পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৯২ গোর। ᎼᎽ বিনয় আনন্দময়ীর কথা কয়টি ভাবিতে ভাবিতে বাসায় আনন্দময়ীর মৃগের একটি কথাও এ পর্য্যন্ত বিনয়ের সে রাত্রে তাহার গেল । কাছে কোনোদিন উপেক্ষিত হয় নাই । মনের মধ্যে একটা ভার চাপিয়া রহিল। পরদিন সকালে উঠিয়া সে যেন একটা মুক্তির ভাব অনুভব করিল। তাঙ্গর মনে হইল গোরার বন্ধুত্বকে সে একটা খুব বড় দাম চুকাইয়া দিয়াছে। একদিকে শশিমুর্থীকে বিবাহ করিতে রাজি হঠয় সে জীবনব্যাপী যে একটা বন্ধন স্বীকার করিয়াছে ইহার পরিবর্তে আর একদিকে তাহার বন্ধন আলগা দিবার অধিকার হইয়াছে। বিনয় সমাজ ছাড়িয়া ব্রাহ্ম পরিবারে বিবাহ করিবার জন্ত লুব্ধ চইয়াছে গোরা তাহার প্রতি এই যে অত্যন্ত অন্যায় সনেষ্ট করিয়াছিল—এই মিথ্যা সন্দেহের কাছে সে শশিমুর্থীর বিবাহকে চিরন্তন জামিন স্বরূপে রাখিয়া নিজেকে খালাস করিয়া লইল। ইহার পরে বিনয় পরেশের বাড়ীতে নিঃসঙ্কোচে এবং ঘন ঘন যাতায়াত করিতে আরম্ভ করিল। যাহাদিগকে ভাল লাগে তাহাদের ঘরের লোকের মত হইয়া উঠা বিনয়ের পক্ষে কিছুমাত্র শক্ত নহে। সে যেই গোরারদিকের সঙ্কোচ তাহার মন হইতে দূর করিয়া দিল অমনি দেখিতে দেখিতে অল্পকালের মধ্যেই পরেশ বাবুর ঘরের সকলের কাছেই যেন বহুদিনের আত্মীয়ের মত হইয় ऐंठठेिण । কেবল ললিতার মনে যে কয়দিন সন্দেহ ছিল যে সুচরিতার মন হয় ত বা বিনয়ের দিকে কিছু ঝুঁকিয়াছে সেই কয়দিন বিনয়ের বিরুদ্ধে তাহার মন যেন অস্ত্ৰধারণ করিয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু যখন সে স্পষ্ট বুঝিল যে সুচরিতা তাহার প্রতি বিশেষভাবে পক্ষপাতী নহে তখন তাহার মনের বিদ্রোহ দূর হইয়া সে ভারি আরাম বোধ করিল এবং বিনয় বাবুকে অসামান্য ভাল লোক বলিয়া মনে করিতে তাহার কোনো বাধা রহিল না। হারান বাবুও বিনয়ের প্রতি বিমুখ হইলেন না-তিনি একটু ফেন বেশি করিয়া স্বীকার করিলেন যে বিনয়ের প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ । ভদ্রতাজ্ঞান আছে-গোরার যে সেটা নাই ইহাই এই স্বীকারোক্তির ইঙ্গিত। t. “ বিনয় কখনো হারান বাবুর সম্মুথে কোনো তর্কের বিষয় তুলিত না এবং সুচরিতারও চেষ্টা ছিল যাহাতে না তোলা হয়—এই জন্ত বিনয়ের দ্বার ইতিমধ্যে চায়ের টেবিলের শান্তিভঙ্গ হইতে পায় নাই। " কিন্তু হারানের অনুপস্থিতিতে স্নচরিতা নিজে চেষ্টা করিয়া নিয়কে তাহার সামাজিক মতের আলোচনায় প্রবৃত্ত করিত। গোর এবং বিনয়ের মত শিক্ষিত লোক কেমন করিয়া যে দেশের প্রাচীন কুসংস্কারগুলি সমর্থন করিতে পারে ইহা জানিবার কৌতুহল কিছুতেই তাহার নিবৃত্ত হইত না ! গোরাও বিনয়কে সে যদি না জানিত তবে এ সকল মত কেহ স্বীকার করে জানিলে স্বচরিতা দ্বিতীয় কোনো কথা না শুনিয় তাহাকে অবজ্ঞার যোগ্য বলিয়া স্থির করিত। কিন্তু গোরাকে দেখিয়া অবধি গোরাকে সে কোনোমতে মন হইতে অশ্রদ্ধা করিয়া দূর কবিতে পারিতেছে না । তাই সুযোগ পাইলেই ঘুরিয়া ফিরিয়া বিনয়ের সঙ্গে সে গোরার মত ও জীবনের আলোচনা উত্থাপন করে এবং প্রতিবাদের দ্বারা সকল কথা শেষ পর্য্যন্ত টানিয়া বাহিন করিতে থাকে। পরেশ মুচরিতাকে সকল সম্প্রদায়ের মত শুনিতে দেওয়াই তাহার সুশিক্ষার উপায় বলিয়া জানিতেন। এইজন্য তিনি এ সকল তর্কে কোনোদিন শঙ্কা অনুভব বা বাধা প্রদান করেন নাই । একদিন স্বচরিতা জিজ্ঞাসা করিল—“আচ্ছা, গৌরমোহন বাবু কি সত্যই জাতিভেদ মানেন, না ওটা দেশানুরাগের একটা বাড়াবাড়ি ?” বিনয় কহিল “আপনি কি সিঁড়ির ধাপগুলোকে মানেন ? গুগুলোও ত সব বিভাগ— কোনোটা উপরে কোনোট নীচে ।” সুচরিত। নীচে থেকে উপরে উঠতে হয় বলেই মানি —নইলে মানবার কোনো প্রয়োজন ছিল না। সমান জায়গায় লিড়িকে না মানলেও চলে। বিনয়। ঠিক বলেচেন—আমাদের সমাজ . একটা সিড়ি—এর মধ্যে একটা উদ্দেশু ছিল সেটা হচ্চে নীচে থেকে উপরে উঠিয়ে দেওয়–মানব জীবনের একটা পরি