পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

به পরিতৃপ্ত করিবার একমাত্র উপায় বিদেশ গিয়া ভাল কালী প্রস্তুত করিবার প্রণালী শিথিয়া আসিয়া স্বদেশে কালীর কারখানা খুলা । তাহার পর যে সকল অক্ষর বা হরফের দ্বার ছাপা হয়, তাহারও স্বদেশীত্ব বিচাৰ্য্য। ইংরাজী ভাল মুদ্রষ্ঠ সাধারণ ও ৰিচিত্র নানা রকমের হরফ বিলাত ও মার্কিন দেশ হইতে আমদানী হয় । দেশেও হয়, কিন্তু বৈচিত্র্য,উৎকর্ষ ও স্থায়িত্বে উহা বিদেশীর সমকক্ষ নহে । বাঙ্গলা হরফ আমাদের দেশেই দেশী লোকদের দ্বারা প্রস্তুত হয় । কিন্তু হরফ ঢালাইথানার যন্ত্রাদি বিদেশী । হরফ সাধারণতঃ, সীসা, আন্টিমনি, টিন ও তামা এই চারিটি ধাতু মিশাইয়া,এষ্ট মিশ্র ধাতু হইতে প্রস্তুত হয়। মোটের উপর বলিতে গেলে এই চারিটি ধাতুর প্রায় সমস্তই বিদেশ হইতে আমদানী হয় । বর্ষে খনি হইতে অতি অল্পই উত্তোলিত হয় । যাহা হউক, ছাপাখানার এই সব ব্যাপারে দেশের অধিকাংশ লোকেরই কিছু আসিয়া যায় না। প্রধানতঃ চারি প্রকার জিনিষের আমদানিতে আমাদের ধনক্ষয় হইতেছে ; কাপড়, লৌহইস্পাত প্রভৃতি ধাতুদ্রব্য, লবণ এবং চিনি । দেশ কাপড় কলের তাতের ও হাতের তীতের, এই দুই প্রকার। কলগুলি বিদেশী, কোন কোন হাতের তাতও বিদেশী । কিন্তু দেশ খুব ভাল হাতের উতও পাওয়া যায় ; তাহাই ব্যবহার করা যাইতে পারে। কাপড়ের কলও কতক দেশী লোকের, কতক ইংরাজদের। তন্মধ্যে আমাদের দেশীলোকের কলের কাপড়ই পছন্দ করা উচিত। ইহা ছাড়া কাপড়ের আর এক শ্রেণীবিভাগ আছে । সরু সুতার ও মোটা মুতার ৷ মোট মৃত ভারতবর্ষজাত কাপাস হইতেই প্রস্তুত হইতে পারে। সরু সুতার জন্ত মিসর ও মার্কিনদেশের কাপাস ব্যবহৃত হয়। আজকাল সিন্ধু দেশে সর সুতার উপযোগী কাপাস অল্প পরিমাণে উৎপন্ন হইতে আরম্ভ হইয়াছে। যাহারা সম্পূর্ণরূপে দেশী কাপড় পরিতে চান, র্তাহারা বোম্বাইয়ে প্রস্তুত মোটা সুত হইতে হাতের তীতে বুনা কাপড় পরিলেই ঠিক্‌ হয়। কাপড়ের পাড়ের রং বিদেশ হইতে আসে। সুতরাং রংও আমরা প্রস্তুত করিতে না পারিলে খাটি দেশ কাপড় পরিতে পাইব না। তাহার পর আর এক কথা । ভারত কিন্তু প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ । যদিও ভারতবর্ষের মাটির নীচে যথেষ্ট লোহা আছে, তথাপি, হাতের তাতের মাকু প্রভৃতি নিৰ্ম্মাণের জন্ত লোহা ইস্পাত প্রভৃতি প্রায়ই বিদেশ হইতে আসে। কলের তাত ত সমস্তই বিদেশী । ৪/জামষেদজী নাসেরবাঞ্জি তাত মহাশয় মধ্যপ্রদেশে বিশাল লোহার কারখানা খুলিবার উদ্যোগ করিয়া গিয়াছিলেন। উহার কায্য কিছু দিন পরে আরম্ভ হইবে, কিন্তু উঠার সমুদয় মূলধন ভারতে পাওয়া গেল না । উক্তার অনেক অংশীদার বিদেশী । এই কারখানা তইতে লোহা উঠিতে আরম্ভ হইলে আমরা দেশী লোঙ্গ ইস্পাত যত আবশুক পাইব । তাত মহাশয়ের নামের উল্লেখে একটা কথা মনে হইল । তিনি মোটর গাড়ী, ইত্যাদি আমাদের বিবেচনায় অনাবশ্বক বিস্তুর বিদেশী জিনিষ ব্যবহার করিতেন । আমরা অনেকে তাহা করি না । কিন্তু তিনিই যে সকল কাপড়ের কল স্থাপন করিয়া গিয়াছেন, তাঙ্গ হইতে আমাদের মত হাজার হাজার লোকের কাপড় সম্বন্ধে স্বদেশীব্রত পালন সম্ভব হইয়াছে। আবার তাঙ্গরই চেষ্টার ফলে আমরা দেশী লোহ ইস্পাত এবং তন্নিৰ্ম্মিত দ্রব্য ও পাইব । সুতরাং কেহ বিলাতী জিনিস ব্যবহার করেন বলিয়াই তাহাকে দেশের শক্র বা স্বদেশর বিরোধী মনে করা উচিত নয়। তিনি “স্বদেশী”র জঙ্গ কি করিতেছেন তাহাও দেখা উচিত। অবশু সকলেই যদি বিলাতী বর্জন ও দেশদ্রেব্য উৎপাদন ও ব্যবহার, দুইটাই করেন, তাহ হইলে সোণায় সোহাগ হয়। যাহা হউক, আমরা যদি মোট কাপড় পরিতে রাজী তষ্ট, ও তজ্জন্য আপাততঃ কিছু বেশী মূল্য দিতে প্রস্তুত থাকি, এবং প্রত্যেকেই কাপড়ের খরচ কিছু কমাই, তাহা হইলে স্বদেশোৎপন্ন কাপড়ে সকলেরই লজ্জীনিবারণ নিশ্চয়ই হইতে পারে। কিন্তু শীতবস্ত্র সম্বন্ধে আমাদের অবস্থা মাপাসবস্ত্র অপেক্ষা খারাপ। পঞ্জাব ও কাশ্মীর প্রভৃতি প্রদেশে দেশজাত পশমে হাতের তাতে বোন অল্প পরিমাণ গরমকাপড় পাওয়া যায় বটে ; কিন্তু বেশীর ভাগ পশমী লুই প্রভৃতি যাহা আমরা দেশী বলিয়া ব্যবহার করি, তৎসমুদয় ধারিওয়াল, কানপুর প্রভৃতি স্থানে ইংরাজদের কারখানায় প্রস্তুত হয় । ইহার পশম আমদানী করেন প্রধানতঃ অষ্ট্রেলিয়া হইতে। সুতরাং