পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>Qb" তাহাতে সমাজের চলৎশক্তি, সমাজের স্বাধীনতা, সমাজের ব্যক্তিগত চেষ্ট সমস্তই রুদ্ধ হইয়া পড়িয়াছে । এই কারণেই, —জ্ঞাতসারেই হউক বা অজ্ঞাতসারেই ইউক—সমস্ত সংস্কারকাৰ্য্য-সমস্ত পরিবর্তন আজকাল ইহারই বিরুদ্ধে নিয়োজিত। এখনও উহার ক্রিয়াকৰ্ম্ম সমান চলিতেছে, কিন্তু সমাজের বিশিষ্ট লোকেরাও এই সকল অনুষ্ঠানের অর্থ বুঝে না, কিংবা উহার উপর, তাহাদের তেমন বিশ্বাসও নাই । দিন দিন এই সকল অনুষ্ঠানের সার্থকতা চলিয়া যাইতেছে এবং উহার মন্ত্রাদি এখন কতকগুলা দুৰ্ব্বোধ্য অক্ষর মাত্রে পর্য্যবসিত হইয়াছে। যে সকল আচার অনুষ্ঠান অভ্যাস বশতঃ বহু দিন হইতে চলিয়া অসিতেছে, তাহাদের তাৎপর্য্য ও উদ্দেশু এখন বিলুপ্ত প্রায় । তাই সমাজচ্যুতির দওকেও লোকে এখন সংশয়ের চক্ষে দেখিয়া থাকে । কোন একটা ধৰ্ম্মের আশ্রয় ব্যতীত, এ দেশে সমাজসংস্কারের কোন অনুষ্ঠানই সফলতা লাভ করিতে পারে না । এই ব্রাহ্মণ্যিক ভারতে, সামাজিক সমস্ত মাত্রই ধৰ্ম্মের সমস্ত । নৈতিক ও সামাজিক সংস্কারকার্য্যে সফলতা লাভ করিতে হইলে একটা ধৰ্ম্মজাগৃতির আবশুক —কিংবা একটা ধৰ্ম্মবিপ্লবের আবশুক । এখানকার লোকেরা সাধু সন্ন্যাসী ও “বুজরুগৃ"দিগের কথা ভিন্ন আর কারও কথা বড় একটা গ্রাহ করে না । জনসাধারণের উপর —নুতন কোন আচার অনুষ্ঠানের, নূতন কোন পূজাপদ্ধতির কিংবা জাদুমন্ত্রাদির যেরূপ প্রভাব এমন অণর কিছুরই নহে। সম্প্রতি, যেখানে কতকগুলা আদিমবাসী “বুনো’র বসতি সেই গ্রাম-কে-গ্রাম মুরার ব্যবহার ছাড়িয়া দিয়াছে । যিনি এই আশ্চৰ্য্য পরিবর্তন সংঘটিত করিয়াছেন তিনি সেই পরিব্রাজক তত্ত্বদর্শী জাদুকর শ্রেণীর লোক যাহারা জঙ্গলে জঙ্গলে ভ্রমণ করিয়া বেড়ায়, যাঙ্গদের দেহ ভম্মাচ্ছাদিত, যাহাদের কেশ জটাবদ্ধ, যাহাদের দৃষ্টি বিক্ষিপ্ত । ইনি একজন সামান্ত সন্ন্যাসী মাত্র। ব্রাহ্মসমাজ ও আর্য্যসমাজ, এই দুই সমসাময়িক সম্প্রদায় যাহার সাহসপূৰ্ব্বক সমাজসংস্কারকার্য্যে অগ্রসর হইয়াছে এবং যাহারা নব-হিন্দুসমাজের বিশিষ্ট বিশিষ্ট লোকদিগকে আপনার দলভুক্ত করিয়া লইয়াছে—এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে অকপট মৌলিকতার অভাব নাই—গভীর ধৰ্ম্মভাবের প্রবাসী । [ १भ उांश । অভাব নাই। ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা রাজা রামমোহন রায় কোন ধৰ্ম্মবিশেষের ঈশ্বরপ্রেরিত ”পয়গম্বর” ছিলেন না। তিনি শুধু মনে করিয়াছিলেন,—বৌদ্ধ, ইসলাম, খৃষ্টীয় প্রভৃতি বিভিন্ন ধৰ্ম্ম হইতে পৌরাণিক অংশ ও বাহ ক্রিয়াকাগু বাদ দিয়া যদি উহাদের সারাংশ গ্রহণ করা যায়, তাহা হইলে একটা মানবসাধারণ আধ্যাত্মিক ধৰ্ম্মের প্রতিষ্ঠ হইতে পারে। বৃথা প্রয়াস ! ইহাকে একটা বিশেষ ধৰ্ম্মমত ন বলিয়া, সৰ্ব্বধৰ্ম্মসমন্বয়ের একটা পন্থাবিশেষ কিংবা বিভিন্ন ধৰ্ম্মভাবের একটা সুন্দর সঙ্কলন বলা যাইতে পারে মাত্ৰ—যাহা স্বাধীনচেত। উদারমতাবলী ব্যক্তিদগেরই উপযোগী। বস্তুতঃ রামমোহন রায় বিশেষরূপে সমাজসংস্কারেই ব্ৰতী হইয়াছিলেন। তাহারই প্রযত্নে সতীদাহ প্রথা রহিত হয় । তাহার ভক্ত ও শিষ্যগণের মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রখ্যাত কেশবচন্দ্র সমাজসংস্কারক্ষেত্রে সৰ্ব্বপ্রথমে পদক্ষেপ করেন । কেশবচন্দ্র উপবীত রহিত করিতে চাহিয়াছিলেন এবং বিধবাবিবাহ প্রভৃতি সংস্কারকাৰ্য্যে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন, জাতিভেদের সকল বন্ধনই তিনি ছিন্ন করিয়াছিলেন। তাহারই প্রযত্নে, বিবাহের বৈধবয়সের সীমা বৰ্দ্ধিত হয় এবং বিবাহে কষ্ঠার সন্মতিগ্রহণপ্রথা প্রবৰ্ত্তিত হয় । ১৯০০ এর সামাজিক মন্ত্রণাসভায়, সভাপতি মহাশয় এইরূপ সাক্ষ্য দিয়াছিলেন যে, এ দেশে যাহা কিছু সমাজসংস্কার হইয়াছে তাহ ব্ৰাহ্মসমাজ ও আর্য্যসমাজের প্ররোচনায় ও সহকারিতায় । ইহাদের শাখা-সমাজ দেশময় পরিব্যাপ্ত। ইহাদের কতকগুলি নির্দিষ্ট মত আছে, সেই সকল মত উছারা পুস্তিকাদিতে প্রকাশ করে, এবং প্রচারের জন্ত লোকও স্থানে স্থানে প্রেরণ করে। এইরূপে কতকগুলি উদারভাবের মত উহার দেশময় প্রচার করিয়াছে । পরিশেষে তাহদের সমস্ত কাৰ্য্য সামাজিক মন্ত্রণা-সভায় কেন্দ্রীভূত হয়। প্রতি বৎসর খৃষ্টমাসের সময় এই সভার অধিবেশন হইয়া থাকে। এই অবিরাম প্রচার কার্য্যের ফলে, খুব গোড়া লোকদের মধ্যেও আজকাল পরমধৰ্ম্ম-সহিষ্ণুতা ও উদারতার ভাব প্রবেশ করিয়াছে। “পুণ্যভূমি কুরুক্ষেত্রের গৌড় ব্রাহ্মণেরাও এই গৃঢ় রহস্যময় প্রভাবের বশবৰ্ত্তী হইতে আরম্ভ করিয়াছে”। ব্রাহ্মসমাজ ও আর্য্য-সমাজ জাতিচু্যত ব্যক্তিদিগকে