পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৩৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 ه في আরও অধিক ; কেন না, ইহার দ্বারা রপ্তানি সংযত হইয়াছে এবং ভারতের আভ্যন্তরিক বাজারেও বিক্রয়ের বাধা ঘটয়াছে। ১৮৯৬ খৃষ্টাবে, ম্যাঞ্চেষ্টারেরই প্ররোচনায় এই সকল প্রতিদ্বন্দ্বী তরুণ শিল্পের উপর শুদ্ধ স্থাপিত হয় । কিন্তু এই দেশীয় তরুণ শিল্পের এমনি জীবনীশক্তি যে ম্যাঞ্চেষ্টারের বিদ্বেষ দৃষ্টি সত্ত্বেও, ইহা পুনঃ পুনঃ চেষ্টা করিয়া অল্পে অল্পে এখানকার বাজার দখল করিয়া লইয়াছে। এখন ভারতের এই চেষ্টা—এবং এই চেষ্টায় ভারত কতকটা সফলও হইয়াছে—যাহাতে লম্বা আঁশের তুলা এ দেশে উৎপন্ন করিয়া এবং উহা হইতে উৎকৃষ্ট স্থত। প্রস্তুত করিয়া ইংলণ্ডের সহিত প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করিতে পারে। বোম্বাই একটি বিশ্বজনিক নগর। আমি পূর্বেই বলিয়াছি, ভারতের প্রধান প্রধান জাতিরা এখানে আডড গাড়িয়াছে। মসজিদ, গির্জা, অগ্নি-মন্দির, দেবালয়, বিভিন্ন ধৰ্ম্ম ও বিভিন্ন সভ্যতা এখানে পাশাপাশি বাস করিতেছে— তাহাদের মধ্যে বিদ্বেষ নাই, বৈরভাব নাই। কেন না, বিদ্বেষপূর্ণ অন্ধ-ধৰ্ম্মমত্ততা, এই গৌরবোজ্জল হর্ষোৎফুল্ল নগরের একান্ত রুচিবিরুদ্ধ । নগরের যুরোপীয় অঞ্চলটি, বেশ একটু দূরত্ব রক্ষা করিয়া একাস্তে অবস্থিত। চওড়া চওড়া রাস্তা, বিহারভূমি, ক্রীড়াভূমি—সমস্তই সৌরকরে পরিপ্লাবিত। গৃহ সকল এরূপ বৃহদায়তন ও উচ্চ যে তাহা দেখিয়া অপর কোন রাজধানীর ঈর্ষা জন্মিতে পারে। দেশীয় লোকদিগের প্রকাও প্রকাও গৃহ এবং রাজপুরুষদের বাসভবনও এরূপ জমকাল যে দেখিলে চক্ষু বলসিয়া যায়। এস্থলে বিজেতাদিগের গুণগুলির ন্তায় দোষগুলিও উপযোগী। এই সব গুরুভার জমকাল ইমারং,—বিজেতাদিগের ইচ্ছা ও প্রভাব বিলক্ষণ ব্যক্ত করিতেছে। ইহাই “সিটি” নামে অভিহিত—এই সিটি রাজকাৰ্য্যের ও সরকারী কাছারির মুখ্য স্থান। প্রধান রাজপথ দিয়া যদি চল ত দেখিবে রাস্তার দু-ধারে বড় বড় ব্যাঙ্কের নাম লেখা—“হংকং ব্যাঙ্ক” “খ্যাঙ্কাই ব্যাঙ্কিং করপোরেশান,” “চার্টাড এসিয়া” “জষ্ট্রেলিয়া ও চাইন ব্যাঙ্ক” “রোকোহাম স্পেশি ব্যাঙ্ক,” “কোতোয়ার সেকৎ” ব্যাঙ্ক-ত ছাড়া বড় বড়ঞ্জাহাজের কোম্পানি---মেস্তাজেয়ার [ ৭ম ভাগ । ম্যারিটাম্‌” “পেনিনসুলার”—বড় বড় সংবাদপত্রের আফিস্ —ৰীমা-কোম্পানীর আফিস, হোটেল, ক্লব, এবং ছোট ছোট অনেকগুলি যুরোপীয় দোকান—যেখানে বাছা-বাছ ধরণের সেখীন দ্রব্যসামগ্ৰী বিক্রীত হয়। এ অঞ্চলে কোন প্রকার জীবন-উদ্যমের ভাব দেখা যায় না । শ্বাসরোধী উত্তপ্ত রাস্তাগুলা জনশূন্ত ; এই অনলবর্ষ স্বৰ্য্যের প্রখর কিরণে, পথে কেহ চলিতে সাহস করে না। বাড়ীর জানালাগুলা যেন নীরন্ধ ভাবে অষ্টেপৃষ্ঠে রুদ্ধ। তবে কি লোকের নিদ্রা যাইতেছে ?—না । মৌচাকের ভিতরে প্রবেশ কর—দেখিবে প্রত্যেকেই আপন আপন নিদিষ্ট স্থানে বসিয়া আছে-কেহ বা কাঠগড়ার মধ্যে, কেহ বা অফিস-ঘরে ;–গায়ের ফতুয়া খুলিয়া, কামিজের আস্তিন গুটাইয়া, বিজলি-পাথার ঠাণ্ড বাতাসের নীচে, এসীয়াবাসীর ধরণে ধীরেসুস্থে নিয়মিতভাবে কাজ করিয়া যাইতেছে । উদিপর খানসামারা জরির পাগড়ী পরিয়া গম্ভীরভাবে ঘরের মধ্যে আনাগোনা করিতেছে । স্বৰ্য্য যখন দিগন্তে ঢলিয়া পড়ে তখনই যুরোপীয় সহরটা জাগিয়া উঠে। সমুদ্রের সম্মুখে, বেড়াইবার রাস্তায়, সেই সময়, মকৃমলের পাড়ে বিভূষিত উজ্জল শাড়ী পরিহিত পালী-মহিলাদিগকে দেখিতে পাওয়া যায়। লন্‌টেনিস ও ক্রিকেটু-ক্রীড়কদিগের দ্বারা তত্ৰত শাম্বলভূমি আচ্ছন্ন। সম্মুখে সমুদ্র প্রসারিত—ধীরে ধীরে স্বৰ্য্য অস্ত যাইতেছে ;–পার্সি ও ইংরাজের মধ্যে ক্রিকেটের- , প্রতিযোগিতা চলিতেছে—কি চমৎকার দৃশু!—এই মৌসমের ইহা একটি স্মরণীয় ঘটনা। বোম্বায়ের একজন ভূতপূৰ্ব্ব গবর্ণর এইরূপ লিখিয়াছেন —“হয় ত আমি બરે বিষয়ে একটু বেশী পক্ষপাতী, কিন্তু আমার মনে হয় বম্বের প্যারেড ভূমিতে প্রেসিডেনসির ১১ জন ও পাসীদের মধ্যে যখন ক্রিকেটু খেলা হয় তখন তাহ দেখিয়া ইংরাজের রাষ্ট্রপরিচালনশক্তির যতটা আমরা পরিচয় পাই এমন আর কিছুতে নহে। একটা ত্রিকোণের বাহুর উপর কতকগুলা জঁাকাল ইমারত্ব রহিয়াছে। একদল ইংরেজ ও একদল দেশীয় লোকের মধ্যে, বাজির খেলা চলিতেছে ; ১-২ হাজার' লোক খুব ঔংস্থক্যের সহিত খেলা দেখিতেছে—বেশ সম্ভাবে, শিষ্টভাবে, ক্রীড়াশীলভাবে নিরীক্ষণ করিতেছে।”