পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা । ] বেণু তাহার চেন ঘড়ি আংটি বোতাম সমস্ত খুলিয়া ব্যাগের মধ্যে পুরিয়া দিল । সতর্ক হরলাল সেই ব্যাগটি লইয়া তখনি আয়রন সেফের মধ্যে রাখিল । বেণু হরলালের মার পায়ের ধুলা লইল । তিনি রুদ্ধ কণ্ঠে আশীৰ্ব্বাদ করিলেন,—ম জগদম্বা তোমার মা হইয়া তোমাকে রক্ষা করুন । তাহার পরে বেণু হরলালের পাদস্পর্শ করিয়া প্রণাম করিল। আর কোনদিন সে হরলালকে এমন করিয়া প্রণাম করে নাই। হরলাল কোনো কথা না বলিয়া তাহার পিঠে হাত দিয়া তাহার সঙ্গে সঙ্গে নীচে নামিয়া আসিল । গাড়ির লণ্ঠনে আলো জলিল, ঘোড়া দুটা অধীর হইয়া উঠিল । কলিকাতার গ্যাসালোকখচিত নিশীথের মধ্যে বেণুকে লইয়া গাড়ি অদৃপ্ত হইয়া গেল। হরলাল তাহার ঘরে আসিয়া অনেকক্ষণ ধরিয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। তাহার পর একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া টাকা গণিতে গণিতে ভাগ করিয়া এক একটা থলিতে ভৰ্ত্তি করিতে লাগিল। নোটগুলা পূর্বেই গণা হইয়া থলিবন্দি হইয়া লোহার সিন্দুকে উঠিয়াছিলণ So লোহার সিন্ধুকের চাবি মাথার বালিশের নীচে রাখিয়া সেই টাকার ঘরেই হরলাল অনেক রাত্রে শয়ন করিল। ভাল ঘুম হইল না। স্বপ্ন দেখিল—বেণুর মা পর্দার আড়াল হইতে তাহাকে উচ্চস্বরে তিরস্কার করিতেছেন ; কথা কিছুই স্পষ্ট শুনা যাইতেছে না, কেবল সেই অনির্দিষ্ট কণ্ঠস্বরের সঙ্গে সঙ্গে বেণুর মার চুনী পান্না হীরার অলঙ্কার হইতে লাল সবুজ শুভ্র রশ্মির সুচি গুলি কালে পর্দাটাকে ফুড়িয়া বাহির হইয়া আন্দোলিত হইতেছে। হরলাল প্রাণপণে বেণুকে ডাকিবার চেষ্টা করিতেছে কিন্তু তাহার গল দিয়া কিছুতেই স্বর বাহির হইতেছে না। এমন সময় প্রচণ্ড শব্দে কি একটা ভাঙ্গিয়া পর্দা ছিড়িয়া পড়িয়া গেল,— চমকিয় চোখ মেলিয়া হরলাল দেখিল একটা স্ত,পাকার অন্ধকার। হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া উঠিয়া সশব্দে জান্‌লায় ঠেলা দিয়া আলো নিবাইয়া দিয়াছে। হরলালের সমস্ত শরীর ঘামে ভিজিয়া গেছে। সে তাড়াতাড়ি উঠিয়া দেশালাই দিয়া জালে জালিল। ঘড়িতে দেখিল চারটে মাষ্টার মশায় ›ፃፃ বাজিয়াছে। আর ঘুমাইবার সময় নাই—টাকা লইয়া মফস্বলে যাইবার জন্য প্রস্তুত হইতে হইবে । হরলাল মুখ ধুইয়া ফিরিবার সময় মা তাহার ঘর হইতে কহিলেন, কি বাবা উঠিয়াছিস্ ? হরলাল প্রভাতে প্রথমে মাতার মঙ্গল মুখ দেখিবার জন্ত ঘরে প্রবেশ করিল। মা তাহার প্রণাম লইয়া মনে মনে তাহাকে আশীৰ্ব্বাদ করিয়া কহিলেন-বাবা, আমি এই মাত্র স্বপ্ন দেখিতেছিলাম তুই যেন বউ আনিতে চলিয়াছিস্ । ভোরের স্বপন কি মিথ্যা হইবে ? হরলাল হাসিয়া ঘরে প্রবেশ করিল। টাকা ও নোটের থলেগুলা লোহার সিন্ধুক হইতে বাহির করিয়া প্যাক বাক্সয় বন্ধ করিবার জন্য উদ্যোগ করিতে লাগিল। হঠাৎ তাহার বুকের ভিতর ধড়াস করিয়া উঠিল—দুষ্ট তিনটা নোটের থলি শুষ্ঠ। মনে হইল স্বপন দেখিতেছি। থলেগুলা লইয়া সিন্ধুকের গায়ে জোরে আছড়ে দিল—তাহাতে শৃষ্ঠ থলের শুষ্ঠত অপ্রমাণ হইল না । তবু বৃথা আশায় থলের বন্ধনগুলা খুলিয়া খুব করিয়া ঝাড়া দিল। একটি থলের ভিতর হইতে দুইখানি চিঠি বাহির হইয় পড়িল । বেণুর হাতের লেখা—একটি চিঠি তাহার বাপের নামে, আর একটি হরলালের । তাড়াতাড়ি খুলিয়া পড়িতে গেল। চোখে যেন দেখিতে পাইল না । মনে হইল যেন আলো যথেষ্ট নাই । কেবলি বাতি উস্কাইয়া দিতে লাগিল। যাহা পড়ে তাহা ভাল বোঝে না, বাংলা ভাষা যেন ভুলিয়া গেছে। । কথাটা এই যে, বেণু তিন ছুজিার টাকার পরিমাণ দশটাকাওয়ালা নোট লইয়া বিলাতে যাত্রা করিয়াছে, আজ ভোরেই জাহাজ ছাড়িবার কথা । হরলাল যে সময় থাইতে গিয়াছিল, সেই সময় বেণু এই কাগু করিয়াছে। -লিখিয়াছে যে, “বাবাকে চিঠি দিলাম, তিনি আমার এই ঋণ শোধ করিয়া দিবেন। তা ছাড়া ব্যাগ খুলিয়া দেখিবেন তাহার মধ্যে মায়ের যে গহনা আছে তাহার দাম কত ঠিক জানি না, বোধ হয় তিন হাজার টাকার বেশি হইবে। মা যদি বাচিয়া থাকিতেন তবে বাবা আমাকে বিলাতে যাইবার টাকা না দিলেও এই গহনা দিয়াই নিশ্চয় মা আমার খরচ জোগাড় করিয়া দিতেন । আমার মায়ের