পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

እ6 o উপায় নাই। এই সকল মােসলমান খৃস্ট্র অষ্টম শতাব্দীতে ভারতবৰ আগমন করেন; এই সময়েই আরবগণ কর্তৃক সিন্ধুবিজয় সম্পন্ন হইয়ছিল। মোপালাগণ অদ্যপি মালাবার উপকূলে আরবের অন্ততম শ্রেষ্ঠ বংশরূপে পরিগণিত রহিয়াছেন। তৎপ্রদেশের রীতিনীতি জাচার ব্যবহার তাহীদের মধ্যে এরূপভাবে অমুকৃত হইয়াছিল যে, তাহার এখন তামিল ভাষায় কথা কহেন এবং সেই ভাষাতেই কোরণ পাঠ করেন ; ইহার ফল এই দাড়াইয়াছে যে, তাহারা ভারতবর্যের অন্তস্ক মোসলমান হইতে পৃথক হইয়া পড়িয়াছেন। থলিক মনসুরের রাজত্বকালে এবং তাহার পরেও বহুসংখ্যক ইসলাম-ধৰ্ম্ম-প্রচারক ভারতবর্ষের পূর্ব উপকুলে স্থায়িভাবে বাসস্থান নিৰ্ম্মাণ করেন এবং তাহদের বংশধরগণ বৰ্ত্তমান সময়ে তৎপ্রদেশের সুগঠিত ও সমৃদ্ধ উদারমতাবলম্বী মোসলমান সম্প্রদায় বলিয়া গণ্য হইতেছেন । ভারতবর্ষে মোসলমানের রাজ্যাধিকারই জনসাধারণের নিকট সৰ্ব্বাপেক্ষ অধিক পরিজ্ঞাত। কারণ বিপুল সৈম্ভের অভিযান সহজেই ছোট বড় সকলেরি চোখে পড়ে। খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর প্রথমভাগে সৰ্ব্ব প্রথমে মোসলমানের রাজ্যাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭১৩ খৃষ্টাব্দে মোহাম্মদ বিনকাসেম ( সাধারণ তঃ মোহাম্মদ কাসেম নামে পরিচিত ) মুলতান নগর অধিকার করেন । তৎকালে মুলতান সিন্ধু প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল । সিন্ধু প্রদেশের শাসনজন্য মোহাম্মদ যে সকল ব্যবস্থ৷ করেন, তাহ সাম্যমূলক ও স্বায়াত্মক ছিল । বস্তুতঃ মোহাম্মদের শাসনকাল মোসলেম ইতিহাসের এক উজ্জ্বলতম অংশ। মোহাম্মদ ব্ৰাহ্মণগণকে রাজস্বসংক্রান্ত প্রধান প্রধান পদে নিযুক্ত করিয় তাহাদিগকে যে সকল উপদেশ দিয়াছিলেন, তাহ পাঠ করিলে প্রতীতি জন্মে যে, তিনি একজন উচ্চশ্রেণীর রাজনীতিজ্ঞ ছিলেন এবং আকবরে যে উদারমত বিকশিত হইয় উঠে, তাহার বীজ তদীয় হৃদয়েও নিহিত ছিল। সিন্ধু অধিকারের পর সে প্রদেশে বহুসংখ্যক মসজিদ ও মোক্তক প্রতিষ্ঠিত হুইয়াছিল, বিচারকার্য্য নির্বাহ জন্যও কৰ্ম্মচারিগণ নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু হিন্দুগণের সহিত ব্যবহার কালে সমদৰ্শিতার অভাব দেখা যাইত না। মোহাম্মদ তাহাদিগকে স্ব স্ব পদ্ধতি অনুসারে পূজা অৰ্চনার জন্ম অনুমতি প্রদান করিয়াছিলেন ; কাহাকেও তাহার স্বধর্শ্বের অনুষ্ঠান করিতে নিষেধ করা হয় নাই । খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে এক নুতন বংশের অভু্যদয়ে ইসলাম পরিপুষ্ট হয়, এবং সে নুতন বংশের প্রভাব ভারতবর্ষে বিস্তৃত হইয় পড়ে। হিজির পঞ্চমশতাব্দীতে তুর্কিবংশের উন্নতিস্রোত প্রবাহিত হয়, এবং তাহার বেগে সমগ্র মোসলমানজাতি আলোড়িত হইয় উঠে। এই বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরুষ সুলতান মাহমুদগজনী। ইনি ১•১ হইতে ১·৩ খৃষ্টাব মধ্যে ত্রয়োদশ কি চতুর্দশ বার ভারতবর্ষ আক্রমণ করিয়াছিলেন। সামরিক কীৰ্ত্তিলাভ, দেবমূৰ্ত্তির ধ্বংসসাধন এবং সোমনাথ ও মধুর প্রভৃতি স্থানের মন্দিরসমূহের ধনরত্ব লুণ্ঠন তাহার ভারতীক্রমণের উদেগু ছিল । মোহাম্মদ-বিম-কাসেম জলপথে সিন্ধু প্রদেশ আক্রমণ করিয়াছিলেন। স্বলতান মাহমুদ গজনী ভারতের পশ্চিমেত্তর সীমাস্তবত্তী গিরিপথে ভারতবর্ষে প্রবেশ করেন । এই সময় আফগানিস্থান ভারত প্রবেশের স্বাররূপে পরিণত হয় । যে সকল আরব সেনাপতি ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন, তাহারা সকলেই ইরাণের শাসনকৰ্ত্তার অজ্ঞাধীন ছিলেন, ইরাণের শাসনকৰ্ত্ত আবার বোগদাদের খলিফার অধীন ছিলেন। কিন্তু আফগালিস্থানের পথগামী আক্রমণ কারীরা স্বস্বপ্রধান ছিলেন, কাহারও আজ্ঞাধীন ছিলেন না। এই কারণ তাহাদের যুদ্ধপ্রণালী অধিকতর স্বসম্বন্ধ ও সুদৃঢ় ছিল। ই হার ক্রমে ক্ৰমে ভারতবর্ষেই স্থায়ি নিবাস নির্দেশ করেন। সুলতান মাহমুদ গজনীয় পরে ভারতবর্ধ মোসলমান কর্তৃক বহুবার আক্রান্ত হইয়াছে, এবং ভারত [१भ छाशं । SAASAASAASAASAASAASAASAASAASAAAS বৰ বা মােসলমান বশ অদ্ভুদ ঘটছে। তৎসরে ইতিহাস সন্ধি বিগ্রহ, বিপ্লব বিদ্রোহ এবং পারিবারিক কলহের বিরক্তিজনক বিষয়শেই পরিপূর্ণ। তবে এই সময় মধ্যে কতিপয় মনোজ্ঞ ৰ৷ তেজোগর্ত চরিত্র ও ইতিহাসের পৃষ্ঠায় অঙ্কিত হইয়াছিল; দৃষ্টান্ত স্বরূপ জামরা স্বলতান রিজিয়ার নাম উল্লেখ করিতে পারি। ইনি নারী হইয়াও পুরুষ বেশে অশ্বে আরোহণ করিতেন। দুই একজন ধৰ্ম্মাত্মা নরপতির বিষয়ও উল্লেখ করা যাইতে পারে। ইহারা নিজেদের ভরণপোষণ নির্বাহীর্থে এক কপর্দকও রাজকোষ হইতে গ্রহণ করিতেন না। মোসলেম শাস্ত্রের আদর্শানুসারে অবসরকালে কোন প্রকার ব্যবসায় দ্বার অর্থ উপার্জন করিয়া আপনাদের ব্যয় নিৰ্ব্বাহ করিতেন । কিন্তু ভারতে মোগল রাজশক্তির অভু্যদয়ের পূর্বে যে সকল সুলতান শাসন কাৰ্য্য নিৰ্ব্বাহ করিয়াছেন, তাহারা সাধারণত: সঙ্কীর্ণচেতা অমুদার শাসনকৰ্ত্তা ছিলেন, এবং সুশাসন অথবী লোকহিতকর অভিনব ব্যবস্থার প্রবর্তন দ্বারা কালপৃষ্ঠে চিন্তু অঙ্কিত করিতে পারেন নাই। মোগল নাম ঠিক নহে, তাহাদিগকে চাঘটাই তুর্কি নামে অভিহিত করাই সঙ্গত। মোগলগণ বাবরের নেতৃত্বে হিন্দুস্থান জয় করিবার উদ্দেষ্ঠে আগমন করেন। উদ্যান, সরিৎ, ফল এবং মুর তাহদের প্রিয় ছিল। মোগলগণ কষ্টসহিষ্ণু ও পরিশ্রমী ছিলেন, তাহার সর্বপ্রকার শ্রমসাধ্য ক্রীড়া ভাল বসিতেন। কিন্তু এই বলিষ্ঠ জাতির নিকট সঙ্গীত, কবিতা এবং সাহিত্যও উপেক্ষিত হইত না ; তাহারা তৎসমুদ্বয়ের চর্চাতেও অবহিত থাকিতেন। মোগলরমণীগণ বিনা অবগুণ্ঠনে পুরুষ সমাজে উপস্থিত হইতেন । রাজার মন্ত্রণকক্ষেও মোগলরমণীর প্রভাব পরিলক্ষিত হইত। পিতৃত্বস প্রভৃতি ধৰ্মীয়সী আত্মীয়াগণের প্রতি মোগলগণ সাতিশয় শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করিতেন। গোলবদন বেগম নিজে কবিতা রচনায় পারদর্শিনী ছিলেন ; গুহার ভ্রাতু-পুত্রী সেলিম সুলতান বেগমও উৎকৃষ্ট কবিতা রচনা করিতে পারিতেন । র্তাহার পুস্তকালয়ে তৎকালে আমীর ওমরাহগণ যে সকল পুস্তক পাঠ করিতেন, তাহার একখানি করিয়া সংগৃহীত হইত। অনেকের বিশ্বাস যে, ঈদৃশ মোসলমান রমণীর সংথ্য অত্যয়, কিন্তু এই বিশ্বাস ভুল ; বহুসংখ্যক মোসলমানরমণীর নাম ইতিহাসের পৃষ্ঠায় স্বর্ণীক্ষরে লিখিত রহিয়াছে, ভবিষ্যতেও লিখিত হইবে । ঐসকল ব্যক্তির ইস্থাও মত যে, ইসলাম বহুগুণের আকর, কিন্তু স্ত্রীজাতির স্বত্ব ও অধিকার সম্বন্ধে প্রশংসার যোগ্য নহে জাহাঙ্গীর মদ্যপানে বিভোর হইয়৷ সময় ও শক্তি নষ্ট করিতেন, আর তদীয় মহীয়সী মহিষী মুরজাহান প্রকৃত পক্ষে মোগল সাম্রাজ্যের শাসন কার্ধে ব্যাপৃত থাকিতেন। রাজমুদ্রায় জাহাঙ্গিরের নামের পার্থে নূর জাহানের নামও অঙ্কিত থাকিত। আওরঙ্গজেবের দুহিত জেব উল্লিস। বেগম কোরাণের টীকা লিখিয়াছিলেন : তত্ত্বাতীত উtহার রচিত বহুসংখ্যক পারসী কবিতাও বিদ্যমান রহিয়াছে। পরবত্তী কালে গাজিয়াম্বাদ. নগরের প্রতিষ্ঠাতা গাজি উদ্দীনের সহধৰ্ম্মিণী গুন্ন বেগম উর্দুভাষায় কবিতা রচনা করিতেন ; স্বয়ং কবি সোঁদ গুল্লাবেগমের শিক্ষাদাতা ছিলেন। এরূপ কথিত আছে যে, গুন্ন বেগমের শুভবিবাহের সম্বন্ধ প্রথমতঃ অযোধ্যার নবাব সফদার জঙ্গের সহিত ঠিক হইয়াছিল, কিন্তু পরে তাহার পরিণয়ক্রিয় মোগলসাম্রাজ্যের উজীরের সস্থিত সম্পন্ন হয়। ইহার ফলে বাদশাহের সহিত নবাবের মনোমালিন্ত ঘটে ; মোগল সাম্রাজ্যের ধ্বংস পৰ্য্যন্ত এই মনোমালিগু সমভাবে ছিল। এই প্রসঙ্গে ভূপালের ভূতপূর্ব বেগমের নামের উল্লেখও অত্যাবস্তক। ইনিও সাহিত্যক্ষেত্রে অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় প্রদান করিয়া গিয়াছেন। আমাদের নিজের অভিজ্ঞতা হইতে ইং নিঃসলেহে নির্দেশ করা যাইতে পারে ষে জস্থাপি ভারতীয় মোসলেম সমাজের পর্দার অন্তরালে সাহিত্যিকপ্রতিঙ্গ লুকায়িত রহিয়াছে।