বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৪
প্রাচীন ভারতে নারী

অধিকার মানেন না, তাঁহারা স্ত্রীকে বুঝাইতে ‘ঘোষিৎ’ ‘বিধবা’ ‘নারী’ ‘ভার্যা’ প্রভৃতি হীনতাবাচক শব্দ ব্যবহার করেন। আর যাঁহারা অধিকার মানেন তাহারা শ্রেষ্ঠত্ববাচক ‘পত্নী’ শব্দ ব্যবহার করেন। বরদরাজ শেষোক্ত দলেরই মত সমর্থন করেন। তাঁহার মতে স্ত্রী সম্মানার্হা, ‘পত্নী’পদবাচ্যা।

 পূর্বেই বলা হইয়াছে যে, প্রজাপতি প্রভৃতি যেসব শাস্ত্রকারেরা জ্ঞাতিদের কাছে বিধবার খোরপোশের ব্যবস্থামাত্র মানেন, দায়াধিকার মানেন না, তাঁহাদের সঙ্গে বরদরাজ একমত নহেন। তাঁহারা বলেন, জ্ঞাতিরাই দায়াধিকারী। বরদরাজ অতি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, এইসব কথা অতিশয় অন্যায় ও একেবারে যুক্তিহীন—

অপুত্রায়া বিধবায়া জ্ঞাতিভরণমাত্রমের ন দায়প্রাপ্তিঃ।
পায়প্রাপ্তিস্তু জ্ঞাতীনামেব মন্যন্তে। এতৎ সর্বমযুক্তম্॥ পৃ ৪৫৭

 মনু যে বলেন—

পিতা হরেদপুত্রস্য রিক্‌থং ভ্রাতর এব বা। পৃ ৪৫৮

ইহাতে বরদরাজ বলেন, এখানে ‘এব’ শব্দের দ্বারা পিতা হইতে ভ্রাতার প্রাথম্য বুঝায় মাত্র, স্ত্রীর স্বত্ব নাই এইরূপ বুঝায় না, কারণ ইহাতে ক্রমপ্রতিপাদক শব্দের অভাব রহিয়াছে—

ক্রমপ্রতিপাদকশব্দাভাবান্ ন প্রথমং পত্নীব্যুদাসঃ।
এবকারাৎ পিত্রপেক্ষয়া ভ্রাতুঃ প্রাথম্যম্। পৃ ৪৫৮

তথা

অনপত্যস্য পুত্রস্য মাতা দায়মবাপ্নুয়াৎ। ঐ

এই মনুবচনেও ক্রমপরশব্দাভাববশতঃ পত্নীর দাবি অস্বীকৃত হইল না—

ইতি মনুবচনেঽপি ক্রমপরশব্দাভাবান্ ন পত্ন্যা ব্যুদাসঃ। পৃ ৪৫৮

 বরদরাজ বলেন, শঙ্খ-লিখিতোক্ত এবং দেবলবচনে যদিও সোদর ভ্রাতাদেরই প্রথম ধনগ্রহণ বুঝা যায় তবু, নানা শাস্ত্রকারদের বচন-আলোচনে বুঝা যায়, সাধ্বাচারা পত্নীর সকলধন গ্রহণই প্রথম। বহু-বহু বচনের দ্বারা তাহাই প্রতিপন্ন হয়। সেইসব বচনের সঙ্গে সংগত করিয়াই শঙ্খ-লিখিতোক্ত এবং দেবলোক্ত বচনের ব্যাখ্যান করা উচিত—