* o o প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান করিতে চেষ্টা পাইয়াছি, সুতরাং সেই সংস্কার যে বংশ-পরম্পর তাহাদের শোণিতে প্রবাহিত হইয়া আসিবে, তাহাতে আশ্চর্য্যের বিষয় কিছুই নাই। আমি পূৰ্ব্বেই লিখিয়াছি—মুসলমান কবিদের অনেকে তাহাদের জন্ম-পল্লীকে প্রণতি জানাইয়। মুখ-বন্ধ করিয়াছেন, এই অশিক্ষিত কবিদিগকে কোন মোল্লা বা শাস্ত্রজ্ঞ-পণ্ডিত কিছু শিখায় নাই, কিন্তু তাহারা জানেন মাতৃ-পল্লী তাহদের কত শ্রদ্ধার সামগ্ৰী, তাহার র্তাহাদের দেশ-মাতৃকার প্রতি প্রাণের ভালবাসা অতি শ্রদ্ধ-সহকারে জানাইয়াছেন। হিন্দু কবি হইলে শুধু গঙ্গ-নদীর বন্দনা করিতেন, কিন্তু মুসলমান কবির হিন্দু-শাস্ত্রের কোন সংস্কার নাই, ‘সোনা বিবি’র কবি লিখিয়াছেন—ভেরামনা নদী বন্দু বহে শত নালে। শুধু তাহাই নহে— *পাড় বন্দি বৃক্ষ বন্দি ডালে আর মূলে। এবং অন্ত এক স্থানে ‘গোয়ালেতে গরু-বাছুর গাহিত বন্দিয়া”—তিনি কৃষক-কবি, র্তাহাকে পণ্ডিতগণ শিখান নাই যে, নদীদের মধ্যে গঙ্গাই একমাত্র বন্দনীয়, সে হয়ত গঙ্গা নদী দেখেনই নাই, তাহার নিবাস পল্লী-নদীর তীরে—যাহার তীরভূমি, জল এবং বৃক্ষ-লতার সঙ্গে তিনি চির-পরিচিত, যে গোয়াল-ঘরের গরুবাছুর তাহাকে জীবিকার সংস্থান করিয়া দিতেছে, এই সকলই তাহার স্বগণ ও পূজনীয়। মা-বাপের কথা মনে হইলে তাহাদের কথাও মনে হয়—বন্দনার সময় এই অন্তরঙ্গদিগকে তিনি ভুলিবেন কিরূপে। আমাদের অনেক প্রবাসী বন্ধুকে কলিকাতায় দেখিয়াছি, তাহাদের বাড়ী কোন নদীর তীরে জিজ্ঞাসা করিলে, অনেকক্ষণ ঘাড় চুলকাইয়া স্মরণ করিতে চেষ্টা করিয়া থাকেন। অথচ নাইল, সিন, ইয়াং সিকিয়াং প্রভৃতি নদীর উৎপত্তি স্থান পৰ্য্যন্ত না ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিতে পারেন। এই স্বদেশ-ভক্তগণ দেশের প্রতিনিধি হইয়া বক্তৃতায় স্বদেশের প্রেম জাহির করেন, কিন্তু কৃষক-কবিরাই দেশ-মাতার খাটি সন্তান, দেশের প্রতি ইছাদের দরদ খাটি, তাহাদের চক্ষে গোয়ালঘরটি
পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/২০৯
অবয়ব