পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা । ] , সোমের কীর্ণ দানবকণ্ঠের মত ভীষণ বোধ হইল। সে শিহরিয়া উঠিল। “আমি কি সন্দেহ ঈর্ষায় উন্মত্ত হইয়াছি ? মনে হইতেছে, আমি কালই যেন নিজের গৃহে স্বাধীন ছিলাম। কিন্তু সেইটাই হয় ত’ মস্ত একটা ভ্রম ; প্রকৃতপক্ষে আমি হয় ত’ কতকাল এই বাতুলালয়ে বদ্ধ রহিয়াছি। এই কি বাতুললয় ? আজ কি তবে আমার প্রথম জ্ঞানেন্মেষ হইল ? আমি কি সদ্য এই প্রকৃতিস্থ হইলাম ? আমি কি প্রকৃতই এতদিন বাতুল ছিলাম ? এই ত’ আমার বাতুলের চিহ্ন মুণ্ডিত মস্তক। অথচ আমার বিকৃত মস্তিষ্কের এতদিন ধারণা ছিল, যে আমার মস্তকে একরাশ কেশ ছিল ; এবং তরুণী ভাৰ্য্যার মনস্তুষ্টির জষ্ঠ তাহার উপচীয়মান শুভ্রত্ব গোপন করিতে কতই না যত্নবান ছিলাম। আমার তরুণী ভাৰ্য্যা বাসস্তিক সেও কি আমার বিকৃত মস্তিষ্কের একটা উৎকট কল্পনা মাত্ৰ ! আমি তবে প্রকৃত কি ছিলাম, কোথায় ছিলাম, আমার কে ছিল, হায় আমার কোথায় কে আছে ? তাহাদের কাছে ফিরিয়া গেলে হয় ত’ নূতন করিয়া আলাপ করিতে হইবে, নূতন করিয়া প্রতিবন্ধন গ্রথিত করিতে হইবে, হায় হায় আমার এ কি দুর্দশা হইল!” চিন্তা শেষ হইতে না হইতে একজন শ্রমণ কক্ষপ্রবেশ করিয়া বলিল, শ্রমণাচাৰ্য্য ধৰ্ম্মবংশ, আপনি এখনো প্রস্তুত হয়েন নাই ? স্থবিরপুত্রক, শ্রমণদিগের উপসম্পদ গ্রহণ সময়ে আপনার উপস্থিতি আবশ্বক, মহাস্থবির ধৰ্ম্মপাল আপনার অপেক্ষা করিতেছেন।” নৃসোম চিন্তাসাগরে পতিত হইল। ‘আমি শ্রমণ! পাষণ্ডীদের পরিচ্ছদও দেখিতেছি আমার অঙ্গে রহিয়াছে। পরম বেদনিষ্ঠ ব্রাহ্মণ আমি, আমি পাষণ্ডী, অথবা ইহাও বিকৃত মস্তিষ্কের নিষ্ঠুর পরিহাস এবং ইনিও একজন আমারই মত বাতুলাগারের অধিবাসী। পাগলের মেলা !’ নৃলোমকে নিরুত্তর দেখিয়া শ্রমণ বলিল, ‘ভিক্ষু ধম্মবংশ মহা ভিক্ষু ধৰ্ম্মপালকে কি বলিব ? নৃসোম বলিল, “বন্ধু, তুমি যদি প্রকৃতিস্থ থাক, তবে বৈদ্যকে গিয়া সংবাদ দেও যে, আমি মুস্থ হইয়াছি ; আমার জ্ঞানোদয় হইয়াছে ; আমি আর বাতুল নহি । বন্ধু, আমার আর একটি অনুরোধ যে, আমাকে বারবার পাষণ্ডী বলিয়া মণিমঞ্জীর । બ পরিহাস করিবেন না, আমি তাহা হইলে পুনরায় উন্মত্ত হইব ।” . . . w শ্রমণ আশ্চৰ্য্য হইয়া বলিল, “আপনি কি পরিহাস করিতেছেন ? পরিহাসের সময় নাই। ঐ শুমুন উপসম্পদ গ্রহণের ঘণ্টাধ্বনি হইতেছে । শীঘ্র করুন নতুবা মহাস্থবির ধৰ্ম্মপাল রুষ্ট হইবেন ? নৃসোম ক্রুদ্ধ হইয়া বলিল, “পাষণ্ডী, আমি তোর ধৰ্ম্মপালের কি ধার ধারি ? আমি শ্রমণ, আমি ভিক্ষু ধম্মবংশ ! এই কাল আমি আমার স্ত্রীর শয্যাপাশ্বে শায়িত ছিলাম, আর আজ আমি একেবারে সংসারত্যাগী ভিক্ষু ধম্মবংশ ! বৈরাগ্যধৰ্ম্মেন্ত্র প্রতি এই নিষ্ঠুরবিদ্রুপ কেন ! আমি যে কিছুই বুঝিতে পারিতেছিনা। আমি স্বপ্নাভিভূত, না উন্মত্ত, ঠিক করিয়া আমায় কেহ বলিয়া দেও গো বলিয়া দেও।” চিন্তাস্বত্র হার হইয়া নৃসোম যখন নিবাক, তখন আর একজন শ্রমণ আসিয়া বলিল, “স্থবিরপুত্ৰক ধৰ্ম্মবংশ, উপসম্পদ সমাপ্ত প্রায় ; শ্ৰীযুক্ত ধৰ্ম্মপাল আপনার উপস্থিতি আদেশ করিতেছেন।” নৃসেমি হতাশ হইয়া বলিল, “তবে নিশ্চিতই আমাকে মহাভিক্ষু ধম্মবংশষ্ট হইতে হইতেছে ! আমি আর বাসস্তিকাবল্লভ লুসোম নহি, আমি শ্রমণ ধৰ্ম্মবংশষ্ট ! কিন্তু কেমন করিয়া, কখন আমি শ্রমণ হইলাম ? ইহারা কি সকলেই বাতুল না আমি বাতুল হইয়াছি ? আমার গৃহ, পত্নী, কেশ, বেশ কাহার ফুৎকারে লুপ্ত হইয়া গেল ? বল বল, কোনটা সত্য, কোনটা কল্পনা ? আমার যে সমস্তই প্রহেলিকা বলিয়া বোধ হইতেছে।” এই বলিয়া প্রেতাযুস্তত ভীরুর মত সে দৌড়িয়া গৃহত্যাগ করিল । যে সকল শ্রমণ তথায় উপস্থিত ছিল, তাহার উচ্ছসিত হাস্তে সকল রহস্ত প্রায় ব্যক্ত করিয়া দিত, যদি ভাগ্যক্রমে সেই মুহূর্তে ধৰ্ম্মপাল কয়েকজন শ্রমণ সঙ্গে ধৰ্ম্মচক্র আবর্তন করিতে করিতে সে স্থানে উপস্থিত না হইতেন। নৃসোমের সম্মুখে দাড়াইয়া ধৰ্ম্মপাল রলিলেন, "ভিক্ষু ধম্মবংশ, আপনি কি অসুস্থ হইয়াছেন, ন, মার ও নিঋতির আক্রমণে ক্লিষ্ট হইয়াছেন ? আপনি বিহারের নিয়ম ও আদেশ লঙ্ঘন করিয়া পাপ অৰ্জ্জন করিয়াছেন। আপনি