পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հե-8 গোরা নিজের জানু চাপড়াইয়া কছিল—“ন, আমি যেতে বলি নে । আমি তোমাকে লিখে পড়ে দিচ্চি, যে দিন তুমি যাবে সে দিন একেধারে পুরোপুরিই যাবে। তার পর দিন থেকেই তাদের বাড়ি খান খেতে মুরু করবে এবং ব্রাহ্ম সমাজে নাম লিখিয়ে একেবারে দিগ্বিজয়ী প্রচারক হয়ে উঠবে। বিনয় । বল কি ! তার পরে ? গোরা ; আর তার পরে! মরার বাড়া ত গাল নাই ! ব্রাহ্মণের ছেলে হয়ে তুমি গো-ভাগাড়ে গিয়ে মরবে, তোমার আচার বিচার কিছুই থাকবে না, কম্পাস-ভাঙা কাণ্ডারীর মত তোমার পূর্ব পশ্চিমের জ্ঞান লোপ পেয়ে যাবে-তখন মনে হবে জাহাজ বন্দরে উত্তীর্ণ করাষ্ট কুসংস্কার, সঙ্কীর্ণতা-- কেবল না-হুক্ ভেসে চলে যাওয়াই যথার্থ জাহাজ চালানো । কিন্তু এ সব কথা নিয়ে বকবিকি করতে আমার ধৈর্য্য থাকে না—আমি বলি তুমি যাও! অধঃপাতের মুখের সামনে পা বাড়িয়ে দাড়িয়ে থেকে আমাদের শুদ্ধ কেন ভয়ে-ভয়ে রেখে দিয়েচ ? বিনয় হাসিয়া উঠিল, কহিল,—“ডাক্তার আশা ছেড়ে দিলেই যে রোগী সব সময়ে মরে তা নয়। আমি ত নিদেন কালের কোনো লক্ষণ বুঝতে পারাচনে ৷” গোরা । পারচ না ? বিনয় । না । গোরা । নাড়ি ছাড়ে-ছাড়ে করচে না ? বিনয় । না, দিব্যি জোর আছে । গোরা । মনে হচ্চে ন যে, শ্ৰীহস্তে যদি পরিবেষণ করে তবে স্নেচ্ছের অন্নই দেবতার ভোগ ? বিনয় অত্যন্ত সঙ্কুচিত হইয়া উঠিল, কহিল,—“গোরা, বস, এইবার থামো ।” গোরা। কেন এর মধ্যে ত আক্রর কোনো কথা নেই। শ্ৰীহস্ত ত অস্বর্যাম্পশু নয়। পুরুষ মানুষের সঙ্গে যার শেক্হাও চলে সেই পবিত্র করপল্লবের উল্লেখটি পর্য্যন্ত যখন তোমার সহ হচ্চে না, তদা ন সংশে মরণায় সঞ্জয় ! বিনয় । দেখ গোরা, আমি স্ত্রীজাতিকে ভক্তি করে থাকি—আমাদের শাস্ত্রেও— গোর । স্ত্রীজাতিকে যে ভাবে ভক্তি করচ তাঁর জন্যে প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ । শাস্ত্রের দোহাই পেড় না! ওকে ভক্তি বলে না, যা বলে তা যদি মুখে আনি ত মারতে আসবে। বিনয়। এ তুমি গায়ের জোরে বলচ । গোরা। শাস্ত্রে মেয়েদের বলেন “পূজাৰ্ছ গৃহদীপ্তয় ।” র্তারা পূজা কেন না গৃহকে দীপ্তি দেন, পুরুষ মানুষের হৃদয়কে দীপ্ত করে তোলেন বলে বিলিতি বিধানে তাদের যে মান দেওয়া হয় তাকে পূজা না বলেই ভাল হয়। বিনয় । কোনো কোনো স্থলে বিকৃতি দেখা যায় বলে কি একটা বড় ভাবের উপর ওরকম কটাক্ষপাত করা উচিত! গোর অধীর হইয়া কহিল,—“বিস্তু, এখন যখন তোমার বিচার করবার বুদ্ধি গেছে তখন আমার কথাটা মেনেই নও —আমি বলচি বিলিতি শাস্ত্রে স্বীজাতি সম্বন্ধে যে সমস্ত অত্যুক্তি আছে তার ভিতরকার কথাটা হচ্চে বাসনা। স্ত্রীজাতিকে পূজো করবার জায়গা হল মার ঘর, সতীলক্ষ্মী গৃহিণীর আসন—সেখান থেকে সরিয়ে এনে তাদের যে স্তব করা হয়, তার মধ্যে অপমান লুকিয়ে আছে। পতঙ্গের মত তোমার মনটা যে কারণে পরেশ বাবুর বাড়ির চারদিকে ঘুরচে, ইংরজিতে তাকে বলে থাকে ‘লাভূ--কিন্তু ইংরেজের নকল করে ঐ ‘লাভ ব্যাপারটাকেই সংসারের মধ্যে একটা চরম পুরুষাৰ্থ বলে উপাসনা করতে হবে এমন বঁাদরামি যেন তোমাকে না পেয়ে বসে !” বিনয় কষাছত তাজ ঘোড়ার মত লাফাইয়া উঠিয়া কহিল—“আঃ গোর, থাকৃ, যথেষ্ট হয়েচে!” গোরা। কোথায় যথেষ্ট হয়েচে ! কিছুই হয় । নি! স্ত্রী আর পুরুষকে তাদের স্বস্থানে বেশ সহজ করে দেখতে শিখিনি বলেই আমরা কতকগুলো কবিত্ব জমা করে তুলেচি ! • বিনয় কহিল—“আচ্ছা মানচি স্ত্রী পুরুষের সম্বন্ধ ঠিক যে জায়গাটাতে থাকলে সহজ হতে পারত আমরা প্রবৃত্তির ঝোকে সেটা লঙ্ঘন করি এবং সেটাকে মিথ্যে করে তুলি কিন্তু এই অপরাধটা কি কেবল বিদেশীরই ? এ সম্বন্ধে ইংরেজের কবিত্ব যদি মিথ্যে হয় ত আমরা ঐ যে কামিনীকাঞ্চন ত্যাগ নিয়ে সৰ্ব্বদা বাড়াবাড়ি করে থাকি সেটাও ত মিথ্যে ! মানুষের প্রকৃতি যা নিয়ে সহজে আত্মবিস্তৃত হয়ে পড়ে তাঁর ক্ষতি থেকে মাক্ষষঙ্কে বঁচোৰাঁর জল্পে কেউ বা