বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান సె(t তাহা এত স্পষ্ট যে, তাহার সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নাই—আমি শত শত দৃষ্টান্ত দিয়া তাহা প্রমাণ করিতে পারি। “জিহবার সহিত দাতের পীরিত সময় পাইলে কাটে।” ইত্যাদি ভাব পল্লী-গাথায় অনেকবার পাইয়াছি। এই মুসলমান-রচিত পল্লী-গীতিকায়ও পাওয়া গিয়াছে—”ছোটর লগে বড়র পীরিত যেন পদ্ম-পাতার পানি। কোন সমে পড়া যায় তার খবর নাহি জানি।” একজন বড় অপরে ছোট, এই অবস্থা-বৈষম্যে প্রেম প্রকৃত জন্মে না। “ কি ছার চকোর চাদ দুহু সম নহে।” এই দুইয়ের মধ্যে প্রেম হইতে পারে না । মুসলমান কবির গীতিকার এই অংশ চণ্ডীদাসকে স্মরণ করাইয়া দেয়। এইরূপ সাদৃষ্ঠের কারণ কি ? যাহারা উভয় শ্রেণীর রচনা ভাল করিয়৷ পড়িবেন, তাহারা দেখিতে পাইবেন— ইহাদের আকার-প্রকার স্বতন্ত্র, কেহ কাহারও নিকট ঋণী নহে। আসল কথা এই যে, যুগ যুগ ধরিয়া সহজিয়ার। এদেশে স্নেহ ও আদরের শত কথার গড়ন দিয়াছেন। যে কোমল-কান্তভাব ও প্রকাশ-ভঙ্গী অপ্রতিদ্বন্দী ভাবে বাঙ্গালী নিজস্ব বলিয়া দাবী করিতে পারে, তাহা বাঙ্গালী জনসাধারণ ছড়ার মত দিন-রাত্রি মুখে মুখে ব্যবহার করিয়া আসিয়াছে। সেই সকল আদিম ছড়ার খনি হইতে পল্লী-কবি ও বৈষ্ণব-কবি উভয়েই সেই সকল কথা গ্রহণ করিয়াছেন । এই সকল কবিগণের ভাবের সঙ্গে একটা আধুনিক গানের ঐক্য আছে— “নাম না জানে ঠিকান, সোহি দেশ মুখ জানা। যাহ টুট গৈয়ি সব ধান্ধী, রাম রহিম এক বান্দা। যাহা কাফেরে মুসলমান, যাহা ভানু শশী নহে আন।” পল্লী-কবিদের প্রকাশভঙ্গী সরল ও গ্রাম্য। কিন্তু গভীর অনুভূতির পরিচায়ক। বৈষ্ণব-কবির। সাহিত্যিক-নৈপুণ্য ও কলা-সৌন্দৰ্য্য দিয়া সেই একই কথা সাজাইয়াছেন ।