পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৮
প্রাকৃতিকী

প্রত্যক্ষ করে, শুক্র হইতে তদপেক্ষা অল্পকাল ২২৪ দিনে, ঠিক সেই সকল জ্যোতিষ্কগণের উদয়াস্ত দেখা যাইবে—একথাটা হঠাৎ মনে পড়িয়া গেল; নির্দ্দিষ্ট নক্ষত্ররাশির উদয়াস্তকাল পরীক্ষা করিয়া, সেই সময়টি শুক্রবর্ষ ২২৪ দিনের কত অংশ, তাহা হিসাব করিয়া সময়নিরূপণ করিতে লাগিলাম। এই প্রকারে দেখা গেল, আমরা প্রায় দুই সপ্তাহ গুহাবাস করিতেছি। শুক্রগ্রহে আগমনকাল হইতে আমাদের একটি বড় আশ্চর্য্য পরিবর্ত্তন লক্ষিত হইয়াছিল—ক্ষুধাদমন শক্তিটা আমাদের অসম্ভব বৃদ্ধি পাইয়াছিল। যে উদরের কুমন্ত্রণায় পৃথিবীতে নিশিদিন ছুটাছুটি করিয়া বেড়াইয়াছি, শুক্রে পদার্পণের কিছুকাল পর হইতেই তাহার অস্তিত্বের চিহ্নমাত্রও জানিতে পারি নাই, এই দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা কেবল তিনবার আহার করিয়াছিলাম, কিন্তু ইহাতে দুর্ব্বলতা বা শারীরিক অবনতির লেশমাত্র অনুভব করি নাই। শুনিয়াছি দেবতারা অমৃতপানে অমর ও ক্ষুধারহিত হইয়াছেন; যদি আহার-লিপ্সাহীনতা দেবত্বের একটা অঙ্গ হয়, তাহা হইলে শুক্রগ্রহে আসিয়া যে আমরা ঈশ্বরত্বের একটা বড় সোপানে আরোহণ করিয়াছিলাম, তাহাতে আর সন্দেহ নাই। আমাদের পৌরাণিক স্বর্গ যে কতকটা শুক্রগ্রহের ন্যায়, বন্ধুবর তাহা ইহা হইতে সপ্রমাণ করিয়াছিলেন। যাহা হউক আমাদের অসম্ভব ক্ষুধানিরোধ-শক্তির প্রকৃত কারণ আবিষ্কারের জন্য বন্ধুকে অনেক পরিশ্রম করিতে হইয়াছিল; এই গবেষণায় অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমি বন্ধুকে কিঞ্চিৎ সাহায্য করিয়াছিলাম। অনেক পরীক্ষা করিয়া শুক্রবাসীদিগের প্রধান থাদ্য এক জাতীয় শাক সর্ব্বাপেক্ষা পুষ্টিকর দেখা গেল; কেবল একবার মাত্র ইহা আহার করিলে প্রায় দশ দিবস পর্য্যন্ত সামান্য ক্ষুধারও উদ্রেক হয় না। এই উদ্ভিজ্জাহারই যে আমাদের ভোজনস্পৃহা নিরোধের একমাত্র কারণ, তাহাতে আর সংশয় রহিল না।