পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা । ] যে সকল স্থনীতি ও কুসংস্কার প্রবিষ্ট হইয়া মোসলেম সমাজের ভিত্তিভূমি জীর্ণ এবং মোসলমানগণকে অধঃপতিত করিয়াছে, মোসলমানমহিলার প্রাগুক্ত গুণ বর্ণন দ্বারা তৎসমুদ্বয়ের সমর্থন আমাদের উদ্দেপ্ত নছে। এই সকল দৃষ্টাস্তের উল্লেখ করিয়া ইহাই প্রতিপন্ন করা হইতেছে যে মোসলেমসমাজেরও পুনরুত্থান অসম্ভব নহে। বৰ্ত্তমান উদীয়মান মোসলমান সম্প্রদায় ক্রমশঃ বুঝিতে পারিতেছেন যে, পাশ্চাত্য দেশে স্ত্রীজাতির যে স্বস্নিগ্ধ প্রভাব ও প্রসন্নদৃষ্টি জীবন উন্নত ও মধুর করিয়া তুলে, তাহ হইতে মোসলমানগণ সামাজিক দুর্নীতি ও কুসংস্কার নিবন্ধন বঞ্চিত্ত রহিয়াছেন। ভারতবর্ষে এই পাশ্চাত্য আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করিবার জন্য পরলোকগত জজ বদর উদ্দীন তায়েবজির স্যায় আর কেহই একাগ্রচিত্তে যত্ন করেন নাই, এবং এতদ্বিষয়ে তিনি যে প্রকার সফলকাম হইয়াছেন, তদনুরূপ সাফল্যও আর কেহ লাভ করিতে পারেন নাই । আকবরের চরিত্র ও তদীয় ইতিহাসপরিকীৰ্ত্তিত ব্যবস্থা সকল সৰ্ব্বজনপরিজ্ঞাত । আকবর অবিচলিত সাহস এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির অধিকারী ছিলেনু। তিনি আপনার শক্তি সামর্থ সৰ্ব্ব শ্রেণীর মধ্যে ন্যায় ও সাম্যের প্রসারণ কল্পে নিয়োজিত করিয়াছিলেন | আকবর শাহ শাসনব্যাপারে দুইজন প্রতিভাশালী রাজপুরুষের সহায়তা লাভ করিয়াছিলেন ; একজন রাজ তোডরমল, অপরজন জয়পুরাধিপতি মহারাজ জয়সিংহ (মানসিংহ ? ) রাজস্বসংস্কারকার্য্যে তোডরমল বাদশাহের দক্ষিণহস্ত স্বরূপ ছিলেন । মহারাজ জয়সিংহ অতি বিশ্বস্ত সেনাপতি ছিলেন ; তিনি রাজাদেশে কাবুলে যুদ্ধকার্য্যে লিপ্ত হন এবং তদুপলক্ষে যে গভীর রাজভক্তির পরিচয় · প্রদান করেন, তাহ রাজাপ্রজ উভয়েরই মহত্বসূচক ছিল। এই দুইজন রাজপুরুষের সহায়তায় আকবরশাহ যথার্থ লোকহিতকর রাজব্যবস্থা সকল প্রবর্তন করেন ; সাম্রাজ্যবাদী ইংরাজও এই সকল ব্যবস্থা আলোচনা করিয়া তৎসমুদায়:সবিশেষ প্রশংসার যোগ বলিয়া স্বীকার করিয়াছেন। পাঠানভূপতি সের শাহ প্রভৃতি পূর্ববর্তী রাজস্যগণ শাসননীতির যে রেখাপাত করেন, আকবর তাছাই পরিস্ফুট করিয়া তুলেন, ইহা যথার্থ। কিন্তু সকলেই অন্যের ভিত্তির উপর নির্মাণ করিয়াছেন। সমস্ত ব্যবস্থার উপর তাহীর মনস্বিতীর যে ছাপ পড়িয়াছিল, তাহাই তাহার কৃতিত্ববাচক। যে দেশে একজাতি অন্তজাতির বিরুদ্ধাচরণ করে এবং রাজনীতিতে ধৰ্ম্মবিদ্বেষ প্রভাব বিস্তৃত করে, সে দেশের উন্নতি ও সমুদ্ধি কখনও স্থায়ী ও দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে না, কিন্তু জনসাধারণের একতা, সহযোগিতা, রাজামুগত্য ও রাজনৈতিক আস্থাই রাজ প্রজা, উভয়েরই মুখের নিদান,—আকধর শাহ রাজনীতির এই মূল স্বত্র উত্তমরূপে হৃদয়ঙ্গম করিয়াছিলেন। নানা কারণে মোগল সাম্রাজের অবনতি ও অধঃপতন ঘটিয়াছিল। জাকষর শাহের উত্তরাধিকারিগণ মধ্যে তেঞ্জস্বী ও বিচক্ষণ রাজার অভাব ছিল না । কিন্তু ঠাহীদের কাহারও সৰ্ব্বস্থানে সৰ্ব্ববিষয়ে লোকের মনোরঞ্জন করিয়া তাহাদিগকে আপনার পক্ষপাতী করিয়া তুলিবার ক্ষমত। ছিল না; যে কাৰ্য্যপটুতা, পরিশ্রম এবং গঠনশক্তি কল্পনাকে কার্য্যে পরিণত করিবার জন্ত মানুষকে সমর্থ করে, তাহারও অভাব ছিল। আমীর ওমরাহগণের হিংস দ্বেষ এবং ষড়যন্ত্রও মোগল সাম্রাজ্য বিনাশের প্রবল কারণরূপে নির্দেশ করা যাইতে পারে। আকবরও এই কারণের মুলোচ্ছেদ করিতে পারেন নাই। তারপর তদীয় উত্তরাধিকারিগণের রাজত্বকালে যখন কঠোর শাসননীতির সহিত হিন্দুবিদ্বেষ মিলিত হয়, তখন আমীর ওমরাহগণের হিংস, দ্বেষ ও ষড়যন্ত্র পুনৰ্ব্বার নধতেজে দেখা দেয় । মোগল সাম্রাজ্যের ধ্বংসের পক্ষে উহ। অপেক্ষাও গুরুত্তর কারণ উপস্থিত হইয়াছিল। বেতনভোগী সৈন্তগণ কৰ্ম্মবিমুখ ও বিশৃঙ্খল হইয়। পড়ে। তাহাদিগকে নিয়মামুগত করিয়া তুলিবার শক্তি বাদশাহগণের श्लि न ! cष नकल गएछङ्ग पांहवरण cभां★णनांबांज थऊिलेिऊ ভারতীয় মোসলমান । (t) হইয়াছিল, বীরকীৰ্ত্তি লাভ তাহদের জীবনের লক্ষ্য ছিল। আর যে সকল সৈন্তের অপকাৰ্য্যে সে সাম্রাজ্য ধ্বংস প্রাপ্ত হয়, তাহারা দুৰ্ব্বলচেত ছিল। এই সকল সৈন্তু শৌর্য্যবীৰ্য্যশালী ছিল, কিন্তু তাহীদের একযোগে কাজ করিবার উপযুক্ত নৈতিক স্বলের অভাব ছিল। ভারতীয় মোসলমানের স্বৰ্ত্তমান অবস্থা সম্বন্ধে আলোচনা করিবার সময় দেখা যায় যে, তাহাদিগকে ইংরাজ কখনও অনুগ্রহ প্রদর্শন করিয়াছেন, কখনও বা বিষদৃষ্টিতে দেখিয়াছেন; ইহা বিচিত্র বলিয়৷ বোধ হয়। ওয়ারেন হেষ্টিংস ক্যাথলিক মতাবলম্বী পৃষ্ঠান ছিলেন ; কিন্তু তিনি এবং তাছার অধ্যবহিত পরবত্তী এঙ্গলোইণ্ডিয়ান সম্প্রদায় মোসলমানের চরিত্রে অনেক সদগণ দেখিয় তাহদের প্রতি আকৃষ্ট হন, সৰ্ব্বেপার তাহারা মোসলমানের ইতিহাস অবগত ছিলেন, এবং তৎপ্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিতেন। সিপাহৗধুদ্ধের পর ভারতীয় মোসলমান অকারণে ইংরেজের বিষদৃষ্টিতে পতিত হন; কারণ, ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ করদরাজ মনপ্রাণে রাজভক্ত ছিলেন, এবং তদীয় বিচক্ষণ মন্ত্রী সার্ সলর জঙ্গ কাৰ্য্যতঃ দক্ষিণপথ ও মধ্যভারতের শাস্তি রক্ষা করিয়াছিলেন । মোসলমান সম্বন্ধে ইংরেজের অবিশ্বাস ও সন্দেহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইতে থাকে ; অবশেষে ওয়াহেবী মতের প্রচারে র্তাহীদের অবিশ্বাস ও সন্দেহ তথাকথিত প্রত্যক্ষ কারণের উপর স্থাপিত হয়, এবং তজ্জন্ত ১৮৬৪ হইতে ১৮৭১ খৃষ্টাদ পর্যন্ত গবৰ্ণমেন্ট নিজ হইতে অনেক অভিযোগ আনয়ন করেন । কিন্তু তৎকালেও স্থির ধীর ব্যক্তি সকল কতিপয় লোকের অপরাধের জন্য সমগ্র মোসলমান সমাজকে দায়ী করিবার প্রতিকূলে অভিমত প্রকাশ করেন; কারণ, মোসলমান সমাজের পূর্ব ইতিহাস ও ধৰ্ম্মসম্বন্ধীয় মতামত পাঠ করিলে হৃদয়ঙ্গম হয় যে রাজদ্রোহিত। সে সমাজে অতি ঘৃণ্য পাপ বলিয়া পরিগণিত। ভারতীয় মোসলমানের ইতিহাসে বা ধৰ্ম্মে এরূপ কিছুই নাই, যাহা প্রকৃতিপুঞ্জের উন্নতি ও স্বাধীনতাবদ্ধক সাম্রাজ্যের অধিবাসীরূপে উচ্চ স্থান গ্রহণের পক্ষে বিরোধী। সম্প্রতি ইংরেজগবর্ণমেণ্টের সহিত মোসলমানের সম্বন্ধ ক্রমশ: সম্ভাব ও সহৃদয়ত৷ পূৰ্ণ হইতেছে। সাম্প্রদায়িকতা পরিত্যাগ পূর্বক সমগ্র ভারতের সৰ্ব্বোত্তম কল্যাণের দিকে স্থির লক্ষ্য রাখিয়া এক সম্মিলিত স্বদেশহিতৈষী দল স্থাপনের সময় আগত হইয়াছে। হিন্দু অথবা ভারতীয় অন্য কোন জাতির প্রতি অন্ধ ও অনমনীয় বিদ্বেষ মোসলমানের জাতীয় প্রতিষ্ঠার ভিত্তি নহে। মোসলমান নেতৃগণ নৈতিক বল, স্বাধীনচিত্তত ও আনুগত্যের মুসন্মিলন, লক্ষ্যের অকপটত এবং সৰ্ব্বোপরি সাধুতা, সত্যবাদিত এবং রাজভক্তি প্রদর্শন করিয়াছেন এবং ভবিষ্যতেও করিবেন । ভারতীয় মোসলমানের উন্নতি, অবনতি, ঠাহীদের নিজ হন্তেই নির্ভর করিতেছে। সমগ্র পৃথিবীতে মোসলমানের সংখ্যা ২৫ কোটি ; তন্মধ্যে ভারতীয় মোসলমান সওয়া ছয় কোটি ; লোক সংখ্যার হিসাবে ভারতে মোসলমান অপ্রধান বা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করিয়া রহিয়াছেন ; কিন্তু উহাদের জনসংখ্যা হিন্দুর অপেক্ষা দ্রুতবেগে বৃদ্ধি পাইতেছে ; এবং যদি মোসলমান আপনাদের নৈতিক বল কতদূর তাহ উপলব্ধি করিতে পারেন, তবে তাহদের প্রভাব লোকসংখ্যার অনুপাত অপেক্ষ অধিক হইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই। কাশ্মীর ও পূর্ব বঙ্গের মোসলমানের পল্লীবাসী কৃষক ও দরিদ্র ; তজ্জ্ব্যতীত আর সকল স্থানেই মোসলমানগণ সাধারণতঃ নগরেই বাস করিয়া থাকে। মোসলমান শিল্পিকুল প্রসিদ্ধ এবং প্রাচীন। চিকিৎস ও আইন প্রভৃতি ব্যবসায়ে মোসলমানগণ সম্মানভাজন হইয়া রহিয়াছেন ; অশ্বগু এই সকল ব্যবসায়ে তাহদের সংখ্য আরও ঘদ্ধিত হওয়া আবঙ্গক। শাসনবিভাগে চরিত্রের দৃঢ়ত। বহুদৰ্শিতা ও পরিশ্রমপটুতা প্রভৃতি গুণের জীবগুক, এই সকল গুণগ্রামেও মোসলমান শ্রেষ্ঠ, মোসলমানী সাহিত ওজস্থিত ও সৌন্দর্ঘ্যগুণে