়া কাজ করাইলে খরচ অনেক কম হয়। এই গরুরাই উহাদের ক্ষেত চসিয়া দেয়, উহাদের ফসল বহন করিয়া লষ্টয়া যায়, এবং কুপ হইতে জল উঠাইয়া ক্ষেত্রের নালায় ঢালিয়া দেয়। এই সমস্ত গরম দেশে, লোকে জলকে যে পূজা করিলে তাহাতে আশ্চৰ্য্য নাই ; এই পূণ্য জল, কুপ ও চৌবাচ্চা হইতে উত্তোলিত হয় এবং পবিত্র নদীর জল কৃত্রিমউপায়ে থালের মধ্যে আনীত হয়। এই সমস্ত থাল-আদির নিৰ্ম্মাণে, দেশয় বাস্তু-শিল্পীগণ অস্তৃত শিল্পনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়াছে । ইংরাজ-সরকার এই সকল পুরাতন খালের চিন্তু ধরিয়া এক্ষণে যে সব বড় বড় নূতন পাল কাটাইয়াছেন, তজ্জন্ত র্তাহাদিগকে অকুষ্ঠিত ভাবে অভিনন্দন করিতে পারিতাম যদি রায়ৎকে তাহার দরুণ দোকর কর দিতে না হক্টত এবং যদি তাহার জলসেকের একটা জবরদস্তি পদ্ধতি উদ্ভাবন না করিতেন । আমি পুর্বেই বলিয়াছি, কৃষক শ্রেণীই গ্রাম্য-উপনিবেশের সাস অংশ। কিন্তু স্পষ্টই দেখা যাইতেছে, শুধু তাঁহাদের দ্বারা সমস্ত কাজ চলিতে পারে না । তাহারা জগৎ হষ্টতে বিচ্ছিন্ন হইয়া ক্ষুদ্র একটি গ্রামে বদ্ধ হইয়া আছে, সেইখানে বসিয়াই তাহাদের সমস্ত অভাব পূরণ করিতে হইবে,— সুতরাং তাহারা কতকগুলি সাদাসিধা উপায় উদ্ভাবন করিতে বাধ্য হইল । এষ্টরূপে কৃষিসমাজ হইতেই একটা শ্রমজীবী শ্রেণী বিকশিত হইয়া উঠিল,— যাহারা গ্রামেরই অধীন থাকিয়া গ্রামের ইষ্ট সাধন ও অভাব মোচনে নিযুক্ত হইল ; তাহারা শুধু গ্রামেরই জন্য থাটিতে লাগিল, এবং এক মুহুর্তের জন্তও তাহাদের নিজ স্বাধীনতার কথা ভাবিল না । দেখ, তাহ হইতে শ্রমশিল্পের কিরূপ বন্দোবস্ত ইষ্টয়াছে ;–দেখিতে পাইবে, ৫০০ হইতে ২০০০ অধিবাসীবিশিষ্ট গ্রামের মধ্যে শ্রমশিল্পের এক একটি কেন্দ্র অবস্থিত—- তাহাতে একদল ব্যবসাদার পুরা মাত্রায় রহিয়াছে ; চাষার নিয়ত অর্থের দ্বার, বিশেষতঃ ক্ষেত্রোৎপন্ন দ্রব্যের দ্বার, এই কারিগরদের পরিশ্রমেয় প্রতিদান করিয়া থাকে ; এই কারিগরগণ, শুধু গ্রামের হাটবাজারের জন্তই জিনিস