পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ) ], প্রার্থনা করিল। পরামর্শ স্থির হইয়া গেল ; গুপ্ত পরামর্শ মাধবিকার সর্থী ও নিতান্ত আত্মীয় কয়েকব্যক্তি ভিন্ন আর কেই জানিল না। একদিন সন্ধ্যাকালে কুসীদিক মণিভদ্র গৃহে আসিতেছে, পথে তাঙ্গর সহিত কঙ্কটভট্টের সাক্ষাৎ হইল। কঙ্কটভট্ট মণিভদ্রকে যেন না চিনিয়াই চলিয়া যাইতেছিল ; মণিভদ্র নমস্কার করিয়া কহিল, ‘ভট্টজী, তাড়াতাড়ি কোথায় ?” কঙ্কটভট মহা বিস্ময়ের ভাণ করিয়া চমকিত হইয়া বলিল, ‘কে মণিভদ্র না কি ? আমি তোমাকে চিনিতেই পারি নাই । তোমার মুখ এমন মলিন ও ক্লিষ্ট বোধ হইতেছে কেন ? কোন পীড়া হইয়াছে কি ?” মণিভদ্র উত্তর করিল “কৈ না, কোন পীড়া ত’ হয় নাই। আজ প্রাতঃকাল হইতেই তহবিল মিলাইতেছিলাম ; অৰ্দ্ধ পয়সার গরমিল কিছুতেই মিলাইয়া উঠিতে পারিলাম না । অধিকন্তু গগুস্ত উপরি পিণ্ডকোসঞ্জাতঃ',—-একজন অধমৰ্ণ —সেটা বাস্তবিকই নিতান্ত অধম—এক শত টাকার বাৎসরিক সুদ চতুবিংশতি মুদ্রার অধিক কিছুতেই দিল না ; চক্রবৃদ্ধি হারে কুসীদ না দেওয়াতে আমার যথেষ্ট ক্ষতি হইয়াছে। এই জন্যই বোধ হয়, আমাকে মলিন ও ক্লিষ্ট দেখিতেছ।” জ্যোতিষী দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া বলিল, “ক্লিষ্ট হওয়ার ঐ কারণ হইলে সুখী হইতাম ; কিন্তু আমি দেখিতেছি, শনি, রাহু, কেতু ও মঙ্গল এই পাপ গ্রহচতুষ্টয় একযোগে তোমার বিরুদ্ধাচরণ করিতেছে। ঐ গ্রহচতুষ্টয়ের শাস্তি না করিলে, কালই বৈকাল বেলা তোমার মৃত্যু হইবে ইহা আমি দিব্য ক্ষে দেখিতেছি। মৃত্যুর পূর্বাভাস তোমার মুখে পরিস্ফুট ইষ্টয়া উঠিয়াছে।’ প্রসিদ্ধ অব্যর্থগণকের এই ভবিষ্যদবাণী শুনিয়া মণিভদ্রের খি শুষ্ক; জিহা রসশ্বন্ত, পদ প্রকম্পিত ও হৃদয় গুরুস্পন্দিত ইয়া উঠিল, কিন্তু প্রাণীপেক্ষ প্রিয়তর অর্থনাশ দ্বার প্রাণরক্ষার জন্য গ্রহচতুষ্টয়ের শান্তি করা সে ভাল মনে রিল না। জ্যোতিষীকে বলিল “ভাল, বিবেচনা করিয়া খি।” গৃহে উপস্থিত হইবার পূৰ্ব্বে সে দশবার আপনার ড়িীর গতি পরীক্ষা করিল। একবার মনে হইতেছে, নাড়ী তগতিতে প্রবাহিত ; পরবার মনে হইল, ঠিক কিঞ্চিলিক মণিমঞ্জীর । ૨૧ গতি; আর বার মনে হইতে লাগিল, নাড়ী অপ্রাপ্য। নাড়ীবিজ্ঞানের যাবতীয় মৃত্যুলক্ষণ সে আপনার নাড়ীতে প্রকাশ” মান দেখিতে লাগিল । সংশয়াকুল দোলায়মান চিত্তে গৃহে উপস্থিত হইবা মাত্র তাহার স্ত্রী চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল, “একি ! তোমার কি পীড়া হইয়াছে ! এ কি তুমি এমন পাংশুবর্ণ হইয়া গিয়াছ কেন ?’ মণিভদ্র অধিকতর পাণ্ডুর হইয়া বলিল, ‘নাঃ কিছু না । বোধ হয় শ্রমক্লান্তবিপা ধুগও হইয়াছি।’ মাধবিকা বস্ত্রাঞ্চলে অশ্রুমাজন করিয়া বলিল, “ন গো না, তোমার নিশ্চয় অসুখ করেছে। চিকিৎসক ডাকা উচিত।” চিকিৎসকের নাম শুনিয়া অর্থনাশভীত মণিভদ্র ব্যস্ত হইয়া বলিল, “ন, না, না, চিকিৎসক ডাকার আবগুক নাই। আমার কিছু হয় নাই গো ভয় নাই।’ মাধবিকা উচ্ছসিতক্ৰন্দনরোধহেতুক অস্ফট কণ্ঠে বলিল, “ন গো না; তুমি হয় ত’ বুঝিতে পারিতেছ না; তোমার নিশ্চয় বিষম ব্যাধি হইয়াছে। তাই মরণকালে বিপরীত বুদ্ধি ঘটিয়াছে। তোমার মুখখানা দর্পণে দেখ দেখি।” এই বলিয়া সম্মুখে একথান দর্পণ ধরিল ; তাহাতে আপনার ভয়বিহবল মান মূৰ্ত্তি দেখিয়া মণিভদ্র চমকিত ইষ্টয় অধিকতর পা ধুবর্ণ হইয়া গেল। তখন মাধবিক দৰ্পণখানকে আছড়াইয়া ফেলিয়া শত খণ্ড করিয়া ফেলিল এবং উর:শিরস্তাড়না করিয়া রোদন করিতে লাগিল । অনাস্বাদিতপূৰ্ব্ব পত্নীর এই প্রণয়পরিচয় পাইয়৷ মণি ভদ্র বোধ হয় কিছু হৃষ্ট হইয় তাহার নষ্ট প্রফুল্লত উদ্ধার করিতেছিল, এমন সময় মাধবিকা তাহার দাসীকে ডাকিয়া বলিল, ‘মঞ্জুলিকে, যা ত বৈদ্যরাজ চক্রদত্তকে ডাকিয় শীঘ্ৰ লইয়া আয় "." নগরের শ্রেষ্ঠ"বৈদ্য চক্রদত্তকে ডাকিবার প্রস্তাব গুনিয়া অর্থনাশশঙ্কী মণিভদ একেবারে মাথায় হাত দিয়া বসিয়া পড়িল । মঞ্জুলিকাকে বাধা দিবার অগ্ৰেই সেই সৰ্ব্বশুভহন্ত্রী, দগ্ধাননা দাসীপুত্ৰী উধাও হইয়া চলিয়া গেল। মণিভদ্রের নিকট এই সৰ্ব্বনাশ অপেক্ষা নিবিরোধে মৃত্যুও শ্লাঘা, শ্ৰেয়ঃ ও প্রেয় বোধ হইতেছিল। 锡 বৈদ্যশ্রেষ্ঠ চক্রদত্ত আসিলেন, গম্ভীরভাবে তাহার মাড়ী পরীক্ষা করিলেম । তৎপরে কিঞ্চিত্তিরশচীনধিলোলমৌলি বৈদ্যরাজ বলিলেম— *