পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা । ] মহারাজ র্তাহাকে ইহার জন্ত লজ্জা দিয়া বলিয়াছিলেন “আমি ভারতী, আপনি ভারতী ; আপনার গৃহে এরূপ বিজাতীয় অভ্যর্থনা আমি আশা করি নাই।’ এই শিক্ষায় সঙ্গীত সমাজ ডাল, ভাত, চচ্চড়ি, সুক্ত ও মোচা ছেঁচকির ব্যবস্থা করিয়াছিলেন । মহারাণীও ষোল আনা স্বদেশী । মহিলাসমিতিতে কোন মহিলার অঙ্গে বিলাতী কাপড় দেখিয়া তিনি তীব্র ভৎসন করিয়া তাহাকে লজ্জা দিয়াছিলেন । ষ্টচার সর্বপ্রযত্নে স্বদেশী ও দেশহিতেচ্ছ। মহারাজা সামাজিক সংস্কারের জন্ত যথেষ্ট যত্নশীল। মহারাজা বিধবা-বিবাহ হায্য বলিয়া ও বলবিবাহ দূৰ্য্য বলিয়া দুষ্টটি বিধি প্রচলিত করিয়াছেন ; ছুত ও জাতিনাশের বাধা দূর করিবার জন্ত সকলকে উপদেশ দৃষ্টাস্তে আয়ত্ত করিতেছেন । মহারাণী স্ত্রী-শিক্ষার জন্য পরিশ্রম ও যত্ন করিয়া মহারাজের সহধৰ্ম্মিণীর কর্তব্য পালন করিতেছেন । ক্টাচারা বলেন সকল প্রকার উন্নতি পরস্পরাপেক্ষী—রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, শিল্পসম্বন্ধী, নৈতিক প্রভৃতি সকল বিষয় সমানভাবে অগ্রসর না হইলে কথন কোন জাতির অভু্যদয় হয় লা । এই উদ্দেশ্যে তাহারা উভয়ে প্রাণমন দিয়া কৰ্ম্ম করিতেছেন । ভারতের বর্তমান অবস্থা দেপিয়া মহারাজা বলেন যে "আশান্বিত হইবার কারণ আছে কিন্তু আনন্দোদ্বেলিত হইবার কোন কারণ নাই।’ স্বদেশী ব্রতের মধ্যে যে কষ্ট স্বীকার যে স্বাৰ্থত্যাগ আছে তাহা স্বীকার করিয়া মহারাজা দেখাইয়াছেন যে আপনার sথ খৰ্ব্ব না করিলে দেশের দশের কল্যাণ নাই । কিন্তু ধদেশা হইলেই যে গোড়ামি করিতে হইবে তাঁহা নহে ; য গোড়ামী করিবে, তাহার মৃত্যু নিশ্চিত ; ভারতের মধঃপাত এই গোড়ামির জন্ত । জাগতিক পারিপাশ্বিক সবস্তার সহিত সামঞ্জস্ত রাখিয়া সাময়িক ব্যবস্থা করিতে ইবে ; পরিবর্তন জাগতিক ধৰ্ম্ম—যে না বুঝিয়া রক্ষণশীল ইবে তাহার ধ্বংস অনিবাৰ্য্য। রাষ্ট্র, সমাজ, শিল্প, ব্যবহার প্রভৃতি সকল-ক্ষেত্রেই অগ্রসর নীতি অনুসরণীয়। ভারতের মধিকাংশ জাতিকে সমাজ অস্পৃশু হেয় করিয়া রাখিয়াছে, গহাদিগকে মুক্ত করিয়া সমান সুবিধা দেওয়া দরকার । আমাদের সর্বাঙ্গু—স্ত্রী ও দ্বিজভিন্ন জাতি, বিকল ও পঙ্গু, আমরা উঠিব কেমন করিয়া ? সমগ্র জগতে যখন সাম্য মন্ত্র খাধিত হইতেছে, তখন জাতিবন্ধন, অবস্থার তারতম্য চাইতে না পারিলে আমরা জগতের প্রতিযোগিতা ও ংগ্রামে কখনই জয়ী হইব না। আমাদের ধনসঞ্চয় করিতে ইলে বাণিজ্যব্যাপার হইতে হইবে; বাণিজ্য করিতে হইলে ছিজাতি একত্র হইয়া দেশ বিদেশে ছুটিতে হইবে ; অতএব কোচ, দ্বিধা, ক্ষুদ্রতা, বিরোধের কাল আর নাই । ভারত চিরদিন তাহার ধৰ্ম্ম ও নীতির জন্ত, আধ্যাত্মি মহারাজ গায়কবাড় । ($ . কতার জন্ত প্রসিদ্ধ। পরাধীন জাতির আধ্যাত্মিকতাও স্ফৰ্ত্তি পায় না। ইহা বুঝিয়া গায়কবাড় বলিয়াছেন শিল্প বাণিজ্যে যেমন একদিকে উন্নতি করিতে হইবে অপর দিকে আমাদের চিরন্তন কালের সরল মর্য্যাদাজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক আগ্রহ অক্ষুণ্ণ রাথিতে হইবে । ভারত প্রতীচ্যের নিকট ঐহিক উন্নতির পন্থা শিখিয়া তাহীদের পারত্রিক "গতির পন্থা নির্দেশ করিবে ।” সম্প্রতি বড়োদায় আর একটি তুলার কল স্থাপিত হইয়াছে, তদুপলক্ষে মহারাজা যে সকল কথা বলিয়াছেন তাহা প্রণিধান-যোগ্য । তিনি প্রজাদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেন ‘আত্ম প্রত্যয়ী হও, আপনার শক্তি নির্ভর হও ; সকল বিষয়ের জন্ত পরের, রাজশক্তির মুখাপেক্ষী হইও না । সমর্থ হও, আত্মনিষ্ঠ হও, আপনার শক্তি বুঝিতে শিখ, আপনাকে আপনি সাহায্য করিতে শিখ। যাহারা আপনার সাহায্যে রত হয়, গভর্ণমেণ্টও তাহাদিগকে সাহায্য করিতে বাধা হয়। প্রজার সমবেত শক্তিই রাজশক্তি । প্রজাশক্তি যতক্ষণ দুর্বল থাকে রাজশক্তি ততক্ষণই অমনোযোগী থাকে ; প্রজাশক্তি আদায় করিতে উদ্বদ্ধ হইলে রাজশক্তি সকল সাহায্য করিতে বাধ্য হয় । অতএব সকলে কৰ্ম্মরত হইয়া আপনাদের উন্নতি ও মঙ্গলের পন্থা পরিষ্কার কর।” মহারাজা স্বদেশীর পক্ষপাতী ; কিন্তু একেবারে বিদেশবর্জনের নহে। তাহার মত প্রেমমূলক, বিরোধপন্থী নহে । তিনি জাপানের দৃষ্টান্ত দ্বারা বলেন যে, বিদেশের শিক্ষণীয় সকল গুণ আয়ত্ত করুিয়া নিজস্ব করিয়া লও, তাহদের কল কারখানা অfয়ত্ত করিয়া স্বদেশী কর এবং তাহার পরিবর্তে তাহাদিগকে আধ্যাত্মিকতা শিথাও । এই আদান প্রদানের সংযোগ না থাকিলে সকল দেশ সমানভাবে অগ্রসর হইতে পারে না । বাহিরের সংসর্গ ত্যাগ করিয়াই আমাদের বর্তমান তুর্দশা, আমরা যেন আর সেরূপ ভ্রমে পতিত না হই । সম্প্রতি এক্ট রাজদম্পতি আমেরিকা পরিভ্রমণ করিয়া, দেশে ফিরিয়াছেন । আমেরিকার কৰ্ম্মোৎসাহ, ব্যবসায় শৃঙ্খলা, বিজ্ঞানোন্নতি দেখিয়া মহারাজ মুগ্ধ হইয়াছেন ; আমেরিকার নিকট আমাদিগকে ইহা শিখিতে উপদেশ দিতেছেন। মহারাণী মুগ্ধ হইয়াছেন আমেরিকার স্ত্রীশিক্ষার ব্যবস্থা দেখিয়া ; তিনি বলিয়াছেন ‘পুরুষের পশ্চাতে রমণী যদি উৎসাহ সাস্তুনা লইয়া দাড়ায় তবেই পুরুষ জীবন-সংগ্রামে তিষ্ঠিতে পারে ; মাতা শিশুকে যেমন করিয়া গড়িবেন শিশু তেমনি হইবে ; সুমাতার গঠিত সন্তান যদি স্থপত্নীর সাহায্য লাভ করেন, তবে তিনি কতদূর কৰ্ম্মক্ষম হয়েন, তাহার দৃষ্টান্ত আমেরিকা। স্ত্রীলোকেই সাম্রাজ্য গড়ে, পুরুষ উপলক্ষমাত্র । বিদেশের সঙ্গে যোগ রাখিয়৷ এই সকল গুণ আমাদিগকে আয়ত্ত করিয়া নিজস্ব