পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা । ] কিনারে ঘাসের ভিতর লুকাইয়া রাপিয়াছিল ; তাহার এই কাৰ্য্যটি কাল অবলা বিশেষরূপে নিরীক্ষণ করে; আজ আর সেখানে কুসুমগুচ্ছটি পাওয়া যাইতেছে না; তাহার দৃঢ় বিশ্বাস, নিশ্চয়ই অবলা তাঙ্গ চুরি করিয়াছে । সে তাঙ্গর ঘরে যাইয়া যথাসম্ভব ঐ গুচ্ছের অনুসন্ধান করিবে এবং যদি তাঁহা অবলার নিকট অথবা তাহার সম্পকিত কোনো পদার্থের সহিত দেপিতে পায়, তবে সে সত্য সত্যই তাহার সহিত ঝগড়া না করিয়া থাকিতে পারবে ন। এক দল রমণীকর্তৃক আপনার স্নেহপূর্ণ উপদেশ অবজ্ঞাত হওয়ায়, বৃদ্ধ ইতিপূৰ্ব্বেষ্ট কিঞ্চিৎ উত্তপ্ত হইয়াছিলেন, এক্ষণে ত্রয়োদশার এই উদ্ধত বাচালত তাহার সংযমের বন্ধন শিথিল করিয়া দিল ;—ীতারই দ্বারা ঘাটে সৰ্ব্ব প্রথম রাগের অভিনয় হইয়া গেল। বৃদ্ধ এখানে অধিকক্ষণ থাকিলে, রাগের মাত্রা আরো বাড়িয়া যাইবে বুঝিতে পারিয়া তাড়াতাড়ি স্নান শেষ করিয়া, তাfবক্ষ নিমজ্জিত অবস্তায় সূর্যাদেবের উদ্দেশে কয়েক অঞ্জলি জল প্রদান পূর্বক “স্থান ত্যাগেন দুৰ্জ্জন” এই নীতিবাক্যের অনুসরণ করিলেন । বেলা প্রায় প্রহর অতিক্রম করিতেছে । সূর্য্যদেব বেশ উগ্ৰমূৰ্ত্তি ধারণ করিয়াছেন । অনেক লোক ঘাটে আসিয়া কাজ শেষ করিয়া চলিয়া গিয়াছে । কিন্তু সেই ’৭য়োদশ পরিচারিক, ষাক্তার মনে তৈজস পরিমানুন ব্যাপার অপেক্ষ কুসুমগুচ্ছষ্ট তাধিক আধিপত্য বিস্তার করিয়াছিল, তাহার কাজ অল্পষ্ট অগ্রসর হইয়াছিল T এষ্ট সময়ে এক জন পরিচারিক আসিয়া তাহাকে ক গ্রী ঠাকুরাণীর তলপ জানাইয়া গেল । ছোট কাকীমা মহাবিষুব সংক্রান্তি দিন দানসংক্রান্তি ব্রত গ্রহণ করিয়াছিলেন, তিনি সমগ বৈশাখ মাস প্রত্যহ এক একটি সবস্ত্র জলপূর্ণ কলসী দান করিবেন এই উপলক্ষ্যে আজ সেও যেন কাজ-কৰ্ম্মে অন্সান্ত দাসীর সহায়তা করে। সে কোন উত্তর না দিয়া অত্যন্ত অস্বচ্ছন্দভাবে ঘর্ষণকাৰ্য্য চালাইতে লাগিল । বলা বাহুল্য, সে সময় তাহান্ন মুখে পরাধীনতার দুঃথচ্ছায়া স্পষ্ট পরিলক্ষিত হইতেছিল - , কিছুক্ষণ পর দাসী আবার আসিল, এবার কিঞ্চিৎ কঠোর স্বরে তাঙ্গকে বলিল—“তোমাকে ডাকিতে কতবার আসিবু ! এখনও তোমার কাজ শেষ হয় নাই ! মনে আছে, বাসন-ঘষা ছাড়া তোমার আরো কাজ আছে।” পরিচারিকার্টির রুক্ষ স্বরে ত্রয়োদশ অত্যন্ত পীড়া পাইল— তাহার চক্ষু কিঞ্চিৎ বিস্ফারিত হইল, ক্রযুগল ঈষৎ কুঞ্চিত হইয়া গেল। সে সামান্ত বিকৃত কণ্ঠে কহিল—“আমি কি বসিয়া আছি ? দেখিতেছ না আমি কাজ করিতেছি ?” অপরাধীর.এই শ্রুতি-বিরস রাগিণী আদেশবাহিকাকে বড় বিস্মিত করিল, সে তাহার ক্রযুগল কপালে তুলিয়, আরো বড় করিয়া বলিল--"বাঃ তুমি বেশ লোক ত! বৎসরের (ల প্রথম দিনে আমার সঙ্গে এমনি করিয়া বুঝি ঝগড়া বাধাইবে ? কলতভাত পরিচারিক এ কথা বলিয়া তথায় আর দাড়াইল eli | যে সকল সরলমনঃ অস্তঃপুরিকা বুদ্ধার সন্ধ্রপদেশ প্রতিপালনে বদ্ধপরিকর হইয়াছিলেন, তাহীদের মধ্যে একজন এক্ষণে তরকারী সংগ্ৰহ করিতে বাগানে প্রবেশ করিলেন । এই বাগানটি গঙ্গর প্রচুর উদ্যমশীলতার পরিচায়ক। ইহা তাহারই ঘরের সম্মুখে পনেরো বৰ্গহস্ত ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত। বাগানে প্রবেশ করিয়াষ্ট অন্তঃপুরিকাটি অত্যন্ত "হতাশভাবে বলিয়া উঠিলেন--”কে আমার একটা বেগুন লইল । দেবতার জন্স কাল দু’টা বড় বড় বেগুন বাছিয়া রাশিয়াছিলাম, আজ তাঙ্গর একটা কোথায় গেল !” অতিরিক্স কোন কথা ষ্টাঙ্গর মুপে আসিল না । বিষণ্ণবদনে বারান্দায় ফিরিয়া তিনি তাবশিষ্ট বাত্তাকুটিকে ভাজার উপযুক্ত করিয়া কুটিতে বসিলেন । এমন সময় অষ্টমবর্ষীয় দাসী-কন্ত। লক্ষ্মী অ{{সয়া তাহকে অতি বিনীতভাবে কহিল—“মা, আপনার বাগানের একটা বেগুন আমার মা পাড়িয়াছে । আজ তাহার অনেক কাজ, শাঘ আহারের সময় পাইবে না ; তাষ্ট বেগুনটির দ্বারা সে কোন প্রকারে চারিটা খাইয়া তাড়াতাড়ি কাজে চলিয়া গিয়াছে । এবং এই কথা আপনাকে জনাইতে বলিয়া গিয়ছে । আমার মা ঐ বেগুনটি পাড়িবার পূৰ্ব্বে অনেক বার আপনার গোজ করিয়ছিল । ( প্রণাম করিয়া ) না, আমাদের অপরাধ ক্ষমা করুন ।” অন্তঃপূরেকটি কিঞ্চিৎ করুণামিশ্রিত বিরক্তির সঠিত বললেন--“আমীকে যে তোর তালাস করিয়াছিলি বলতেছিস্ তা' আমি কি প্রাচীরের বাহিরে ছিলাম ?” বড়ষ্ট দুঃখের বিষয়, আজ তাতার প্রতিজ্ঞ সম্যকৃরূপে রক্ষিত হইল না ;--সহসা নৈরাশ্যজনিত যে বিযর্থতা তাহীকে আক্রমণ করিয়াছিল, তাঙ্গর প্রভূত্ব হইতে তিনি সম্পূর্ণরূপে আত্মরক্ষা করিতে পারলেন না । এদিকে মাতৃদেবীগণ ও কাকীমীগণ স্নান-পবিত্র হইয়া তরকারী কুটিতে লাগিলেন । এবং তাঙ্গদের কেহ বা বারকোসে কেহ বা বৃহৎ পালায় কৰ্ত্তিত তরকারীগুলি পৰ্য্যায়ক্রমে স্ত,পাকার করিতে লাগিলেন। বড় মাতৃদেবী তরকারী কুটিয়া শেষ করিয়াছেন। উহার নির্দেশ মত একজন চাকর তরকারী বিদ্যস্ত বারকোসখানি e লক্ষ্মীনারায়ণ দেবের মন্দিরে লষ্টয়া চলিল । এই অবসরে জ্যেষ্ঠ দৈবজ্ঞ নূতন পঞ্জিকা হাতে করিয়া তথায় উপস্থিত হইলেন। ইনি এবার মাতৃদেবীর অভিপ্রায় অনুসারে তাহাকে পঞ্জিক শুনাষ্টবার ভার লইয়াছিলেন। ঠঙ্গর আগমনে কতিপয় অন্তঃপুরিক বৎসরের ফলাফল জানিবার জন্ত তথায় একত্রিত হইল । দৈবজ্ঞঠাকুর কুশাসনে বসিয়া যথাবিধি পঞ্জিকা-পাঠ আরম্ভ করিয়া দিলেন।