পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৪
প্রাকৃতিকী

বশতঃ, কলসাহায্যে চালানো দূরের কথা, রজ্জুদ্বারা সাধারণ উপায়ে চালাইতে গিয়াও, তরীখানি নাকি, উল্‌টাইয়া বিপরীতভাবে চলিতে আরম্ভ করিয়াছিল। এই আবিষ্কার-বিভ্রাটের সমস্ত দোষ কাষ্ঠসংযোজক মূর্খ সূত্রধারের হইলেও, সেই দিন হইতে বন্ধুবরের উৎসাহের মাত্রাটা অধোগামী হইতে দেখা গিয়াছিল। এই ঘটনার কিছু দিন পরে, রাসায়নিক পরীক্ষাসময়ে, এক দিন আর একটা গুরুতর বিভ্রাটের ফলে, কিছুদিন বিজ্ঞানালোচনায় যোগদানে অসমর্থ হওয়ায়, বন্ধুবরের বিজ্ঞানানুরাগ এক কালে অন্তর্হিত হইয়াছিল। সেই সময় হইতে বহুচেষ্টাতেও বন্ধুকে আর বৈজ্ঞানিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করাইতে পারি নাই, কিন্তু সর্ব্বপ্রকার কথোপকথন কালে গম্ভীরভাবে দুই একটা বৈজ্ঞানিক বুখ্‌নি দেওয়া স্বভাবটা তাঁহার পূর্বব্বৎ ছিল—তাঁহার আকর্ণবিস্তৃত গুম্ফরাজিশোভিত চস্‌মাবৃত মুখমণ্ডল দেখিয়া, তিনি যে ভবিষ্যতে একজন উচ্চদরের লোক হইবেন, তাহাতে বড় কেহ সন্দেহ করিতে পারিত না।

 বীতরাগী বন্ধুকে পুনরায় বিজ্ঞানালোচনায় প্রবৃত্ত করা দুরাশা জানিয়াও একদিন প্রাতে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিলাম; যাহা দেখা গেল তাহাতে আমার উদ্দেশ্য-সিদ্ধিপক্ষে আরো সন্দেহ উপস্থিত হইল। সেদিন রবিবার, বন্ধুর আফিস বন্ধ—তাঁহার সেই ক্ষুদ্র সজ্জিত ঘরে, মেজের এক প্রান্ত অধিকার করিয়া কি লিখিতেছিলেন। আমাকে আসিতে দেখিয়াই তিনি স্মিতমুখে চেয়ার টানিয়া বসিতে বলিলেন। তাঁহার লিখিত বিষয়ের কথা জিজ্ঞাসা করিবার পূর্ব্বেই তিনি বলিলেন, “আজ কাল মাসিক পত্রাদিতে, বেশ ছোট ছোট গল্প দেখিয়া, একটা গল্প লিখ্‌তে চেষ্টা কর্‌ছিলুম, গল্পটা প্রায় লেখা শেষ হয়েছে, এখন শেষ মিলাতে গিয়ে বড় গোলযোগ হয়েছে।” বন্ধুর এই অস্বাভাবিক পরিবর্ত্তন ও অবৈজ্ঞানিক ব্যবহার দেখিয়া বড় বিস্মিত হইলাম; আমার জানা ছিল বৈজ্ঞানিকগণের কাব্যপ্রিয় হওয়া একটি ভয়ানক ফ্যাসান-বিরুদ্ধ কার্য্য, ঘোর ফ্যাসানা-