নারীদের দায়াধিকার সম্বন্ধে ভালো কোনো ব্যবস্থা না হয় তবে ভবিষ্যতে আরও কত দুর্গতি আছে, তাহা কে জানে?
নিবন্ধকারেরাও বোধ হয় এইসব কারণেই পরবর্তী শ্রুতিতে ‘স্ত্রিয়ঃ অদায়াদীঃ’ বলা সত্ত্বেও নারীদের দায়াধিকারসমর্থনে যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন। এই বিষয়ে বিজ্ঞানেশ্বরের মিতাক্ষরা হইতে জীমূতবাহনের দায়ভাগ ভালো। দায়ভাগে নারীদের অধিকার একটু বেশি দেওয়া হইয়াছে। কাশ্মীরের ‘অপরার্ক’ (দ্বাদশ শতাব্দী) তো স্পষ্টই বলিলেন, শ্রুতির অভিপ্রায় পুত্র থাকিলে কন্যারা পাইবে না। তবে পুত্র না থাকিলে কন্যারা পাইবে না কেন? স্মৃতি-চন্দ্রিকায় বলা হইল, কুমারী এবং সধবারা দায়াধিকার পাইতে পারেন। এই কথাতে বিধবাদের বাদ দেওয়া হইল। যদিও ইহাতে বিধবার প্রতি সুবিচার করা হইল না তবু দেবণ্ণভট্ট শ্রুতির অন্যায় ব্যবস্থাকে যতদূর সরাইয়া রাখা যায় তাহার চেষ্টা করিয়াছেন। নিবন্ধকারেরা যতটা পারেন করিয়াছেন কিন্তু এখন অবস্থাগতিকে এই বিষয়ে আরও সুবিচার ও সংস্কারের প্রয়োজন। শুধু সামাজিক স্বাধীনতা হইলেই তো হইবে না, আইনের বাধাও দূর করিতে হইবে। বোম্বাই প্রদেশে মিতাক্ষরা চলে। সে দেশে নারীদের অবরোধ নাই, কিন্তু মিতাক্ষরাতে নারীদের দায়াধিকার সংকুচিত। বাংলাদেশে নারীদের অবরোধ আছে। অথচ বাংলাদেশেই নারীদের দায়াধিকার অপেক্ষাকৃত ভালো।
ধর্মব্যবহারে বেদ ও স্মৃতি মান্য হইলেও সারা ভারতবর্ষে এখন লোকে সাধারণতঃ চলে নিবন্ধকারদের নির্দেশ অনুসারে। বিচারালয়ে সাধারণত বাংলাদেশে জীমূতবাহনের দায়ভাগ (একাদশ শতাব্দী), রঘুনন্দনের দায়তত্ত্ব বা দায়ভাগতত্ত্ব (ষোড়শ শতাব্দী) চলে। রঘুনন্দন অনেকটা জীমূতবাহনেরই অনুসরণ করিয়াছেন। জীমূতবাহন আসাম এবং নেপালেও চলে। আসামের প্রামাণ্য নিবন্ধকার পীতাম্বর সিদ্ধান্তবাগীশও (ষোড়শ শতাব্দী) জীমূতবাহনের অনুসরণ করিয়াছেন। তাঁহার দায়-কৌমুদী বিবাদকৌমুদীর অন্তর্গত। তাহা ছাড়া ভবদেব ভট্ট, শ্রীকৃষ্ণ তর্কালংকার, শ্রীনাথ তর্কচূড়ামণি, রামভদ্র, অচ্যুতানন্দ, মহেশ্বর প্রভৃতির মতামতও বঙ্গদেশে সমাদৃত। মিথিলাতে বিজ্ঞানেশ্বর-কৃত মিতাক্ষরা (একাদশ শতাব্দী) খুবই সমাদৃত। মিতাক্ষরা বঙ্গ আসাম ও পূর্বনেপাল ছাড়া ভারতের প্রায় সর্বত্র প্রচলিত। উড়িষ্যা