পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫৬ প্রথা যে সকল বিষয় নিষেধ করিয়া আসিয়াছে, এখন হয় ত তাহাই বাধ্য হইয়া গ্রহণ করিতে হইতেছে । এখন ব্রাহ্মণ হীনতা স্বীকার করিয়া হাতের কাজে—শ্রমের কাজে প্রবৃত্ত হইতেছে, কিন্তু এমন দিন শীঘ্রই আসিবে যখন এইরূপ কাজকে ভিক্ষাবৃত্তি অপেক্ষা সন্মানজনক বলিয়া মনে করিবে। একটা দৃষ্টান্ত দিই। এখনকার কালের গতি কোন দিকে, ইহার দ্বারা তাহার আভাস পাওয়া যাইবে । শব স্পর্শ করা একটা অপবিত্র কাজ। পূৰ্ব্বে এদেশে এই কাজটা কতকগুলা ঘৃণিতজাতির একচেটিয়া ছিল। কিন্তু শবচ্ছেদ ব্যতীত চিকিৎসাসম্বন্ধীয় কোন শিক্ষাই হইতে পারে না ; চিকিৎসাবিদ্যার পরীক্ষায় প্রশংসাপত্রও পাওয়া যায় না। যে হিন্দু ছাত্র, শবচ্ছেদের টেবিলের উপর, শবদেহে প্রথম চুরী চালনা করে, সে অশ্রুতপূৰ্ব্ব সাহসের পরিচয় দিয়াছিল সন্দেহ নাই। কিন্তু আজকাল ইহাকে, সাহসের কাজ বলিয়া কে মনে করে ? এইরূপে, একে একে বর্ণবিশেষের একচেটিয়া চলিয়া যাইতেছে। এখনকার হিন্দুসমাজ প্রথমে একটুকর জমিরও দখল ছাড়িতে চাহে ন, পরে একটু একটু করিয়া পিছু হটতে থাকে, এবং যখন কিছুতেই পারিয়া উঠে না, তখন ধীরগম্ভীরভাবে দখল ছাড়িয়া দেয়। এদেশে আর্থিক অবস্থারও অনেকটা পরিবর্তন ঘটিয়াছে। হঠাৎ নবাব, ধনশালী ব্যক্তি, কুঠিওয়াল, বাণিজ্য ব্যবসায়ী— এই সব লোক বড় বড় সহরে ( যেখানে তাঁহাদের কুলের খবর বড় একটা কেহ জানে না ) সহজেই পদমর্য্যাদা লাভ করিয়া থাকে। আবার, ব্রাহ্মণ পণ্ডিতকে প্রভূত অর্থদান করিয়াও কখন কখন তাহারা এই পদমর্য্যাদাকে বৈধ করিয়া লয়। বেণেদের উপর লোকের যে ঘৃণা ছিল তাহা ক্রমশই এখন চলিয়া যাইতেছে। অন্ততঃ যখন তাহারা খুব ধনশালী হইয়া উঠে, ও ধনের সদব্যবহার করে, তখন লোকে তাহাদের প্রতি সন্মান প্রদর্শনে ক্রটি করে না। বস্তুতঃ, উচ্চ বর্ণের লোকেরা আজকাল বণিকৃবৃত্তি ও শিল্পকৰ্ম্মকে ততটা ঘৃণার চক্ষে দেখে না। আমি পূর্কেই বলিয়াছি, হাতের কাজ ও কায়িক শ্রমের কাজ এখন আর হীন বলিয়া বিবেচিত হয় না। যে সব ব্যবসায় জ্ঞানবিজ্ঞান প্রবাসী । উচ্চবংশীয় লোকের বিদ্বেষ ছিল, সহস্রবৎসরব্যাপী প্রচলিত সাপেক্ষ, বর্ণভেদ প্রথার সহিত তাহদের বড় একটা বিরোধ [ ৭ম ভাগ। নাই। একজন ব্রাহ্মণ এখন ইচ্ছা করিলে ফোটো-চিত্রকরের ব্যবসায় অবলম্বন করিতে পারেন। এ ব্যবসায়টা হিন্দু শাস্ত্রের নিকট অপরিচিত ছিল, সুতরাং হিন্দু শাস্ত্রে ইহার কোন নিষেধ নাই! অতএব, হাতের কাজের বিরুদ্ধে যে অন্ধ সংস্কার ছিল তাহা ক্রমেই অন্তর্হিত হইতেছে। বিলাতীভাবাপন্ন হিন্দু সমাজ এখন মুখস্থবিধার মর্য্যাদা বুঝিতে আরম্ভ করিয়াছে। মুনি ঋষির বংশধরেরা এখন— খুৰ মৃদুস্বরে—টেলিফোনের বন্দন গান এবং পার্শির উচ্চকণ্ঠে ধনের জয়গান করিতেছে। “একজন পার্শি তাহার পাশের লোককে জিজ্ঞাসা করিল,—পৃথিবীর মধ্যে কোন জাতি সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ ; দুইজন একসঙ্গে বলিয়া উঠিল – *মার্কিন দেশ।” ইংরাজ-শাসনে, লোকের অবস্থা-বিপৰ্য্যয়ও ঘটিয়াছে। যে সকল লোক, বহুশতাব্দী হইতে অস্তান্ত বর্ণের ঘৃণার পাত্র হইয়া-পদদলিত হইয়া জীবনযাপন করিতেছিল— ধাহীদের না ছিল ধৰ্ম্ম, না ছিল শাস্ত্র—সেই সব পারিয়ার এখন ক্ষমতাশালী হইয়া উঠিয়াছে। আর যাই হোক, এই সকল পারিয়া কতক গুলা অন্ধ সংস্কার হইতে বজ্জিত ছিল : তাই শ্রমশিল্পের উদ্যোগীগণ তাহাদিগকে ডাকিয়া লইলেন। তাহারাই এখন এই সব নূতন শিল্প-ব্যবসায়ে সমৃদ্ধ হইয়া উঠিয়াছে। এই বর্ণভেদ প্রথা যেমন একদিকে মাটি কামড়াইয়া পড়িয়া থাকে, সেইরূপ আবার সময়বিশেষে মুইয়াও পড়ে ; কখন অপরাধী ব্যক্তিকে নির্দয়ভাবে সমাজচ্যুত করে, কখন বা অাদর দেখাইয় প্রশ্রয় দেয় ;–এইরূপ নানা উপারে আপনাকে বরাবর রক্ষা করিয়া আসিতেছে * * * সমাজচুতির দণ্ডাজ্ঞা প্রত্যাহাৰ্য্য। বহুপুরাকালে ব্রাহ্মণ-পুরোহিতদিগের উৰ্ব্বর-কল্পনা-শক্তি, অপরাধীকে সমাজে পুনগ্রহণ করিবার নিমিত্ত একটা ফলদায়ক ও সহজ অনুষ্ঠানপদ্ধতি উদভাবন করুিয়াছিল। কোন কোন প্রদেশে কালাপানি পার হওয়া এতই গুরুতর অপরাধ, যে তাহার জন্ত অপরাধীকে জাতিচু্যত হইতে হয়। কিন্তু তথাপি এ সম্বন্ধে ব্রাহ্মণপণ্ডিতদের সহিত একটা রক্ষানিষ্পত্তিও হইতে পারে। সমাজের আয়ুগত বিনীত বিদেশমাত্রী—যে প্রায়শ্চিত্ত করিয়া