পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা । ] , - - আমাদের আর এক দল, যাহাঁদের বয়স ছয় হইতে দশ বৎসর পর্য্যস্ত, তাহীদের মধ্যে কেহ কেহ জ্যেষ্ঠ ভগ্নীদের প্রতিধ্বনি করিল, এবং কেহ কেহ বা প্রকৃতির সরলতাবশতঃ আপনাদের ক্রীড়াসঙ্গীদিগকেই প্রণয়ের পাত্র বলিয়া নির্দেশ করিয়া সত্যের মর্য্যাদা রক্ষা করিল। যদিও পিতামহ ও পিতামহী দেবীকে ভালবাসি বলিয়া প্রকাশ করিতেই উঠার অভিভাবিকদের দ্বারা শিক্ষিত হষ্টত, তথাপি পরীক্ষাস্থলে অনেক সময় উহাদের স্বাভাবিক মনের ভাবষ্ট ব্যক্ত হইয়া পড়িত। মহাবিষুব সংক্রান্তি হইতে “বেলভ্যতা”ব্রত আরম্ভ হইয়া গিয়াছিল । আমাদের অন্তঃপুরে এই ব্ৰত সন্তানের মঙ্গল কামনায় গৃহীত হইয়া থাকে, এবং বৈশাখ মাসের শেষভাগের শনিবারে ইহার প্রতিষ্ঠা করিতে হয়, কিন্তু ব্ৰতচারিণীগণ সমগ্র বৈশাখ মাস সূৰ্য্যদেবের আস্তাগমনের পর আর অন্ন গ্ৰহণ করেন না | বৈশাখ মাসে আমাদের অস্তঃপুরে একটী বিশেষ খেলার নিয়ম আছে ; তাঙ্গার নাম “ঘিলা থেলা” । এষ্ট খেলা মণিপুরী মহিলাদের সহিত অন্তঃপুরে প্রবেশ লাভ করিয়াছে। পেলার উপকরণ গুলি যদিও আদিম নিবাসে কাষ্ঠময় ও শৃঙ্গজ ছিল, আমাদের অন্তঃপুরে আসিয় তাহারা হস্তিদন্তে রূপান্তরিত হইয়াছে । কিন্তু আদিমত্বের মায় যে অপরিত্যাজ্য তাহারই প্রমাণ স্বরূপ তুষ্ট চারিটা শৃঙ্গময় উপকরণের অস্তিত্ত্ব রচিয়াছে । •o বাজী ধরিয়৷ এই খেলা আরম্ভ হইয়া গেল । এক পক্ষে মাতৃদেবীগণ ও অপর পক্ষে কাকীমাগণ । দুই চারিঞ্জন বৃদ্ধাও উভয় পক্ষে যোগদান করিলেন । প্রতিদ্বন্দুিগণ পরম্পরের মধ্যে প্রায় বিশহাত ভূমি ব্যবধান রাখিয়া এক এক দিক অধিকার করিয়া লইলেন । থেলার সামগ্ৰীগুলি সহজে গড়াইবার নিমিত্ত তথায় পাতলা করিয়া বালুক বিস্তারিত হইল। প্রথমে মাতৃদেবী পক্ষের একজন বৃদ্ধা বক্রভাবে দাড়াইয়া হস্তিদম্ভনিৰ্ম্মিত তিন ইঞ্চি ব্যাস ও অৰ্দ্ধইঞ্চি বেধ বিশিষ্ট বৃত্ত উপকরণখানি গ্রহণ করিলেন ; তার পর আপন• প্রতিদ্বন্দীর সম্মুখস্থিত অদ্ধ ইঞ্চি উচ্চ ঘুটিকে লক্ষা করিয়া নিক্ষেপ করিলেন । বৃদ্ধার লক্ষ্য ভ্ৰষ্ট হইল না, কাজেই তিনি পুনরায় উহাকে নিক্ষেপ করিবার অধিকারিনী ইষ্টলেন । এবারেও র্তাহার সফলতা লাভের পর, উপবিষ্ট হইয়া সাড়ে পাচ ইঞ্চি লম্বা কুলার আকৃতি বিশিষ্ট খেলার উপকরণকে মধ্যম অঙ্গুলীর সাহাষ্যে তিনি ঐ ঘুটির দিকে চালিত করিলেন। ইহার দ্বারা লক্ষীভূত ঘুঠিকে আঘাত করিতে পারিলেই একখানি চিক্কণ বংশ শলাকায় চিহ্ন পড়িয়া যাইবে নতুবা সপক্ষের অন্যান্য ক্রীড়ণশীলাদিগকে পৰ্য্যায় ক্রমে ঐরূপ চেষ্টা করিতে হইবে। পূৰ্ব্বেই কথা ছিল, যে দল এরূপ একশত মার্ক পাইবে তাঙ্গদেরই বাজী জিত ত্রিপুরার অন্তঃপুর । && হইবে । এক পক্ষের অপারগতার ( miss হইলে ) অপর পক্ষ ঐরুপে একশত মার্ক লাভের চেষ্টা করিতে লাগিলেন। কিন্তু দুই দিনের খেলায় দেখা গেল, কাকীমাদের জয়লাভের আশা অত্যন্ত অল্প । ইহাতে র্তাহীদের মুখমণ্ডল বিষম নিরুৎসাহের কালিমা মণ্ডিত হইল - তাহারা খুব গম্ভীর হষ্টলেন । বস্তুতঃ পরদিন তাহাদিগকেই পরাজয় স্বীকার করিতে হইল। কিন্তু কাকিমাদের ইচ্ছায় সেই দিনই উভয় পক্ষের পূৰ্ব্ব নির্দিষ্ট স্থান পরিবর্তন হইয়া নিয়মমত আবার থেলা আরম্ভ হইয়া গেল । ইহাদের মধ্যে কেহ কেহ, যাহাতে বিজয়গৌরব তাহদের মুথমণ্ডলের শোভা বৰ্দ্ধন করে, শাস্তভাবে তাহারই চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইলেন, কেহ কেহ বা পয়াজয়জনিত রাগের সহিত অশান্তভাবে খেলার উপকরণ গুলিকে চালনা করিয়া আপনাদের দুৰ্ব্বলতা সকলের গোচরীভূত করিলেন । এবং এই কারণে এবার একটি দুর্ঘটনাও ঘটিয়া গেল—কাকীমাদের পক্ষের একটি গোলাকার ক্রীড়া-সামগ্ৰী কুচালিত হওয়ায় একজন বৃদ্ধ দর্শিকার কপালে আঘাত করিল। বুদ্ধা বসিয়া খেলা দেখিতেছিলেন ; আঘাতের যন্ত্রণায় তিনি কপালে হস্ত রক্ষা করিয়া, প্রায় ভূমিতে লুটাইয়া কাদিতে লাগিলেন। শিশুর দ্যায় বৃদ্ধার সঙ্গস উত্থিত উচ্চ ক্ৰন্দনধ্বনি অনিচ্ছাসত্ত্বেও তথাকার সকলের হাসি উৎপাদন করিল। আবার তৎক্ষণাৎ অনেকেই বিমৰ্ষভাব ধারণ করিলেন ; কেহ কেহ বা ঈষৎ হাসিতে হাসিতে প্রাচীনার দিকে অগ্রসর হইলেন । দুই চারি জন তরুণী যাহার হাসি থামাইতে পারিতেছে না, তাহারা বেগে সেই স্থান ত্যাগ করিল। বৃদ্ধার আঘাতের স্তান ফুলিয়া কিছু উচু হইয়াছে দেখিয়া অনেকে অক্ষেপ করিলেন ; ছোট কাকীমা তাহার নিকটবৰ্ত্তী এক গ্লাস জল আনিয়া দিয়া বৃদ্ধাকে উহাতে জলপটি দিবার জন্ত উপদেশ দিলেন । তিন দিনের খেলার পর এই পালায় কাকীমাদের জয়লাভ হইল । ,এবং উভয় পক্ষ হইতে অঙ্গীকৃত শাড়ীর অর্পণ-প্রত্যপণ হইয়া গেল। বৃদ্ধার সাদা পাড়ের ধুতি পাইলেন । এই উপলক্ষ্যে কাকীমাদের পক্ষের একজন বৃদ্ধ, প্রতিদ্বন্দ্বীদের লক্ষ্য করিয়া বলিলেন যে, উহাদের পেলার স্থান সুবিধাজনক ছিল না বলিয়াই প্রথম বার ষ্টেtহার হারিয়া গিয়াছিলেন । ইহা শুনিয়া বিপক্ষ অমনি উত্তর করিলেন—তোমাদিগকে বিমর্ষ দেখিয়া আমাদের দয়া হইয়াছিল—থেলায় তেমন মনোযোগ দেওয়া আমরা কথন উচিত মনে করি নাই, তাই অবহেলা করিয়াছি । তর্ক-বিতর্কের মধ্যে ছোট কাকীমা হাসিয়া বলিলেন— আগের বাজী বাঘে খায়, শেষের বাজী কৃষ্ণে পার । একজন চাকরের হাতে ঝুলায়মান খাচার ভিতর কয়েকটি