প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান ۹ وي প্রতি বিশেষ অনুরক্ত থাকিলেও ঠহার। পুরুষপরম্পরা বৌদ্ধ-ধৰ্ম্মাবলম্বী ছিলেন । ইহাদের অনেক অনুশাসন ও খোদিত-লিপি পাওয়া গিয়াছে, সমস্তই বাঙ্গলা । রাণী কালিন্দী একটি বৌদ্ধ-মঠ প্রতিষ্ঠা করেন, তাহার প্রস্তরলিপি বাঙ্গল ভাষায় রচিত, রাণী কালিন্দীর বাঙ্গল অক্ষর মুক্তার দ্যায় সুন্দর । চক্মা রাজ-পরিবারের ভূমি-দান-পত্র ও অপরাপর দলিল দেখিলে বুঝা যায়—এই ক্ষুদ্র পাৰ্ব্বত্য চকুমা রাজ্যটি হিন্দু-মুসলমান ও বৌদ্ধধৰ্ম্মের ত্ৰিবেণী-সঙ্গম স্বরূপ ছিল, বাঙ্গাল দেশের পূর্ব-প্রান্তে বৌদ্ধ ও মুসলমান কিরূপ ঘনিষ্ঠভাবে মেশামিশি করিতেন। পরস্পরের প্রতি প্রীতি ও সোঁহাদ্যের ভাবে রাজ্যটি যেন ভরপুর ছিল — ইহাদের দলিল গুলিতে কিছু উর্দুর প্রভাব আছে, কিন্তু তাহাতে বাঙ্গলা ভাষা ততটা দুৰ্ব্বোধ হইয়া পড়ে নাই। কিন্তু সাম্প্রদায়িক হিসাবে মোল্লা, বামুন-পণ্ডিত ও ফুঙ্গীরা সাহিত্য ও ভাষাকে যেরূপ ভাবেই খণ্ড খণ্ড ও বিরুত করুন না কেন, এদেশে যাহার এক নীলাম্বর তলে একই কোকিলের ডাক শুনিয়া, একই নিঝরের জল পান করিয়া, একই কথায় মনোভাব জ্ঞাপন পূৰ্ব্বক মানুষ হইয়াছেন, তাহাদের দেশ এক, ভাষা এক,জাতি এক—সেই ভাষার নাম বঙ্গভাষা, সেই দেশের নাম বাঙ্গালা দেশ এবং সেই জাতীর নাম বাঙ্গালী । ইহাদের কেহ কেহ মুরদেশ কি আরব হইতে আসুন, কিংবা কাঞ্চী, দ্রাবিড় ও কনোজ হইতে আমুন এবং তাহদের মস্তিষ্কের পরীক্ষা করিলে তাহাতে টিবেটে, বাৰ্ম্মন, দ্রাবিড় বা যোঙ্গলিয়ান উপাদান ধরা পড়ুক না কেন, তাহারা বহুকালের জল-মাটর গুণে বাঙ্গালী হইয়া গিয়াছেন, তাহাদিগকে অন্ত কিছু বলা চলে না। বিলাতী আমড়া ও বিলাতী আলুতে এখন বিলাতের গন্ধ পৰ্য্যন্ত নাই। বরঞ্চ নানাশ্রেণীর পরদেশী জাতির মিশ্রণে যদি বাঙ্গালী জাতির সৃষ্টি হইয় থাকে, তবে বিবিধ শ্রেণীর লোকের গুণ আমাদের জাতিতে ফলপ্রস্থ হইয়া বাঙ্গালী চরিত্রের
পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/৭৬
অবয়ব