○8 প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান শক্তিশালী হয় । যেরূপ রাজা সৰ্ব্ব দেশের প্রজা হইতে রাজস্ব গ্রহণ করিয়া স্বীয় ভাণ্ডার পূর্ণ করেন, ইসলামের গৌরবের দিনে আরব দেশ সেই ভাবে হিন্দুস্তানের জ্ঞান-বিজ্ঞান লুটিয়া লইয়াছিল। এমন কি, সেখ সাদী ও আবুল ফজলের ভ্রাতা ফৈজী ছদ্মবেশে শিষ্যরূপে ব্রাহ্মণের ঘরে ঢুকিয়া সংস্কৃত-লিখিত শাস্ত্রের মৰ্ম্ম সংগ্ৰহ করিয়া আনিয়াছিলেন। কিন্তু যখন কোন ধৰ্ম্ম নিস্তেজ ও মৃতপ্রায় হয়, তখন তাহ মুমুমু রোগীর দ্যায় বাহিরের আলো ও বাতাস গায়ে লাগিবে বলিয়া ভীত হয়, মহাসাগর এবং সিন্ধু, গঙ্গ। প্রভৃতি নদ-নদী দেশের মানারূপ ঐশ্বৰ্য্য ও আবর্জনার মধ্য দিয়া সগৌরবে চলিয়া যায়, যাহা কিছু পথে থাকে তাহ শোধন করিয়া আত্মসাৎ করিবার শক্তি তাহাদের আছে। কিন্তু কুপোদক কোন দ্রব্যের সংস্পর্শের আশঙ্কায় সৰ্ব্বদা স্বীয় সঙ্কীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে ভীত হইয়া থাকে। এই ছোয়াচে রোগে আমরা—হিন্দুরা যে সৰ্ব্বনাশের পথে চলিতেছি, তাছা চক্ষুষ্মান ব্যক্তিমাত্রেই দেখিতে পাইতেছেন। চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতাব্দীতে মুসলমানের প্রভাব ক্রমশ: বাড়িয়া চলিল, কিন্তু এই সময়েই হিন্দু ও মুসলমান পরস্পরের সঙ্গে ধৰ্ম্মক্ষেত্রে আত্মীয়ত স্থাপনের চেষ্ট পাইল। বিজয়গুপ্তের ‘পদ্ম পুরাণ'-এ হিন্দু-মুসলমানের যে উৎকট দ্বন্দ্ব স্বচিত হইয়াছে, তাহাতে যেন শান্তিজল প্রক্ষেপ করিয়া বঙ্গের পল্লীতে সত্যপীর, মাণিকপীর ও মল্লিকপীর প্রভৃতি সাধুদের সম্বন্ধে বিবিধ কাব্য রচিত হইল। এই বিরাট সাহিত্যে আমার এখন প্রবেশ করার সময় ও সুযোগ নাই। আমরা দেখাইয়াছি যে, নাথপন্থী ও সদ্ধৰ্ম্মীরা হিন্দু-দেবতাদিগকে মুসলমান পীর-পয়গম্বররূপে অবতীর্ণ করাইয়াছেন। এইরূপে দক্ষিণ রায়ের সঙ্গে গাজীর যুদ্ধ লইয়া যে সমস্ত ব্যান্ত্রের পাচালী ‘কালু গাজি ও চম্পা প্রভৃতি নামে রচিত হইয়াছিল, তাহাতে গঙ্গাকে গাজীর মাসীমাত বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে।
পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/৪৩
অবয়ব