পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা । ] সমসাময়িক ভারত । >Q a আবার সমাজে প্রবেশ করিতে চাহে—তাহাকে শুধু সভা পূৰ্ব্ব হইতেই কাশীর পণ্ডিতদিগের বিধান সংগ্ৰহ কতকগুলি বৈধকৰ্ম্মের অনুষ্ঠান করিয়া অবনতি স্বীকার করিতে হয় মাত্র । অতিস্থল্ম অলৌকিকগুণযুক্ত একটি বটকা—যাহাতে পঞ্চগব্যের সারাংশ আছে—সেই বটিকাটি গলাধঃকরণ করিতে হয়। তাহার পর, পুরোহিতের করকমলে কিঞ্চিৎ দক্ষিণাবর্ষণ। এই সম্মান প্রদর্শনে ও দক্ষিণদানে সমাজ পরিতুষ্ট। - অতএব দেখ, এই বর্ণভেদের সমাজ, কি তুচ্ছ মূল্যেই আপনার অধিকার ছাড়িয়া দেয়, এবং এক্ষণে যাহা নামমাত্রে পর্য্যবসিত শুধু সেই কর্তৃত্বটুকু বজায় রাখিবার জন্তই তাহার প্রাণপণ চেষ্ট। ইহা সত্ত্বেও এখনো উহা দৃঢ়ৰূপে দণ্ডায়মান। অনেক সময়, বর্ণগত ভেদাভেদ জাতিগত ভেদাভেদের উপর নির্ভর করে। এদেশে, জাতির মূল সোপান হইতে কতকগুল ছোট-ছোট শাখা-সোপান নিঃস্থত হইয়াছে, দেখিতে পাওয়া যায়। কৃতবিদ্য যুরোপীয় ও মধ্য-আফ্রিকার কাফ্রির মধ্যে যে ব্যবধান, এখানকার কাশ্মীরী পণ্ডিত ও অনাৰ্য্য ভৗলের মধ্যে সেই ব্যবধান। তাহার কারণ, আজিও বর্ণভেদ প্রথা, স্বকীয় প্রভাবপ্রতিপত্তি কতকটা বজায় রাখিয়াছে, বৈধক্রিয়াকৰ্ম্মের অনুষ্ঠান করিতেছে, শাস্ত্রের মুখ্য অনুশাসনগুলি পালন করিতেছে। অসবর্ণ বিবাহের দৃষ্টান্ত অতীব বিরল; দুই একটা যাহাও ঘটে তাহা সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম মাত্র। আজকাল বিভিন্ন জাতীয় লোকের একত্র ভোজন কতকটা সহিয়া যাইতেছে। পার্শি, মুসলমান, যুরোপীয়দিগের সহিত হিন্দুরা এক টেবিলে বসিয়া আহার করিতেছে, ইহা ত প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু যদি কেহ বিধবা বিবাহ করে, কিংবা নিকৃষ্ট বর্ণের কোন রমণীর সহিত উদ্বাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়, তাহা হইলে তাছাদের পতিত হইতে হয়। লাহোরের মন্ত্রণা-সভা (১৯০০ ) এইরূপ পরামর্শ দিয়াছিলেন,— যাহাঁদের মধ্যে একত্র আহারের চলন আছে, সেই সব শাখা-বর্ণের পরম্পরের মধ্যে বিবাহ এখনই চলিতে আরম্ভ হউক । এই প্রস্তাবট কি সমাজ-বিপ্লবকর প্রস্তাব ?-কখনই না। জাতিভেদের মূল-ভাবের সহিত ইহার বেশ ঐক্য আছে। মন্ত্রণা-সভা এইরূপ যে পরামর্শ निब्राहइन, डांशe भू{ि इहेष्ठ अtनरु आफ़ेषाम्ने दैक्षिप्रं । করিয়া রাখিয়াছিলেন । পণ্ডিতরা বলিয়াছেন, ইহা শাস্ত্রবিরুদ্ধ নহে । পুরোহিতের নিকট পাপ স্বীকার পদ্ধতি রহিত হইলেও আমাদের ধৰ্ম্ম যেমন মরে নাই,—প্ৰত্যুত রূপান্তর প্রাপ্ত হইয়াছে, প্রচ্ছন্ন আকারে রহিয়া গিয়াছে, সেইরূপ বর্ণভেদের ভাবটি যাহা অনেক সময়ে ভিন্নজাতীয় লোকের জাতিগত স্বাভাবিক সংস্কার বই আর কিছুই নহে-- সেই ভাবটি হিন্দু নব্যসম্প্রদায়ের মধ্যে এখনও রহিয়া গিয়াছে। যে কোন হিন্দুর সঙ্গেই আমার আলাপ পরিচয় হইয়াছে, প্রথমেই সে এই বলিয়া কথা আরম্ভ করে, “আমি ব্রাহ্মণ”—আমি যে ভাবে বলি -“আমি ফরাসী ।” এই জাতিভেদ প্রথা যদি শুধু একটা রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থা হইত, তাহা হইলে, ইংরাজ-শাসন ইহার উপর খুব একটা আঘাত করিতে পারিত। কিন্তু ইহা প্রধানতঃ সামাজিক ব্যবস্থা, ধৰ্ম্মমূলক ব্যবস্থা, দেশ-বিশেষের জাতীয় ব্যবস্থা। ইহাই উহার প্রতিরোধিনী শক্তির নিগুঢ় রহস্ত। যে দিন ফরাসী অভিজাতবর্গ তাহদের রাষ্ট্রনৈতিক ক্ষমতা হারাইল, সেই দিন হইতেই তাহদের অধঃপতন আরম্ভ হয়। কিন্তু তবু তাহার একটা বিশেষ শ্রেণীরূপে আমাদের সমাজের মধ্যে রহিয়া গিয়াছে। তাহদের জীবন যাপনের একটা বিশেষ ধরণ আছে, তাহদের কতকগুলি বিশেষ মতামত আছে, কতকগুলি বিশেষ অন্ধসংস্কার আছে । ছোট লোক হইয়াও যাহারা বড় লোকের ভাগ করে, সেই Snob ও পুরাতত্ত্ববেত্তার চক্ষে, এই অভিজাতবর্গই পুরাতন জিনিসের– মৃত জিনিসের একমাত্র রক্ষক । আমাদের আভিজাত্যের মত এই জাতিভেদ প্রথারও কঠিন প্রাণ– উহ! মরিয়াও মরে না । আমাদের অভিজাতবর্গের বর্তমান অবস্থা দেখিয়া এইরূপ অনুমান করা যাইতে পারে যে এখানকার জাতিভেদ প্রথারও কতকগুলা ডাল মরিয়া গিয়াছে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশের কোন কোন গাছের মত ইহারও ছায়া বিময়। বর্তমান যুগের সহিত এই প্রথার খাপ খায় না। ইহা দেশের আর্থিক শ্ৰীবৃদ্ধির অন্তরায়,— ইহ সামাজিক উন্নতির প্রতিবন্ধক। যেরূপ গুরুভার বৰ্ম্মাবরণে ইহা সমাজ-দেহকে আবৃত করিয়া রাথিয়াছে