পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত প্রযত্বের ফলদায়িতা ; ৩য় সংখ্যা । ] “জাতিভেদ সকলেরই জন্য” এই কথার পরিবর্তে “প্রত্যেক 象 ব্যক্তিই আপনার জন্য ।” অজ্ঞাতসারে ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে, ইংরাজ কর্তৃপক্ষ উক্ত মৰ্ম্মানুযায়ী অনেক কাজ করিয়াছেন। তাহার দৃষ্টান্ত— লর্ড বেটিঙ্ক কর্তৃক ১৮৩৩ খৃষ্টাব্দের একটি গুরুপরিণামগর্ভ রাজবিধির ঘোষণা । কিন্তু তিনি যে উছার সমস্ত ভাবী পরিণাম পূৰ্ব্ব হইতেই বুঝিয়াছিলেন তাহ সম্ভব বলিয়া মনে হয় না । ১৮৩৩ খৃষ্টাব্দের রাজবিধিই ভারতের “স্বত্বাধিকারের ঘোষণাপত্ৰ” কিম্ব আরো ঠিক্‌ করিয়া বলিতে গেলে, উহা সাম্যনীতির সনন্দ । উহাতে এইরূপ ঘোষণ করা হইয়াছিল যে, “ভবিষ্যতে ভারতবাসী কোন লোক, কিম্বা মহামহিম ইংলণ্ডেশ্বরের ভারতবাসী কোন প্রজ,— কি ধৰ্ম্মভেদ, কি দেশভেদ, কি জাতিভেদ—এরূপ কোন ভেদ বশতঃ কোন সরকারী উচ্চপদে কিম্বা সরকারী কোনও প্রকার কৰ্ম্মে নিয়োজিত হইবার অধিকার হইতে বঞ্চিত হইবেক না ।” - আমি বেশ কল্পনা করিতে পারি—চিন্দুদের নিকট এই সুসমাচার যখন প্রথম পঠিত হয়, তখন তাহাদের অবস্থা কিরূপ হইয়াছিল ; তাহারা ই করিয়া শুনিয়াছিল—উহার প্রকৃত মৰ্ম্ম কিছুই বুঝিতে পারে নাই ; কিন্তু একটু পরেই বুঝিল,—যে প্রকার ভেদাভেদ তাহারা মানিয়া চলে, ইংরাজসরকার সে সমস্ত তুচ্ছ করিতেছে—ভারতের অকাট্য ও জটিল বর্ণভেদ প্রথাকে উহার আমলে অনিতেছে না । সকল জাতিই সমান—এষ্ট নুতন কথা, এই অদ্ভুত কথা ইহার পূৰ্ব্বে তাহার কখন শুনে নাই। তাই অনেকেই এই সাম্যনীতির নিন্দাবাদ করিতে লাগিল । কিন্তু যাহার ইহার পক্ষ অবলম্বন করিল তাহারা অচিরাং ধনশালী হইয়া छेठिंल । আরো একটা গুরুতর কথা । বংশমর্য্যাদার খাতিরে কাছাকে কোন সরকারী কাজে নিযুক্ত করা হইবে না। শুধু তাহী নহে, সরকারের অধীনে কোন সামান্ত কাজ পাইতে হইলেও পরীক্ষা দিতে হইবে—প্রতিযোগিতায় পরীক্ষা দিতে হইবে। • এই প্রতিযোগিতায় পরীক্ষা-প্রথা যার পর নাই (democratic) গণতন্ত্রমূলক । যেমন, সমসাময়িক ভারত । occ কাশীর রাজা বলিয়াছিলেন,—“ছুতার কামার প্রভৃতি নীচ জাতির লোকেরাও এখন কোন প্রদেশের জজ, ম্যাজিষ্ট্রেট হইতে পারে ;–একজন ব্রাহ্মণের উপরেও হুকুম জারি করিতে পারে। এ কি সহ্য হয় ?” অবশেষে রাজা বলিয়া উঠিলেন —“গণতান্ত্রিক শাসন ভারতে প্রবর্তিত করা নিতান্তই অসঙ্গত”। অসঙ্গতই হোক, আর সুসঙ্গতই হোক, এই শাসনপদ্ধতিই ভারতে এখন প্রচলিত হইতেছে ; সুতরাং এই পদ্ধতির নিকট এখন বর্ণ-ভেদ প্রথাকে নতশির হইতেই হইবে । কিন্তু ইংরাজ এ সম্বন্ধে বেশী দূর অগ্রসর হন নাই। ইংরাজসরকার যেমন রাজবিধির দ্বারা দাসত্ব প্রথা রহিত করিয়াছিলেন, সেইরূপ রাজবধির দ্বারা বর্ণ-ভেদ প্রথা রহিত করেন নাই। হিন্দুসমাজকে ভূমিসাৎ করা—সাম্যতন্ত্রের পদ্ধতি-অনুসারে সমস্ত একাকার করিয়া তোলা—এ বিষয়ে ইংরাজ সরকারের কোন বিশেষ প্রযত্ন ছিল না । ইহার ‘জ্ঞান-পাপী নহেন । তবে বর্ণ-ভেদ প্রথা সম্বন্ধে তাহারা যে কতকটা অজ্ঞাতসারে ‘পাপ করিয়াছেন তাহাতে সন্দেহ নাই । এখন সেই ‘পাপের ফল ফলিতে আরম্ভ হইবে । আরো দেথ, এই বর্ণভেদ প্রথা, আজিকালকার চালচলনের প্রতিকূল। ইস্কুলের বেঞ্চি গুলা অনেক সময়ে বিভিন্ন বর্ণকে—বিভিন্ন জাতিকে পরস্পরের কাছাকাছি আনিয়া দেয়। শাস্ত্রীয় বিধিনিষেধের দ্বারা, হিন্দুর পূতদেহে যেটুকু অনন্তশৃষ্ঠ মাহাত্ম্য ছিল, তাহ সহপাঠীদিগের দৈনন্দিন সংসর্গে, দৈনন্দিন সংস্পর্শে, দৈনন্দিন সহবাসে ক্রমশ হ্রাস প্রাপ্ত হইতেছে ; ভেদাভেদের দুলঙ্ঘ্য প্রাচীরটা ক্রমেই ভাঙ্গিয়া যাইতেছে। এখন হয় ত বাধ্য হইয়া অনেক সময় এক এ খাষ্টতে হয়, শুইতে হয়, এক গাড়ীতে যাতায়াত করিতে হয়। এখন ভ্রমণের সুবিধা হইয়াছে, সভাসমিতির ছড়াছড়ি হইয়াছে, রাষ্ট্রীয় মহাসভা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে— সুতরাং এখন পরম্পরের সহিত মেলামেশার কোন বাধা নাই। এখানকার স্ত্রীলোকেরা যেরূপ অবগুণ্ঠনের মধ্যে প্রচ্ছন্ন, এথানকার পুরুষেরাও সেইরূপ কতকগুলা অন্ধংস্কারের দ্বারা পরস্পর হইতে বিচ্ছিন্ন। সভ্যতার মহা দিন সমাগত হইলে এই দুই পর্দাই যে খসিয়া পড়িৰে তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। যে সকল আচার ব্যবহারের প্রতি