পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"లిసి মুক্তামণ্ডিত উপানহ, এবং করষ্কৃত বকুলমাল তাহাকে শরীরী পুষ্পধন্বার মত প্রকাশিত করিল। প্রসাধনপ্রফুল্ল চক্ষু দর্পণে যখন দীপ্ত হইয়া উঠিল, তখন পত্নী মালবিকার যাতনাজাত বিলাপধ্বনি তাহার কর্ণে গেল । সে পত্নীর নিকটে গিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি হইয়াছে ? এ আবার কিসের ছলনা ? শীঘ্ৰ বল, আমার বিলম্ব করিবার অবসর নাই” । মালবিক কাতরকণ্ঠে বিলাপ করিয়া কহিতে লাগিল, "ওহে দগ্ধানন, নির্বংশের পুত্র, আমার নিতান্ত দগ্ধাদষ্ট যে আমি তোমার হাতে পড়িয়াছিলাম, নতুবা তুমি আমার আসন্ননৃত্যুসময়েও এমন রূঢ় অমানুষ ব্যবহার করিবে কেন ? আর আমি কখনো তোমার নৈশবিহারে বাধা দিতে আসিব না ; আজ আর একটু অপেক্ষ কর । আমার মৃত্যু আগন্তুক, আমি মরিলে তুমি ত’ বাচই, আমিও বাচি ।” নন্দক মহা বিরক্ত হইয়া বলিল, “আমি তোমার অর্থশূন্য প্ৰলাপবাক্য শুনিতে চাহি না । শুধু জানিতে চাহি তোমার কি হইয়াছে।” মালধিক ক্ষীণস্বরে অতিকষ্টে থামিয়া থামিয়া কোনমতে বলিল, “ওগো বক্ষে বিষম বেদন ; শ্বাস বন্ধ হইয়া যাইতেছে, হৃৎস্পন্দন মন্দ হইয়াছে, জীবনীক্রিয়া স্থগিত হইবার উপক্রম হইয়াছে, আমি এথনি মরিব । ওগো আমার মত অভাগ্যের মরণ মঙ্গল ; কিন্তু বড় যন্ত্রণ ; জীবনে ত’ কখন মুখ পাই নাই ; এখন একজন বৈদ্য ডাকিয়া দেও গো, যে শুধু যন্ত্রণার উপশম করিয়া মরণকে শাস্ত ও বরণীয় করিয়া দিবে "। g নন্দক ক্রুদ্ধ হইয়া বলিল, “থাম থাম ; মরিতে হয় অমনি মর, বৈদ্য ডাকিয়া মুতু্যকালে বিলাসিতার কি প্রয়োজন ? তোমার মরিতে হয় মর, আমার বিলম্ব হইতেছে, আমি চলিলাম ; কাল প্রাতে আসিয়া তোমায় মৃত দেখিলে সৎকারের ব্যবস্থা যথাবিধিই করিব।” মালবিকার দাসী বরোরুহ এই কঠিন বাক্য গুনিয়া তীব্র শোকে লুষ্ঠিত হইতে হইতে স্বামিনীর গুণ ও প্রভুর নিষ্ঠুরতা, নিপুণতার সহিত কীৰ্ত্তন করিতে লাগিল । নন্দক বিশেষ দুঃখিত হইল, স্ত্রীর আসন্ন মৃত্যুতে নহে, এমন সাধের প্রসাধন ব্যর্থ হইবার উপক্রম হইয়াছে বলিয়া। প্রবাসী । { ৭ম ভাগ । অবশেষে পত্নীর তদবস্থা দেখিয়া এবং দাণীর ভৎসনায় বাধ্য হইয়া সে বৈষ্ঠের সন্ধানে বাহির হইয়া গেল । সে চক্ষুর অন্তরাল হইতে না হইতে মৃতকল্পা মালবিকা লম্ফ দিয়া উঠিল; তীব্র শোকলুষ্ঠিতা দাসী বরোরুহ হাসিতে লুষ্ঠিত হইতে লাগিল ; এবং খট্রাতলগুপ্ত শক্রস্তুপ বাহির হইয়া পরিহাস পরিসমাপ্তির আয়োজনে মনোনিবেশ করিল। বহিদ্বারের জীর্ণ পুরাতন কবাট অপস্থত করিয়া তৎস্থানে নূতন মুন্দর কারুময় বিচিত্র রজতহিরন্ময়মণ্ডিত কপাট সল্পদ্ধ হইল। দ্বারের উভয় পাশ্বে বিচিত্র কারুশোভিত মৰ্ম্মরস্তম্ভ চতুষ্টয় স্থাপিত হইল। প্রাচীরগাত্রে নানাবিধ সুবর্ণরঞ্জিত চিত্রাবলী লম্বিত হইল । নন্দকের অবহেলাসস্তপ্ত জীর্ণগৃষ্ঠথানি একরাত্রির জন্য নাট্যশালার কদর্য্য অভিনেতার ছদ্মসজ্জার মত বিচিত্র বাসকসজ্জায় মনোহর হইয়া উঠিল। দ্বারশীর্ষে রজতসুবর্ণময় অক্ষরে লিখিত হইল ‘প্রমোদ ভবন’ ! গৃহমধ্যে মালবিক ও শক্রস্তপের আত্মীয়গণের ভোজ উপলক্ষে সেই চিরস্নান নিরানন্দ শোকমূৰ্ত্তি গৃহখানি আজ মৃত্যগীতবাদ্য-আলোকহস্ত-মহোৎসবে প্রফুল্লাপ্রদীপ্ত হইয়া खेल्नि । * এদিকে বিরক্ত বিরস নন্দক বৈদ্যকগুহোদেশে যাইতেছে। পথে বৃদ্ধিজীবী মণিভদ্রের হঠাৎ মৃত্যু সংবাদ শুনিয়া তাহার বিরস মনে তাহার স্ত্রীর আসন্নমৃত্যুশঙ্কা জাগ্রত হইয়া তাহার মনকে আরো কটুতিক্ত করিয়া তুলিল । চিন্তাকুল চিত্তে যাইতে যাইতে পথে মণিভদ্রের সাক্ষাৎ পাইয়া তাহাকে তাহার প্রেতাত্মা ভ্ৰমে আতঙ্কিত হইয়া নন্দক উদ্ধশ্বাসে দৌড়িয়া গৃহে ফিরিল। বৈদ্যাকসন্ধানে বা অভিসারগমনে তাহার আর প্রবৃত্তি রহিল না ; বিপদের সময় তাহার পদ তাহাকে সেই অনিৰ্ব্বচনীয় স্নেহনিরাপদ নির্ভরসহ গৃহখানির দ্বারেই বহন করিয়া আমিল । সে গৃহদ্বারে উপস্থিত হইয়াই স্তম্ভিত হইয়া গেল। সে দেখিল, ন জানি কোন যাদুস্পর্শে তাহার শোকম্লান বিলাপধ্বনিমুখরিত জীর্ণ গৃহখানি লুপ্ত হইয়া তৎস্থলে বিচিত্র সৌন্দৰ্য্যশোভিত প্রমোদভবন মহামহোৎসবে উদাম হইয়া উঠিয়াছে। সে চক্ষুমার্জন করিয়াও তাহাই দেখিল । সেই চিরপরিচিত পথ, প্রতিবেশীদের সেই সব গৃহ যথাযথ