বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০০
প্রাচীন ভারতে নারী

কাশী বিহার দক্ষিণভারত ও উত্তরভারতে ইহা অতিশয় সমাদৃত। মিথিলাতে মিতাক্ষরা ছাড়া চণ্ডেশ্বরের বিবাদরত্নাকর (চতুর্দশ শতাব্দী), বিবাদ-চন্দ্র (পঞ্চদশ শতাব্দী), বাচস্পতিমিশ্রের বিবাদ-চিন্তামণি (ঐ) ব্যবহার-চিন্তামণি (ঐ), কমলাকর ভট্টের বিবাদ-তাণ্ডব (সপ্তদশ শতাব্দী) প্রভৃতিও খুব চলে। চণ্ডেশ্বরের কিছু স্বাধীন মত ছিল, আর বাকি সকলেই মিতাক্ষরার পথবর্তী। কাশী প্রদেশে মিত্রমিশ্রের (সপ্তদশ শতাব্দী) বীর-মিত্রোদয় সমাদৃত। মিতাক্ষরা তো আছেই। নির্ণয়সিন্ধুও কাশী প্রদেশে চলে। পঞ্জাবে মিতাক্ষরা ও বীরমিত্রোদয় চলে। কাশ্মীরে চলে অপরার্ক।

 মহারাষ্ট্র, উত্তরকর্ণাট, গুজরাট প্রভৃতি প্রদেশে চলে মিতাক্ষরা, বিশ্বেশ্বরভট্টের মদন-পারিজাত (চতুর্দশ শতাব্দী), নীলকণ্ঠ ভট্টের ব্যবহার-ময়ূখ (সপ্তদশ শতাব্দী)। নীলকণ্ঠ দেবণ্ণভট্টের রীতি অনেকটা অনুসরণ করিয়াছেন।

 মান্দ্রাজ প্রদেশে প্রচলিত দেবণ্ণভট্টের স্মৃতি-চন্দ্রিকা (দ্বাদশ শতাব্দী)। বরদরাজকৃত ব্যবহারনির্ণয়-রচনার যে কাল অধ্যাপক কানে নির্দেশ করিয়াছেন তাহা ঠিক নহে। মাধবের পরাশর-টীকাও এই অঞ্চলে অতিশয় সম্মানিত। মহারাজ প্রতাপরুদ্রের সরস্বতী-বিলাস (ষোড়শ শতাব্দী) উড়িষ্যায় রচিত হইলেও দক্ষিণভারতে বিলক্ষণ সম্মানিত।

 এই সব গ্রন্থ ও আদালতের নজির দেখিয়া এখন বিচার চলে। সঙ্গে সঙ্গে মেন সাহেবের রচিত Hindu Law, কোলব্রক রচিত Digest, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত Marriage and Stridhana, মোল্লা রচিত Hindu Law প্রভৃতি এখন মান্য গ্রন্থ।

 সেই যুগেও নিবন্ধকারদের মধ্যে যাঁহারা নারীদের এই দুর্গতির বিষয় লক্ষ্য করিয়া বেদপ্রমাণ লইয়া বিচার করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে দুইটি নাম উল্লেখযোগ্য। একজন হইলেন দক্ষিণভারতের বরদরাজ; তাঁহার ব্যবহারনির্ণয় ১২৫০ খ্রীস্টাব্দের পরে হইতে পারে না। তাহার পরেই উল্লেখযোগ্য সেই দেশেরই মাধবাচার্য লিখিত দায়-বিভাগ (চতুর্দশ শতাব্দী)।

 শ্রুতির ‘নিরিন্দ্রিয়’ বলিয়া স্ত্রীলোকেরা যে দায়াধিকারী হইবে না তাহার অর্থ যে একেবারে ভিন্ন, তাহা প্রথম দেখাইলেন ব্যবহার নির্ণয়। মাধব তাঁহাকেই অনুসরণ করিলেন।

 নারীদের বিবাহ প্রভৃতি সব বিষয়েই ব্যবহারনির্ণয়ের বিচার দেখা উচিত।