পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা । ] তাহার ব্যবহারে বুঝা যাইতেছে তখন দেশের যে সকল যুবক উত্তেজিত হইয়া উঠিয়াছেন তাহীদের প্রতি একটিমাত্র পরামর্শ এই আছে, সমস্ত উত্তেজনাকে নিজের অস্থিমজ্জার মধ্যে নিস্তব্ধভাবে আবদ্ধ করিয়া ফেল, স্থির হও, কোনো কথা বলিয়ন, অহরহ অত্যুক্তি প্রয়োগের দ্বারা নিজের চরিত্রকে দুৰ্ব্বল করিয়ে না। আর কিছু না পারে খবরের কাগজের সঙ্গে নিজের সমস্ত সম্পর্ক ঘুচাইয়া যে কোনো একটি পল্লীর মাঝখানে বসিয়া যাহাকে কেহ কোনো দিন ডাকিয়া কথা কহে নাই তাহাকে জ্ঞান দাও, আনন্দ দাও, আশা দাও, তাহার সেবা কর, তাহাকে জানিতে দাও মানুষ বলিয়া তাঁহার মাহাত্ম্য আছে, সে জগৎসংসারের অবজ্ঞার অধিকারী নহে। অজ্ঞান তাহাকে নিজের ছায়ার কাছেও ত্রস্ত করিয়া রাখিয়াছে ; সেই সকল ভয়ের বন্ধন ছিন্ন করিয়া তাহার বক্ষপট প্রশস্ত করিয়া দাও। তাহাকে অষ্ঠায় হইতে, অনশন হইতে, অন্ধসংস্কার হইতে রক্ষা কর। নুতন বা পুরাতন কোনো দলেই তোমার নাম না জামুক, যাহাদের হিতের জন্ত আত্মসমর্পণ করিয়াছ প্রতিদিন তাদের প্রতি অবজ্ঞা ও অবিশ্বাস ঠেলিয়া এক পা এক পা করিম সফলতার দিকে অগ্রসর হইতে থাক । মিথ্য আত্মপ্রকাশে আমরা যে শক্তি কেবলি নষ্ট করিতেছি সত্য আত্মপ্রয়োগে তাহাকে খাটাইতে হইবে। ইহাতে লোকে যদি আমাদিগকে সামান্য বলিয়া ছোট বলিয়া অপবাদ দেয় উপহাস করে তবে তাহা অম্লানবদনে স্বীকার করিয়া লইবার বল যেন আমাদের থাকে। আমরা যে সামান্য কেহ নহি, আমরা যে কিছু একটা করিতেছি ইহাই পরের কাছে দিনরাত প্রমাণ করিবার জন্য পুঁচিলে পনেরো করিয়া ফলাইয়া কেবলি সাগরপারে টেলিগ্রাফ করাকেই নিজের একমাত্র কাজ বলিয়া যেন না মনে করি। দেশের এক একটি জায়গায় এক একটি মানুষ বিরলে বসিয়া নিজের সমস্ত জীবন দিয়া যে কোনো একটি কর্মকে গড়িয়া ফুলিয়া প্রতিষ্ঠিত করিতে থাকুনু— এই আমাদের সাধনা। আমরা কিছুই গড়িয়া তুলিতে পারি মা, আমাদের হাতে সমস্তই বিক্ষিপ্ত হইয় পড়ে, আমরা কর্থের নানা স্বত্রকে টানিয়া বালি রাশ বাগাইং নিজের হাতে দৃঢ় করিয়া ধরিতে পারি না—এই কারণেই আমরা কামনা করি কিন্তু সাধনার বেলা চোখে অন্ধকার দেখিতে ব্যাধি ও প্রতিকার । ミ8> থাকি—কেবল সমিতির অধিবেশনে অতি সূক্ষ্ম নিয়মাবলী রচনা লইয়া আমাদের তর্কবিতর্কের অস্ত থাকে না, কিন্তু নিয়ম খাটাইয়া বাধা কাটাইয়া সিদ্ধির পথে চলিবার দৃঢ় । সঙ্কল্প শক্তি আপনার মধ্যে খুজিয়া পাই না। চরিত্রের এই দৈন্য আমাদিগকে ঘুচাইতে হইবে। উত্তেজনার দ্বারা তাহ ঘুচে না—কারণ উত্তেজনা আড়ম্বরের কাঙাল—এবং আড়ম্বর কৰ্ম্ম নষ্ট করিবার সয়তান। আজ নানা স্থানে নানা কাজ লইয়া আমরা নানা লোকে যদি লাগিয়া থাকি তবেই গড়িয়া তুলিবার অভ্যাস আমাদের পাকা হইতে থাকিবে। এমনি করিয়াই ভিতরে ভিতরে স্বদেশ গড়িয়া উঠিবে এবং স্বরাজগঠনের যথার্থ অবকাশ এক দিন উপস্থিত হইবে। তখন সত্য উপকরণ ও প্রকৃত লোকের অভাব কেবলমাত্র কথার জোরে ঢাকিয়া দিবার কোনো প্রয়োজন থাকিবে না। এ কথা নিশ্চয় জানি অপমানের ক্ষোভে ব্যর্থ আশার আঘাতে আমাদের আত্মাভিমান জাগিয়া উঠে ; এবং সেই আত্মাভিমান আমাদের আত্মশক্তি উদ্বোধনের একটা উপায়। বঙ্গবিভাগের বিরুদ্ধে বাঙালীর সকল চেষ্টার নিষ্ফলতা যখন সুস্পষ্ট আকারে আমাদের কাছে প্রত্যক্ষগোচর হইল তখন আমাদের অভিমান অলোড়িত হইয়া উঠিল। এই অভিমানের তুাড়নায় আমরা নিজকে প্রবল বলিয়া প্রমাণ করিবার যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছি । অতএব ইহার মধ্যে যে মঙ্গলটুকু আছে তাহাকে অস্বীকার করিতে পারি না। কিন্তু ইহার মধ্যে বিপদের কথাটা এই যে, অভিমানের সঙ্গে যদি ধৈৰ্য্যের দৃঢ়তা না থাকে তবে পরিণামে তাহ আমাদের দুৰ্ব্বলতার কারণ হইবে। চরিত্রের জোর থাকিলে অভিমানকে আত্মসাৎ করিয়া আপনার শক্তিকে স্থায়ী ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত করিবার জন্ত সংস্কল্প জন্মে, কারণ, যতক্ষণ শক্তি সত্য হইয়া না উঠে ততক্ষণ অভিমানকে অতিমাত্রায় প্রকাশ করিতে থাকা লজ্জাকর এবং তাহা কেবল ব্যর্থতাই আনয়ন করে। নিজের আবেগের অ ক এইরূপ নিষ্ফল ভাবে অসময়ে প্রকাশ করিয়া বেড়ানো শিশুকেই শোভা পায়। অভিমান যখন বিলম্ব সহিতে না পারে, তখন তাহা কৰ্ম্মকে তেজ না দিয়া কৰ্ম্মের অঙ্কুরকে ছারখার করিয়া ফেলে। যে দিন হইতে আমাদের মনে রাগ হইল সেই দিন হইতেই আমরা আকাশ কঁপাইয়া বড়াই করিতে