পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২শ সংখ্যা । ] জন্তে আপনাদের মতকে সমস্ত দেশের জিনিষ বলে ধরে নিতে মনে সংশয় হয়।”. বিনয় কহিল—“দেখুন, স্বৰ্য্যের উদয় ব্যাপারটাকে বৈজ্ঞানিকের একরকম করে ব্যাখ্যাকরে আবার সাধারণ লোকে আর একরকম করে ব্যাখ্যা করে । তাতে সূর্য্যের উদয়ের বিশেষ কোনো .ক্ষতিবৃদ্ধি করে না। তবে কিনা সত্যকে ঠিকমত করে জানার দরুন আমাদের একটা লাভ আছে। দেশের যে সকল সত্যকে আমরা খণ্ডিত করে .বিক্ষিপ্ত করে দেখি, গোরা তার সমস্তকে এক করে সংশ্লিষ্ট করে দেখতে পায় গোরার সেই আশ্চর্য্য ক্ষমতা আছে কিন্তু সেই জন্তই কি গোরার সেই দেখাকে দৃষ্টিবিভ্রম বলে মনে করবেন আর যারা ভেঙেচুরে দেখে তাদের দেখাটা সত্য ?” স্নচরিতা চুপ করিয়া রছিল। বিনয় কহিল, “আমাদের দেশে সাধারণত যেসকল লোক নিজেকে পরম হিন্দু বলে অভিমান করে আমার বন্ধু গোরাকে আপনি সে দলের লোক বলে মনে করবেন না। আপনি যদি ওর বাপ কৃষ্ণদয়াল বাবুকে দেখতেন তা হলে বাপ ও ছেলের তফাৎ বুঝতে পারতেন। কৃষ্ণদয়াল বাবু সৰ্ব্বদাই কাপড় ছেড়ে, গঙ্গাজল ছিটিয়ে, পাজি পুথি মিলিয়ে নিজেকে সুপবিত্র করে রাখবার জন্তে অহরহ ব্যস্ত হয়ে আছেন- রান্না সম্বন্ধে খুব ভাল বামনকেও তিনি বিশ্বাস করেন না পাছে তার ব্রাহ্মণত্বে কোথাও কোনো ক্রটি থাকে- গোরাকে তার ঘরের ত্রিসীমানায় ঢুকতে দেন না-কখনো যদি কাজের খাতিরে র্তার স্ত্রীর মহলে আসতে হয় তাহলে ফিরে গিয়ে নিজেকে শোধন করে মুেন ; পুথিবীতে দিনরাত অত্যন্ত আলগেছে আছেন পাছে জ্ঞানে বা অজ্ঞানে কোন দিক থেকে নিয়ম ভঙ্গের কণামাত্র ধূলো তাকে স্পর্শ করে—ঘোর বাবু যেমন রোদ কাটিয়ে, ধূলো বাচিয়ে নিজের বঙের জেল্প, চুলের বাহার, কাপড়ের পারিপাট্য রক্ষা করতে সৰ্ব্বদা ব্যস্ত হয়ে থাকে সেই রকম। গোর এরকমই নয়। সে হিন্ডুয়ানির নিয়মকে অশ্রদ্ধা করে না কিন্তু সে অমন খুটে খুটে চলতে পারে না—সে হিন্দুধৰ্ম্মকে ভিতরের দিক থেকে এবং খুব বড় রকম করে দেখে, সে কোনো দিন মনেও করে না যে হিন্দুধৰ্ম্মের প্রাণ নিতান্ত সৌধীন প্রাণ—অল্প একটু ছোয়াছুরিতেই শুকিয়ে যায় ঠেকাঠেকিতেই মারা পড়ে। গোরা । o - 'ునఁ স্বচরিত। কিন্তু তিনি ত খুব সাবধানে ছোট্ট মেনে চলেন বলেই মনে হয়। বিনয়। তার ঐ সতর্কতাটা একটা অদ্ভূত জিনিষ। - তাকে যদি প্রশ্ন করা যায় সে তথনি বলে ইঁ আমি এ · সমস্তই মানি—ছু লে জাত যায়, খেলে পাপ হয় এ সমস্তই অভ্রান্ত সত্য। কিন্তু আমি নিশ্চয় জানি এ কেবল ওর গায়ের জোরের কথা—এসব কথা যতই অসঙ্গত হয় ততক্ট ও যেন সকলকে শুনিয়ে উচ্চস্বরে ললে। পাছে বর্তমান হিন্দুয়ানির সামান্ত কথাটাকেও অস্বীকার করলে অন্ত মুঢ় লোকের কাছে হিন্দুয়ানির বড় জিনিষেরও অসম্মান ধটে এবং যার হিন্দুয়ানিকে অশ্রদ্ধা করে তারা সেটাকে নিজের জিত বলে গণ্য করে এই জন্তে গোর নিৰ্ব্বিচারে সমস্তষ্ট মেনে চলতে চায়--আমাৰ কাছেও এসম্বন্ধে কোনো শৈথিল্য প্রকাশ করতে চায় না । পরেশ বাবু কহিলেন– “ব্রাহ্মদের মধ্যেও এরকম লোক অনেক আছে । তারা হিন্দুয়ানির সমস্ত সংস্রবক্ট নির্বিচারে পরিহার করতে চায়, পাছে বাহিরের কোনো লোক ভুল করে যে তার হিন্দুধৰ্ম্মের কুপ্রথাকেও স্বীকার করে। এসকল লোকে পৃথিবীতে বেশ সহজভাবে চলতে পারে না - এরা হয় ভান করে নয় বাড়াবাড়ি করে, মনে করে সত্য দুৰ্ব্বল, এবুং সত্যকে কেবল কৌশল করে রক্ষণ করা যেন কৰ্ত্তব্যের অঙ্গ। আমার উপরে সত্য নির্ভর করচে, সত্যের উপরে তামি নির্ভর করচিনে এইরকম যাদের ধারণা তাদেরক্ট বলে গোড়া । সত্যের জোরকে যারা বিশ্বাস করে নিজের জবরদস্তিকে তারা সংযত রাখে । বাইরের লোকে দুদিন দশদিন ভুল বুঝলে সামান্তই ক্ষতি কিন্তু কোনো ক্ষুদ্র সঙ্কোচে সত্যকে স্বীকার না করতে পারলে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি । আমি ঈশ্বরের কাছে সৰ্ব্বদাই এই প্রার্থনা করি যে ব্রাহ্মের সভাতেই হোক আর হিন্দুর চণ্ডীমণ্ডপেই হোক আমি যেন সত্যকে সৰ্ব্বত্রই নতশিরে অতি সহজেই বিনা বিদ্রোহে প্রণাম করতে পারি- বাইরের কোনো ' বাধা আমাকে যেন আটক করে না রাখতে পারে।” . এই বলিয়া পরেশ বাবু স্তব্ধ হইয়া আপনার মনুকে যেন আপনার অন্তরে ক্ষণকালের জন্ত সমাধান করিলেন। পরেশ বাবু মৃদুস্বরে এই যে কম্বটি কথা বলিলেন তাহ