বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন বাঙ্গল সাহিত্যে মুসলমানের অবদান (to আমি পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি যে, বৌদ্ধ-রাজগণ বঙ্গভাষার বিশেষ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন । তাহদের কীৰ্ত্তি-কথ। তাহার। মাতৃ ভাষায় শুনিতে ভালবাসিতেন। বিশেষ করিয়৷ পূৰ্ব্ববঙ্গ একসময় বৌদ্ধগণ অধুষিত থাকার ফলে তথায় বাঙ্গলা ভাষার অনেকগুলি প্রাচীনতম কাব্য প্রণীত হইয়াছিল। Mবঙ্গদেশ হইতে বৌদ্ধগণ তাড়িত হইলে তাহাদের নেতৃগণের একদল তিববত ও নেপালের উপত্যক ভূমিতে পলাইয়া যান, অপর দল চট্টগ্রামের পূৰ্ব্বে আরাকান ও ব্রহ্মদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেন, সেই প্যাগোডা ও ফুঙ্গীর দেশে বঙ্গীয় বহু বৌদ্ধ আডড স্থাপন করিয়াছিলেন । ইহারা বহু বিদ্যায় পারদর্শী ও কৃতী ছিলেন। তাহারা বাঙ্গলা ভাষার আদর করিতেন ও তাহার চর্চ। জনসাধারণের মধ্যে বিষদভাবে প্রচলিত করিয়াছিলেন । পূৰ্ব্বে একস্থানে লিখিত হইয়াছে—আরাকান রাজাদের অধিকার এক সময়ে ঢাকা হইতে পেগু পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ইহাদের অধিকারে চট্রগ্রামে এবং তদুপান্তে অধিকাংশ লোকই বৌদ্ধ ছিল। পরবর্তী যুগে এই সকল প্রদেশে এক স্ববৃহৎ সংখ্যক অধিবাসী ইসলাম ধৰ্ম্ম অবলম্বন করিল। এইভাবে তথায় কতক লোক বৌদ্ধ রহিয়া গেল এবং অপরাংশ ইসলাম গ্রহণ করিল। পূৰ্ব্ববঙ্গের মুদূরে চট্টগ্রাম সন্নিহিত আরাকান রাজ্যে বৌদ্ধ রাজদরবারের ভাষা ছিল বাঙ্গল ভাষা। যাহারা বৌদ্ধ রহিলেন এবং যাহার। মুসলমান হইলেন, তাছাদের উভয় শ্রেণীরই মাতৃভাষা ছিল বঙ্গল ভাষা। চট্টগ্রামের কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর, যিনি পরাগল খার আদেশে বাঙ্গলা ভাষায় মহাভারত রচনা করেন. তিনিও বাঙ্গলাকে ‘দেশী ভাষা বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন এবং শ্রীকরণ নন্দী যিনি পরাগল খার পুত্র ছুটি খার আদেশে—“জৈমুনি ভারত' রচনা করেন, তিনিও বাঙ্গলা ভাষাকে দেশী ভাষা" বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন— ‘দেশী ভাষায় এই কাব্য রচছ পয়ার। সঞ্চারউক কীৰ্ত্তি মোর জগৎ সংসার।’