হইল বানপ্রস্থ। মোট কথা, জীবনের বারো আনা অর্থাৎ চার আশ্রমের তিনটি আশ্রমই তপস্যা হইয়া উঠিল। শুধু দ্বিতীয় আশ্রমটি গৃহস্থাশ্রম রহিল। যাগযজ্ঞের স্থলে প্রবর্তিত হইল অহিংসা, ভক্তি, যোগ, সাধনা, শম, দম, ভিতিক্ষা, বৈরাগ্যাদির সাধন।
কিন্তু ক্রমে চতুরাশ্রমের এই আদর্শও শক্তিহীন হইয়া আসিল। ব্রাহ্মণাদি সকলেই এখন চারি আশ্রমের স্থলে একমাত্র গৃহস্থাশ্রমই পালন করেন। দক্ষিণভারতে নম্বুদ্রী ব্রাহ্মণদের মধ্যে শুধু কতক লোক এখনও ব্রহ্মচর্য পালন করেন। উত্তরভারতে আর্যসমাজ গুরুকুল স্থাপন করিয়া বিরাট দেশের মধ্যে জনকয়েককে মাত্র ব্রহ্মচর্যে প্রতিষ্ঠিত রাখার চেষ্টা করেন। আরও দুই-একটি প্রতিষ্ঠান এখন ব্রহ্মচর্যের দিক্ষা দিতে চাহেন। সে ব্রহ্মচর্যও প্রাচীনকালের তুলনায় কি, তাহা দেখিলেই সকলে বুঝেন। পুরুষগণ এখন চারি আশ্রম ঘুচাইয়া গৃহী হইয়াই সারাজীবন কাটাইতেছেন।
পূর্বকালে বিধবা নারীদের মধ্যেও অনেকেই আবার বিবাহ করিতেন। আর্যদের মধ্যে তপস্যা ও বৈরাগ্য প্রচারের পর, পুরুষদের চতুরাশ্রমের প্রথা চলিল। উচ্চজাতীয় নারীদের মধ্যেও এক বিবাহের পর আর পত্যন্তর গ্রহণপ্রথা রহিল না। বিধবা হইলেই নারীরা ব্রহ্মচারিণী হইতেন ও ব্রহ্মচারিণীর মত মাথা মুণ্ডিত করিয়া থাকিতেন। ইহাতে কতকটা জৈন সাধ্বী এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুণীর ভাব দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়া উত্তরভারতে বিধবার এতটা কৃচ্ছ্রাচার নাই। বাংলাদেশে অনেকটা দক্ষিণভারতের মত বিধবার আচার। নঞ্জুনদায়্যা এবং অনন্তকৄষ্ণ আইয়ার বলেন, পতির মৃত্যুর একাদশ দিনে নারীকে মাথা মুণ্ডন করাইয়া এক বৎসর নির্জনে বাস করিতে হয়। তার পর শ্বেতবসনা তপস্বিনী হইয়া থাকিতে হয়। বিবাহাদি মঙ্গলকর্মে বিধবারা যোগ দিতে পারেন না। খাটে শোওয়া, থালায় খাওয়া, তাম্বুল-গন্ধপুষ্পাদি ব্যবহার ত্যাগ করিয়া বিধবাগণের যতিধর্ম পালন করিতে হয়। বেদে তো বিধবার মুণ্ডনের কথা নাই। প্রাচীন স্মৃতিগুলিতেও নাই। আপস্তম্ব, বসিষ্ঠ, গৌতম, যাজ্ঞবল্ক্য ও মহাভারতেও নাই। কেশমুণ্ডন সমর্থনে স্কন্দপুরাণ ও ব্যাসস্মৃতি মাত্র প্রমাণরূপে ব্যবহৃত হয়।[১]
- ↑ Mysore Tribes and Castes, vol. II. পৃ ৪৮৬-৪৮৭