তাহারা গ্রহণ করিল। তাই নারীগণ ‘নিরিন্দ্রিয়’ অর্থাৎ শক্তিহীনা, তাহারা নীচ পুরুষ হইতেও নীচু হইয়া কথা বলে, এইজন্যই তাহারা ‘অদায়াদী’ অর্থাৎ দায়প্রাপ্তির অযোগ্য।
এই কথাই আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ব্যাখ্যায় হরদত্ত (২.১৩.১) উদ্ধৃত করিয়াছেন। এবং তৎসমর্থনে মনুরও (৯.১৮) শ্লোক দেখাইয়াছেন—
নিরিন্দ্রিয়া অদায়াদীঃ স্ত্রিয়োনিত্যমিতি স্থিতিঃ।
বঙ্গবাসী সংস্করণে মনুর সেই শ্লোকার্দ্ধ—‘নিরিন্দ্রিয়া হ্যমস্ত্রাশ্চ স্ত্রিয়োঽনৃতমিতি স্থিতিঃ’ (৯-১৮)।
‘নিরিন্দ্রিয়’ কথাটি পারিভাষিক। তাহার আসল অর্থটা কি? এখানে নিরিন্দ্রিয় অর্থে ‘যাহার সোমপান অধিকার নাই’ ইহাই বুঝাইবে। কাজেই শ্রুতির নিরিন্দ্রিয় বলিয়া অদায়াদী কথার অর্থ অন্যরূপ হইবে। এই বিচারটি বরদরাজ তাঁহার ব্যবহারনির্ণয়ে (পৃ ৪৫৯) উত্তম রূপে দেখাইয়াছেন। পরে ব্যবহারনির্ণয় আলোচনা প্রসঙ্গে তাহা বলা যাইবে।
ঋগ্বেদের তৃতীয় মণ্ডলের, ৩১ সূক্তের প্রথম ঋক্—
শাসদ্ বহ্নির্দুহিতুর্নণ্ড্যং গাৎ।
ইহার ভাষ্যে সায়ণ বলেন, প্রসঙ্গক্রমে ঋষি কুশিক একজনকে শাস্ত্রার্থ বলিতেছেন, অপুত্র পিতার পুত্রীই পুত্রিকারূপে দায়াধিকারিণী—
অপুত্রস্য পিতুঃ পুত্রী দায়াদা পুত্রিকা সতী।
এই ঋকেরও মোট কথা এই যে, পুত্রহীন পিতার কন্যা থাকিলে সেই কন্যার গর্ভজাত নাতিই পৌত্রের স্থান অধিকার করে।
এই ঋকের মন্ত্রটির আলোচনায় যাস্কের নিরুক্তে (৩, ৪) দেখা যায়, পুত্র কন্যা দুইই প্রজনন যজ্ঞের ফল, দুইই সর্বদেহ ও হৃদয় হইতে উৎপন্ন—
প্রজনন-যজ্ঞস্য রেতসো বাঙ্গাদঙ্গাৎসংভূতস্য হৃদয়াদধিজাতস্য।
কাজেই উভয়েই দায়াদ। তাহাই এই দুইটি ঋক্শ্লোকেও উক্ত। আত্মাই তো পুত্র হইয়া জন্মায়। তবে কোনো কোনো আচার্য বলেন, পুরুষই দায়াদ, স্ত্রীলোক দায়াদ নহে। তাই মেয়ে জন্মাইলে লোক অবজ্ঞা করে, ছেলেকে তুচ্ছ করে না। কন্যাকে দান-বিক্রয়-ত্যাগ করা চলে, পুত্রকে দান-বিক্রয়-ত্যাগ করা চলে না। কিন্তু আর-একদল আচার্য বলেন, ছেলেকেও দান-বিক্রয়-ত্যাগ চলে, শৌনঃশেপে তাহা দেখা গিয়াছে। শুনঃশেপের উপাখ্যান ঐতরেয়-ব্রাহ্মণে (৭. ১৩-১৮) বর্ণিত।