পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s ৩য় সংখ্যা । ] মনে নিশ্চয় স্থির করিয়া রাখাতে মেলামেশা করিবার উপযুক্ত ছেলে বেণুর'ভাগ্যে জুটল না। কাজেই হরলাল তাহার একমাত্র সঙ্গী হইয়া উঠিল। অমুকুল অবস্থায় বেণুর যে সকল দৌরাত্ম্য দশজনের মধ্যে ভাগ হইয়া একরকম সহনযোগ্য হইতে পারিত তাহ সমস্তই এক হরলালকে বহিতে হইত। এই সমস্ত উপদ্রব প্রতিদিন সহা করিতে করিতে হরলালের স্নেহ আরো দৃঢ় হইয়া উঠিতে লাগিল। রতিকান্ত বলিতে লাগিল—আমাদের সোনাবাবুকে মাষ্টার মশায় মাটি করিতে বসিয়াছেন । অধরলালেরও মাঝে মাঝে মনে হইতে লাগিল মাষ্টারের সঙ্গে ছাত্রের সম্বন্ধটি ঠিক যেন যথোচিত হইতেছে না। কিন্তু হরলালকে বেণুর কাছ ইষ্টতে তফাৎ করে এমন সাধ্য এখন কাহার আছে ! 8 বেণুর বয়স এখন এগার । হরলাল এফ এ পাস করিয়া জলপানি পাষ্টয়া তৃতীয় বার্ষিকে পড়িতেছে । ইতিমধ্যে কলেজে তাহার দুটি একটি বন্ধু যে জোটে নাই তাহা নহে কিন্তু ঐ এগারে বছরের ছেলেটিই তাহার সকল বন্ধুর সেরা । কলেজ হইতে ফিরিয়া বেণুকে লইয়া সে গোলদিঘি এবং কোনো কোনো দিন ইডেন গার্ডেনে বেড়াইতে যাইত । তাহাকে গ্ৰীক ইতিহাসের বীরপুরুষদের কাহিনী বলিত, তাহাকে স্কটু ও ভিক্টর হুগোর গল্প একটু একটু করিয়া ংলায় শুনাইত--উচ্চৈঃস্বরে তাহার কাছে ইংরেজি কবিতা আবৃত্তি कब्रिश डाश তর্জমা করিয়া ব্যাপা করিত, তাহার কাছে শেক্স্পীয়ারের জুলিয়স, সাজার মানে করিয়া পড়িয়া তাহা হইতে আণ্টনির বক্তৃতা মুখস্থ করাষ্টবার চেষ্টা করিত। ঐ একটুখানি বালক হরলালের হৃদয়-উদ্বোধনের পক্ষে যেন সোনার কাঠির মত হইয়া উঠিল । একলা বসিয়া যখন পড়া মুখস্থ করিত, তখন ইংরেজি সাহিত্য সে এমন করিয়া মনের মধ্যে গ্রহণ করে নাই এখন সে ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য যাহা কিছু পড়ে তাহার মধ্যে কিছু রস পাইলেই সেটা আগে বেণুকে দিবার জন্ত আগ্রহ বোধ করে এবং বেণুর মনে সেই আনন্দ সঞ্চার করিবার চেষ্টাতেই তাহার নিজের বুঝিবার শক্তি ও আনন্দের অধিকার যেন দুইগুণ বাড়িয়া যায়। বেণু, ইস্কুল হইতে মাসিয়াই কোনমতে তাড়াতাড়ি জলপান সারিরাই হরলালের কাছে যাইবার জন্ত একেবারে মাষ্টার মশায় | ১২১ ব্যস্ত হইয়া উঠিত, তাহার মা তাহাকে কোনো ছুতায় কোনো প্রলোভনে অন্তঃপুরে ধরিয়া রাখিতে পারিত না । ননীবালার ইহা ভাল লাগে নাই । তাহার মনে হইত, হরলাল নিজের চাকরি বজায় রাখিবার জন্তই ছেলেকে এত করিয়া বশ করিবার চেষ্টা করিতেছে। সে একদিন হরলালকে ডাকিয়া পর্দার আড়াল হইতে বলিল--তুমি মাষ্টাব, ছেলেকে কেবল সকালে একঘণ্টা বিকালে একঘণ্টা পড়াষ্টবে-দিনরাত্রি উহার সঙ্গে লাগিয়া থাক কেন ? আজিকাল ও যে মা বাপ কাহাকেও মানে না। ও কেমন শিক্ষা পাইতেছে ! আগে যে ছেলে মা বলিতে একেবারে নাচিয়া উঠিত আজ যে তাহাকে ডাকিয়া পাওয়া যায় না ! বেণু আমার বড় ঘরের ছেলে, উচার সঙ্গে তোমার আত মাখামাখি কিসের জন্ত ! সেদিন রতিকান্ত অধরবাবুর কাছে গল্প করিতেছিল, যে, তাঙ্গর জানা তিন চার জন লোক, বড়মামুষের ছেলের মাষ্টারি করিতে আসিয়া ছেলের মন এমন করিয়া বশ করিয়া লইয়াছে যে, ছেলে বিষয়ের অধিকারী হইলে তাহারাই সৰ্ব্বেসৰ্ব্বা হইয়া ছেলেকে স্বেচ্ছামত চালাষ্টয়াছে। হরলালের প্রতিই ইসারা করিয়া যে এ সকল কথা বলা হইতেছিল তাহ হরলালের বুঝিতে বাকি ছিল না। তবু সে চুপ করিয়া সমস্ত সহ করিয়া গিয়াছিল। কিন্তু আজ বেণুর মার কথা শুনিয়া তাহার বুক ভাঙ্গিয় গেল। সে বুঝিতে পারিল বড় মানুষের ঘরে মাষ্টারের পদবীটা কি ! গোয়াল ঘরে ছেলেকে চুধ জোগাইবার যেমন গেরু আছে তেমনি তাহাকে বিদ্যা জোগাইবার একটা মাষ্টরও রাখা হইয়াছে—ছাত্রের সঙ্গে স্নেহপূর্ণ আত্মীয়তার সম্বন্ধ স্থাপন এত বড় একটা স্পৰ্দ্ধা যে বাড়ির চাকর হইতে গৃহিণী পৰ্য্যস্ত কেহই তাহা সহ করিতে পারে না, এবং সকলেই সেটাকে স্বর্থ সাধনের একটা চাতুরী বলিয়াই জানে । হরলাল কম্পিত কণ্ঠে বলিল, মা, বেণুকে আমি কেবল পড়াইব, তাহার সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক থাকিবে না। সে দিন বিকালে বেণুর সঙ্গে তাহার খেলিবার সময়ে হরলাল কলেজ হইতে ফিরিলই না । কেমন করিয়া রাস্তায় রাস্তায় ঘুরিয়া সে সময় কাটাইল তাহ সেই জানে। সন্ধ্য হইলে যখন সে পড়াইতে আসিল তখন বেণু মুখভার করিয়া রহিল। হরলাল তাহার অনুপস্থিতির কোনো জবাবদিহি