পঞ্চম পরিচ্ছেদ গল্পগাথার ঐতিহাসিক পট-ভূমিক বাঙ্গালার পল্লী-গাথা বাঙ্গালার অতুলনীয় সম্পদ। পল্লী-সাহিত্য ভারতে বৈদিক-যুগ হইতে আদৃত হইয়া আসিতেছে। বৌদ্ধাধিকারে জন-সাধারণের ভাষাকে রাজারা বিশেষ উৎসাহ দিতেন। প্রজার তাহাদিগকে কীৰ্ত্তিজ্ঞাপক গান রচনা করিয়া শুনাইতেন। হিন্দু-যুগে রঘু রাজ। প্রজাদের রচিত ঐক্রপ গান শুনিতে ভালবাসিতেন। খালিমপুরের তাম্রশাসনে ধৰ্ম্মপাল ( অষ্টম শতাব্দী) সম্বন্ধে উক্ত হইয়াছে যে, গ্রামোপকণ্ঠে রাখাল বালকগণ ও সৰ্ব্বশ্রেণীর নাগরিকগণ তদীয় প্রশংসা-সূচক গান গাহিত—এমন কি, পিঞ্জরাবদ্ধ শুক-সারীরাও সেই সমস্ত গান আবৃত্তি করিতে শিখিত। বানগড়ের তাম্র-শাসনে রামপাল (দশম শতাব্দী) সম্বন্ধেও ঐরূপ পল্লী গীতির উল্লেখ দৃষ্ট হয়। দ্বিতীয় মহীপাল-সম্বন্ধেও ঐরূপ কথা তামশাসনে আছে ( ‘কীৰ্ত্তি প্রজ-নন্দিত বিশ্বগীত’ ) । চৈতন্ত ভাগবতের অস্ত্যখণ্ডে লিখিত আছে যে—“জনসাধারণ চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ ভাগেও যোগীপাল’, ‘ভোগীপাল’ ও ‘মহী-পালের’ গীত শুনিতে ভালবাসিত ” “শেখ-শুভোদয়|” গ্রন্থে রামপাল সম্বন্ধে পল্লী-গীতির উল্লেখ দৃষ্ট হয়। একাদশ শতাব্দীর একখানি তাম-শাসনে ঈশ্বর ঘোষের পিতা ধবল ঘোষ সম্বন্ধেও ঐরূপ পল্লী গীতিকার উল্লেখ আছে। কিন্তু পালদের সময় পৰ্য্যন্ত আসিয়া এই প্রকারের রাজ-বন্দনার স্রোত হঠাৎ থামিয় গেল। সেন-রাজাদের সম্বন্ধে সেরূপ একটিও স্তুতি-গীতি পাওয়া যায় না । সেন-রাজাদের কোন তাম্রশাসন, কাব্য বা ইতিহাসে প্রজাগণ যে র্তাহাদের সম্বন্ধে কোন গীতি রচনা করিয়াছে,
পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/৫২
অবয়ব