পাচ
দই দিন পরে শরৎ আসিয়া, স্নান করিয়া মনোরমার পাকশালায় প্রবেশ করিল। তাহার কথাবাত্তা, চালচলন অত্যন্ত বিনীত ও ভদ্র। মনোরমাকে গোড়াতেই সে মাতৃসম্বোধন করায়, তাহার সম্বন্ধে সকোচের ভাব মনোরমার মন হইতে অনেকটা দর হইল। তথাপি মনোরমা মোক্ষদাকে বলিল, “যাও না তাই, কি কি রাঁধতে হবে, বামনঠাকুরকে বলে দাও গে না।”
মোক্ষদা জিভ কাটিয়া বলিল, “না দিদি, আমি পারবো না ওর সঙ্গে কথা কইতে। তুমি গিন্নী-বান্নি মানুষ, তুমি যাও।”
অবশেষে মনোরমা গিয়া বামন-ঠাকুরকে রান্নার বিষয় বলিল। আরও বলিল, “আমার বড় ছেলে নগেন দশটার সময় খেয়ে ইস্কুলে যাবে। বাব খেতে বসবেন সাড়ে এগারোটায়।”
বামন-ঠাকুর বলিল, “তা হলে মা, বড়বাবর ভাত ক'টা আগে চড়িয়ে দেবো এখন, কত্তাবাবর আর অন্য সবাইকের ভাত শেষে রাঁধবো।” “তাই কোরো”—বলিয়া মনোরমা চলিয়া আসিল । মাঝে মাঝে মনোরমা গিয়া আধঘোমটা দিয়া রান্নাঘরের দবারের কাছে দাঁড়াইল, দেখিল, বামন-ঠাকুরের কাযে কোনওরপে ভুল হইতেছে না।
বামন-ঠাকুর দই তিনবার শয়ন-ঘরের নিকট আসিয়া ঘড়ি দেখিয়া গেল। নগেনকে যথাসময়েই সে ভাত দিল, যদিও সব রান্না তখনও তাহার হয় নাই ।
ইন্দবাব আপিস হইতে ফিরিয়া, স্নান করিতে যাইবার সময় রান্না-ঘরের নিকট দড়িাইয়া, সকৌতুকে একবার বি-এ পাস বামন-ঠাকুরের কার্যকলাপ দেখিতে লাগিলেন। বলিলেন, “কি হে শরৎবাব রান্নার তোমার কত দর ?”
শরৎ বলিল, “আন্দ্রে, আমায় আর বাব বলে লজা দেন কেন ? আর সব রান্নাই আমার হয়ে গেছে, ভাতটা চড়িয়েছি, আপনি সনান করুন, ততক্ষণ ভাতও হয়ে যাবে।”
খাইতে বসিয়া, অর্ধেক খাওয়া হইলে ইন্দবাব স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ সব কি বামন-ঠাকুর নিজে নিজেই রোধেছে ? তুমিই বোধ হয় দেখিয়ে শনিয়ে দিয়েছ ওকে ”
মনোরমা বলিল, “আমি কিছু দেখিয়ে দিইনি।” “তবে মোক্ষদা দেখিয়ে দিয়েছে বোধ হয়।” “ও ত রান্না-ঘরের রিসীমানায় যায়নি। কেন, বামনঠাকুর রোধেছে কেমন ?” “বেশ রোধেছে গো r—বলিয়া ইন্দবাব শরৎকে ডাকাইলেন। শরৎ আসিয়া অনতিদরে বিনীতভাবে দাঁড়াইয়া বলিল, “আর কি এনে দেবো ?” ইন্দবাব বলিলেন, “আর কিছু এনে দিতে হবে না। কিন্তু শরৎ, ঠিক করে বল দিকিনি, সত্যিই কি তুমি বি-এ পাস ?”
শরৎ কিছল উত্তর করিল না, শুধু একটন হাসিল । ইন্দনবাব আবার বলিলেন, “তুমি বলেছিলে মোটামুটি এক রকম রাঁধতে তুমি জান। এ ত মোটামুটি রকম নয়, এক্সপাট হাতের রান্না ! এ তুমি শিখলে কি ক’রে ?”
শরৎ বলিল, “আজ্ঞে, আমি যখন মাস্টারি করতাম, তখন ছেলেদের নিয়ে আমি একটা বোডিং বলন, আশ্রম বলন, খুলেছিলাম। আমরা আশ্রমই বলতাম। মহাত্মা গান্ধীর আদশ আমরা অনুসরণ করতাম, নিজের নিজের সব কাজ আমরা নিজেরাই করতাম —এমন কি, বাসনমাজা, ঘর-ঝাঁড় দেওয়া পয্যন্ত। কোনও চাকর-বাকর আমাদের ছিল না। প্রথম প্রথম পাকপ্রণালী হাতের কাছে রেখে রোজই আমি নিজেই রধিতাম, ছেলেরা -পালাক্লমে আমায় সাহায্য করত। ক্ৰমে তারাও সব শিখে ফেললে । তার পর, মাঝে
Yoo? - -
পাতা:প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের গল্পসমগ্র.djvu/২৬২
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
