তাহা আর বলা চলিল না। বোধায়ন-ধর্মসূত্র (২.২. ৪৫-৪৬) বলিলেন, নারী পিতা স্বামী বা পুত্রের অধীনে থাকিবে, স্বাধীনতা পাইবে না। তাহারা শক্তিহীনা, কাজেই দায়াধিকারী নহে ইহাই শ্রুতির মত (২. ২. ৪৭)—
নিরিস্ত্রিয়া হ্যদায়াশ্চ স্ত্রিয়ো মতা ইতি শ্রুতিঃ।
উত্তরাধিকারে আপস্তম্ব (১৪. ২-৪) বলিলেন, পুত্রাভাবে সপিণ্ড, সপিণ্ডাভাবে আচার্য, আচার্যাভাবে ছাত্র, অথবা দুহিতা পাইবেন। স্ত্রী শুধু পাইবেন অঙ্গধৃত অলংকার (২. ৯)। তাহা শুধু কাহারও কাহারও মতে স্ত্রীর প্রাপ্য, সর্বসম্মতিতে নহে। গৌতম বসিষ্ট প্রভৃতিরও এই মত।
মৈত্রায়ণী-সংহিতা (৪. ৬. ৪) বলিলেন, কন্যা জন্মিলে সবাই তুচ্ছ করে, সে ফেল্না; পুত্র তো ফেল্না নহে তাই কন্যা উত্তরাধিকার পায় না, পুত্র পায়। কন্যা পরের ঘরে যায়, তাই সে তুচ্ছ, অকিঞ্চিৎকর— তস্মাৎ স্ত্রিয়ং জাতাং পরাস্যন্তি ন পুমাংসমথ স্ত্রিয় এবাতিরিচ্যন্তে। বেদের প্রথম দিকে সংসারে পিতাই ছিলেন কর্তা। জ্ঞাতি-বৃদ্ধেরাই সমাজকৃত্য নির্ণয় করিতেন। অর্থাৎ পুরুষদের হাতেই সব ব্যবস্থা। তাহার পর এ দেশে ভূসম্পত্তি রক্ষার জন্যও ক্রমে লড়াই প্রভৃতি করিতে হইত। তাই কি সম্পত্তি রক্ষার্থ যুদ্ধে অসমর্থ কন্যাদের আদর ক্রমে কমিল? পুত্রই তো শক্তিশালী, কন্যা নহে। তাহা ছাড়া শূদ্রাদের বিবাহ করায় নারীও সুলভ হইয়া গেল। এই ভাবটা বেদের শেষ ভাগেই দেখা যায়। মোট কথা, ক্রমেই কন্যাদের গৌরব কমিতে কমিতে চলিল। তাহার পর সমাজব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে-সঙ্গে আবার কন্যাদেরও স্থান ক্রমে একটু ভালো হইতে লাগিল। যাস্কের ‘নিরুক্ত’ দেখিলেই তাহা বুঝা যায়। তৈত্তিরীয়-সংহিতায় (৬. ৫. ৮. ২৭) আছে—
সোমো নাতিষ্ঠত স্ত্রীভ্যো গৃহ্যমানস্তং যুক্তং বজ্রং
কৃত্বা অঘ্নন্ তং নিরিন্দ্রিয়ং ভূতম্ অগৃহ্লন।
তস্মাৎ স্ত্রিয়ঃ নিরিন্দ্রিয়া অদায়াদীঃ অপীতি
পাপাৎ পুংসঃ উপস্থিতরম্ বদন্তি।
ভালো বুঝিবার জন্য সংহিতা-বচনটি সন্ধিবিচ্ছেদ করিয়া লিখিত হইল। ইহার অর্থ হইল, নারীদের দ্বারা গৃহ্যমান হইতেছে ইহা সোম সহ্য করিতে পারিল না। তাই ধৃতকে বজ্র করিয়া মারিল। যখন তাহা শক্তিহীন হইল তখন