করিল, “হ্যাঁ রামদা ডোরা কি এ সব কথা কিছ জানে ? তার আমার কি সম্মবন্ধ, তা কি সে জানতে পেরেছে ?”
“পেরেছে বইকি। আপন ভাই জেনেই ত প্রাণ দিয়ে তোমার সেবা করেছে। নইলে ভাড়াটে নাস কি আর অত করে দাদাবাব ?”
“ডোরা কি ক’রে জানলে ?” "মামাবাব আসবার ৩৪ দিন পরে, একদিন তিনি ডোরাকে তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করেছিলেন। বাপের নাম জিজ্ঞাসা করতেই—সে কত্তার নাম করে দিলে। তার পর কথায় কথায় সবই বেরিয়ে পড়লো। ডোরার বাসায় তার মা-বাপের ফটোগরাপ ছিল, —এনে দেখালে। কত্তা চেয়ারে বসে রয়েছেন, ডোরার মা চেয়ারের পিছনে হাত রেখে দাঁড়িয়ে। সে ফটোগেরাপও ভবানীপুরের বাড়ীতে আমার সামনেই তোলা হয়েছিল – উঃ, বাপ রে! সে সব কথা যাক –তুমি এখন শোও দাদাবাব। আমার মুখ দিয়ে আর কথা বেরচ্ছে না। আর কিছু যদি শুনতে চাও, কাল আবার শুনো।”—বলিয়া বন্ধ নীরব হইল।
নিরঞ্জন সেইভাবে অনেকক্ষণ চেয়ারে বসিয়া রহিল । তাহার পর আলো নিবাইয়া শয়ন করিল।
প্ররদিন নিরঞ্জন রামরে সহিত পরামর্শ করিয়া, মামাবাবকে একখানি দীঘ পত্র লিখিল । প্রস্তাব করিল, ডোরাকে নাসেসি হোম হইতে আনাইয়া নিজের কাছে রাখিবে এবং প্রায়শিচত্ত ও শুদিধ করাইয়া, বিলাত-ফেরত সমাজে তাহার বিবাহ দিবে। অবশ্য ডোরার জন্মরহস্য—অন্ততঃ পাত্রের নিকট প্রকাশ করিয়া, সে সম্মত হইলে, তার পর বিবাহ। কিছু বেশী টাকাই না হয় লাগিবে।
মামাবাবরে উত্তর যথাসময়ে আসিয়া পেপছিল। তিনি সানন্দে মত দিয়াছেন। সেই দিনই বিকালে নিরঞ্জন নাসেসি হোম-এ গিয়া বোনটিকে বাড়ী লইয়া আসিল ।
শান্ধি ও প্রায়শ্চিত্তান্তে ডোরার নতন নাম হইল—কমলা। পরবৎসর যোগ্য পাত্রের সহিত কমলার এবং যোগ্যা পাত্রীর সহিত নিরঞ্জনের বিবাহ হইয়া গেল—কিন্তু সে সব ত অন্য গলপ ।
বেকসর খালাস
চব্বিশ বৎসর বয়সে আমি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীণ হইলাম। তখন আমি কয় ছেলের বাপ হইয়াছি, এই কথাই তোমরা জিজ্ঞাসা করিতেছ ত ? না, আমার সন্তানাদি তখনও কিছ হয় নাই। লোকে বলিত, হইবার আশাও খুব কম, কারণ, আমার সন্ত্রীর বয়স তখন কুড়ি বৎসর।
আমার নাম নগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, জাতিতে আঁমরা সদগোপ। নিবাস, বন্ধমান জেলার অন্তগত কালীনগর গ্রামে। যে দেবীর নাম হইতে গ্রামের নামের উৎপত্তি, তিনি খুব জাগ্রত দেবতা—দরদ রান্তর হইতে লোকে তাঁহার মন্দিরে মানস-পজো দিতে আসে ।
গ্রামে আমাদের বহল ঘর সদগোপের বাস। সহর অঞ্চলের সদগোপেরা অনেকে সে দিনেও ইংরাজী লেখা-পড়া শিখিয়া “বাবা" হইয়াছে কিন্তু আমাদের গ্রামটা নাকি “অজ" পাড়াগাঁ, তাই আমার সবজাতীয়েরা তখনও “বাব" হইবার উচ্চাকাঙক্ষা মনের কোণেও সথান দিত না । কিন্তু পিতা আমার কলিকাতা ঘুরিয়া আসিয়াছিলেন। তিনি মনে মনে স্থির করিয়াছিলেন, আমি চাষবাস করিব না, ইংরাজী পড়িয়া “বাব হইব এবং চাকরি করিব।
যথাকালে আমি গরমহাশয়ের পাঠশালায় ভত্তি হইয়াছিলাম। পাঠশালার পাঠ যখন সাঙ্গ করিলাম, তখন আমার বয়স চৌদ্দ উত্তীণ হইয়াছে। তখন আমি উপযুক্ত হইয়াছি বিবেচনায়, পিতা আমার বিবাহ দিলেন এবং লোকের টিটকারী অগ্রাহ্য করিয়া আমায়
ృతి 8
পাতা:প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের গল্পসমগ্র.djvu/১৯৫
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
